Inqilab Logo

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

দেড় হাজার ছিনতাই, ৫০ জন নারীকে হয়রানি করে রুবেল

মুলহোতাসহ গ্রেফতার চার

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

অভিনব পন্থায় দেড় হাজার ছিনতাই ও ৫০ জন নারীকে হয়রানির অভিযোগে শাকিল আহম্মেদ রুবেলসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। আচমকা রাস্তায় পুলিশ পরিচয়ে গতিরোধ করে ভিকটিমদের নিজের মোটরসাইকেলে তুলে নিতো শাকিল। এরপর নির্জন কোনো স্থানে নিয়ে সবকিছু ছেড়ে নিতো, নারী ভিকটিমদের নিয়ে হয়রানিও করতো সে। তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের সামনে পুলিশের স্টিকার, হাতে ওয়াকিটকি, কোমরে পিস্তল ও চালচলনে পুলিশ মনে হওয়ায় ভিকটিমরাও তার ফাঁদে পড়তো। গত শনিবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে ডিবি উত্তরা বিভাগ।

গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলো-মো. আকাশ শেখ (২২), দেলোয়ার হোসেন (৫৫) ও মো. হাবিবুর রহমান। রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে দিয়াবাড়িতে নিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়েই এসব বেরিয়ে আসে। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন, একটি ওয়ারলেস সেট, একটি পুলিশ স্টিকারযুক্ত মোটরসাইকেল ও ছয়টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ঢাবির ওই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে ছিনতাইয়ের আগে রুবেল গত ১২ আগস্ট উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর থেকে একটি মোটরসাইকেল ছিনতাই করেন। সেই মোটরসাইকেলে পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে ঢাবির ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে দিয়াবাড়ীতে নিয়ে ছিনতাই করেন।

রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিবি প্রধান বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি রুবেলের বাড়ি গাজীপুর, তবে আরও দুইটি ঠিকানা পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। রুবেল ঢাকায় কোনো বাসা ভাড়া নেননি। তিনি রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে রুম ভাড়া নিয়ে অবস্থান করতেন। তারপর মোটরসাইকেল ছিনতাই কিংবা ভাড়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিংবা কলেজের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে এসব ঘটনা ঘটাতেন। তিনি বলেন, রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি এখন পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে দেড় হাজারের বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছেন। এর মধ্যে ছিনতাইয়ের পর ৫০ জন মেয়ের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন। ছিনতাইয়ের পর মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করতেন এজন্য যে, তারা যেন লোকলজ্জার ভয়ে কোনো কথা না বলেন বা অভিযোগ না করেন।

ছিনতাইয়ের জন্য রুবেল নির্জন স্থান বেছে নিতো জানিয়ে তিনি বলেন, মেয়েদের মোটরসাইকেলে উঠিয়ে রাজধানীর ৩০০ ফিট, দিয়াবাড়ী ও পূর্বাচল এলাকায় নিয়ে যেতেন রুবেল। তার নামে ছিনতাইয়ের ছয়টি মামলা রয়েছে। তিনি একাধিকবার জেলেও গিয়েছেন। তাকে এবং তার সহযোগীদের রিমান্ডে এনে এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করব।

ডিবি প্রধান আরও বলেন, আমরা অনুরোধ করবো কেউ পুলিশ পরিচয় দিলে যেন তার মোটরসাইকেল কেউ উঠে না যায়। তাকে যেন চ্যালেঞ্জ করে এবং তার পরিচয় জানার চেষ্টা করে। কোনো পুলিশ মোটরসাইকেল করে কখনও আসামি নিয়ে যায় না। তাহলে রুবেলের মতো মানুষকে আটকানো যাবে।
ঢাবির এক শিক্ষার্থী কীভাবে এতো সহজে রুবেলের খপ্পরে পড়ে যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে তার হাতে ওয়াকিটকি, পিস্তল ও গাড়িতে পুলিশের স্টিকার দেখে হয়তো ওই শিক্ষার্থী তাকে পুলিশ ভেবে নেয়। তবে সে যদি আশপাশের লোকজনকে ডেকে তাকে চ্যালেঞ্জ করতো তাহলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটতো না।

তার চার সহযোগীদের কি কাজ ছিল জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, তারা রুবেলকে বিভিন্ন সময় নানাভাবে সহযোগীতা করতেন। কেউ মোটরসাইকেল ভাড়া করে এনে দিতে আবার কেউ অন্যভাবে সহযোগীতা করতেন।

ভুয়া পুলিশের ঘটনা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে আটকানো যাচ্ছে না কেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এসব ঘটনায় অনেকে মামলা করতে থানায় যায় না। মামলা করলে এসব বিষয়ের শক্ত পদক্ষেপ নেয়া হয়। মামলা না হলে তো আমরা এসব বিষয় জানতে পারি না। রিমান্ডে এনে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করব। তার সঙ্গে আর কে কে জড়িত রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ