Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১ হাজারের অধিক মতামত

প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন দেশের অর্থনীতিতে অনাকাক্সিক্ষত পরিণতি বয়ে আনতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫। প্রথম ২০১৩ সালে সংশোধন করা হয়। আরেকটি সংশোধনী আনার লক্ষ্যে, গত ১৪ জুলাই পর্যন্ত সাধারণ মানুষের মতামত চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে একটি খসড়া প্রস্তাব প্রকাশ করা হয়। আইন সংশোধনের পক্ষে-বিপক্ষে ১ হাজারেরও বেশি মতামত জমা পড়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, প্রস্তাবিত খসড়াটি সমস্যাযুক্ত, যা দেশের অর্থনীতিতে অনাকাক্সিক্ষত পরিণতি বয়ে আনতে পারে।

মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত বিধানগুলোর পক্ষে এবং বিপক্ষে এক হাজারেরও বেশি মতামত জমা দেয়া হয়েছে। তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে কেউ কেউ এই সংশোধনীকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী আশার খবর, দেশে তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের যে প্রবণতা, ২০১০-২০২০ এই বছরগুলোতে ৪৪ শতাংশ থেকে ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
ওয়েবসাইটে দেয়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তি এই বিধান সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এটি অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি এবং এই খাতের সঙ্গে যুক্ত ৮০ লাখেরও বেশি লোকের সামগ্রিক জীবনযাত্রার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পাশাপাশি এই খাতটি মোট অভ্যন্তরীণ রাজস্বের প্রায় ১৩ শতাংশ অবদান রাখে, তাই প্রস্তাবিত বিধিনিষেধগুলো বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের বাস্তবতায় সরকারের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহকে আরও কমিয়ে দিবে। আর এ জন্য জাতীয় পর্যায়ের বেশ কয়েকটি অ্যাসোসিয়েশন এবং ব্যবসায়িক চেম্বার প্রস্তাবিত সংশোধনীর বেশ কিছু ধারা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব), বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, এমসিসিআই, ডিসিসিআই, ফরেইন ইনভেস্টরর্স চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি, বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেন্ডসটা), বাংলাদেশ ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি, আইনজীবী ও শিক্ষাবিদরা। তারা আশঙ্কা করছেন, নতুন এই সংশোধনী প্রণীত হলে এই খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রান্তিক আয়ের জনগোষ্ঠীর জীবনমানের অবনতি ছাড়াও বিদ্যমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের মাঝে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব হ্রাস দ্বারা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
নাসিব সভাপতি সিআইপি মির্জা নুরুল গনি শোভন বলেন, ভাসমান ফেরিওয়ালাদের উপর নিষেধাজ্ঞা, বাধ্যতামূলক খুচরা লাইসেন্সসহ তামাকজাত দ্রব্য বিক্রিতে প্রস্তাবিত এই অযৌক্তিক বিধিনিষেধ ৮০ লাখেরও বেশি মানুষের জীবিকাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে। নতুন এই প্রস্তাবনায় লাইসেন্স না থাকা মানে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। অথচ এই ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং প্রান্তিক খুচরা বিক্রেতারা প্রতিদিন ৫০০ টাকাও লাভ করে না।
তিনি বলেন, তামাকের ব্যবহার কমানোর বিপক্ষে আমি নই, তবে করোনা পরবর্তী পরিস্থিতির বাস্তবতায় আমাদের অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির প্রসার সম্পর্কেও ভাবতে হবে। আমরা যদি তাদের জন্য আয়ের বিকল্প উৎসের ব্যবস্থা না করি, তাহলে ছোট ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বেকারত্বের হার বাড়বে।
অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করেন ধূমপানের নির্ধারিত স্থান সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা এবং একক-শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধের মতো বিধানগুলিতে ধূমপান কমাতে এ পর্যন্ত যে অগ্রগতি হয়েছে, তার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যদি ধূমপানের জন্য কোন নির্দিষ্ট এলাকা না থাকে, তাহলে সাধারণ জনগণ যত্রতত্রভাবে নিজ সুবিধানুযায়ী ধূমপান করবে এবং পরোক্ষ ধূমপানের মাধ্যমে তা অন্যদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এমনকি কঠোর তামাক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে এমন দেশগুলোতেও ধূমপানের নির্ধারিত স্থান রয়েছে। একইসঙ্গে ধূমপায়ীদের কাছে পুরো প্যাকেট থাকলে তারা অপেক্ষাকৃত বেশি ধূমপান করেন।
অধিকন্তু, যুক্তরাজ্য, নিউজিলান্ড, কানাডা ও অন্যান্য উন্নত দেশ যেখানে ধূমপান হ্রাসে ভ্যাপিং পণ্য, ই-সিগারেট, নিকোটিন পাউচ ইত্যাদি ব্যবহারে উৎসাহী করছে, সেখানে বাংলাদেশে ধূমপানের বিকল্প এসব পণ্যের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে।
বন্ডসটা’র সভাপতি মাসুদ উজ-জামানের মতে, ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি (পূর্বে পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড নামে পরিচিত) এর গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপানের চেয়ে ভ্যাপিং ৯৫ শতাংশ কম ক্ষতিকারক। তিনি বলেন, ভ্যাপিং বাংলাদেশে ধূমপান কমাতে সাহায্য করবে। তাই এটিকে একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার অধীনে নিয়ন্ত্রন করা হলে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ‘তামাকমুক্ত’ করার যে লক্ষ্য, তা বাস্তবায়নে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে ইউকে অ্যাকশন অন স্মোকিং অ্যান্ড হেলথের তথ্য থেকে জানা যায়, যুক্তরাজ্যে ভেপারের সংখ্যা ২০১২-২০১৯ এই বছরগুলোতে ৭ লাখ থেকে ৩৬ লাখে উন্নীত হয়েছে এবং ৫৪ শতাংশ সফলভাবে ধূমপান ত্যাগ করেছে। ই-সিগারেট ব্যবহারকারীরা গতানুগতিক ধোঁয়ার পরিবর্তে বাস্পে নিকোটিন গ্রহণ করছে যা এটিকে আরও নিরাপদ করে তোলে।
বন্ডসটা ছাড়াও, ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থলোস ফাউন্ডেশন এবং ইউরোপের ১৭ জন সুপরিচিত আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটি দল ধূমপানের উপরোক্ত নিরাপদ বিকল্পগুলি নিষিদ্ধ করার বিধানের বিরুদ্ধে তাদের মতামত জমা দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ তবে আমাদের অর্থনীতির একটি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ খাতকে বিপন্ন করতে পারে এমন কোনও পদক্ষেপ নেয়ার আগে অবশ্যই বর্তমান সামষ্টিক-অর্থনৈতিক সমস্যা এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ