পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কঠোর পরিশ্রম, উৎপাদন বাড়ানো সঞ্চয় করার গুরুত্বারোপ
বিশ্বে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি দেখতে পাচ্ছি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হওয়ায় দেশের জনগণকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। বৈশ্বিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো, সঞ্চয় করা এবং সব পর্যায়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে মনোযোগি হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহŸান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখন থেকে আমাদের সকলকেই কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে, সঞ্চয় করতে হবে এবং কোনমতেই কোন কিছুতেই আমরা অতিরিক্ত ব্যয় না করি। আর উৎপাদন বাড়তে হবে। নিজেদের খাদ্য উৎপাদনে সবসময় যেন স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে পারি সেই ব্যবস্থাও আমাদের নিতে হবে। যাতে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময় বাংলাদেশের জনগণকে কোনো দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে না হয়।
গতকাল ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইডিইবি) ২৪তম জাতীয় সম্মেলন ও ৪৩তম কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে এ সব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও ইউরোপীয় দেশগুলোর পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশগুলো বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানি সরবরাহে সমস্যায় পড়ছে, সেখানে তারা রেশনিং করছে। তারা পানি গরম করার ব্যবস্থায় ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা রেখেছে। তাদের হিটিং সিষ্টেম বন্ধ রাখতে হচ্ছে। কাজেই বিভিন্ন পণ্যের দাম যেহেতু অতিরিক্ত বেড়ে গেছে তাই আমাদেরও কৃচ্ছতা সাধন করতে হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করে দেশের সব ঘর আলোকিত করেছে, কিন্তু বৈশ্বিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সেই খরচ কমাতেও কিছু ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।
উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়ে তিনি প্রকৌশলীদের উদ্দেশে বলেন, এই পরিস্থিতিতে দ্রæত যে প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করতে হবে সরকার সে গুলো দ্রæত বাস্তবায়ন করবে। আমাদের পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যেতে হবে এবং যদি আমরা তা করি, তাহলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক পেশাগত ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বরেণ্য ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাঝে আইডিইবি স্বর্ণপদক প্রদান করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ হালিম বীর প্রতীক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলুর করিম খান এবং বাপেক্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী আইডিইবি স্বর্ণপদক লাভ করেন।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরিফ আহমেদ বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। আইডিইবি সভাপতি প্রকৌশলী এ কে এম এ হামিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শামসুর রহমান স্বাগত বক্তৃতা করেন।
বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা চমৎকার ভূমিকা রাখছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারপরও আমি বলবো যে সমস্ত প্রকল্প আমাদের একেবারে আশু শেষ করা প্রয়োজন আমরা সেগুলো দ্রæত শেষ করবো। যেহেতু এখনই প্রয়োজন নাই সেগুলো আমাদের ধীর গতিতে হবে। আমরা অহেতুক টাকা ব্যয় করবো না। কিন্তু যেগুলো আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো আমরা করবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে সারা বিশ্বে একটা দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি আমরা দেখতে পাচ্ছি, এর প্রভাব থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। তাই এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। যার পক্ষে যা সম্ভব, তাই যেন উৎপাদন করে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)র লক্ষ্য অর্জনে এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যলেঞ্জ মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় সামগ্রিক দক্ষতা উন্নয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে জানিয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকার প্রধান বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে, এখন থেকেই তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে দক্ষ জনশক্তিতে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে দেশের জনশক্তিকে মানিয়ে নিতে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে প্রযুক্তি,কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত¡া, রোবটিক্সের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। এই লক্ষ্যেই কিন্তু আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছিলাম এবং সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ আজকে করেছি এবং সেই সাথে সাথে আমরা ট্রেনিং এবং শিক্ষার ব্যবস্থাও নিয়েছি।
তিনি বলেন, সকল মাধ্যমিক স্কুল ও দাখিল মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত প্রত্যেক শ্রেনীতে ১০০ নম্বরের কারিগরি বিষয় সকল ছাত্র-ছাত্রীর জন্য বাধ্যতামুলক যেন হয় আমরা সে পদক্ষেপও নিয়েছি। ৯ম ও ১০ম শ্রেণীতে প্রত্যেক মাধ্যমিক স্কুল ও দাখিল মাদ্রাসায় এসএসসি ভোকেশনাল কোর্সও চালু করা হবে।
তিনি বলেন, দেশ-বিদেশের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে, ৬৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সাথে আরো ২৪টি টিটিসি যোগ করে কর্মকান্ড শুরু করা হয়েছে এবং আরো ৮৮টি টিটিসি স্থাপনের পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে সরকার। এসব টিটিসিতে মধ্য প্রাচ্যসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয় বিশে^ আর কোন কোন দেশে শ্রমিক পাঠানো যায় যে জন্য সরকার শ্রম বাজার খুঁজে দেখছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সরকার তরুণ সমাজের প্রযুক্তি জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়নে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কোর্সকে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে ৪ বছরে উন্নীত করেছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আপনাদের বক্তব্যে জানতে পারলাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই কোর্সকে ৩ বছরে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ৪ বছরতো আমিই করে দিয়েছিলাম। কাজেই এটাকে আরো বিশেষভাবে দেখা দরকার। আর এই কোর্স এভাবেই অব্যাহত থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।
জাতির পিতা ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেয়া ভাষণে কারিগরি বিজ্ঞান শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন বলেও অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। কাজেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়ও আমুল পরিবর্তন আনতে হবে এবং ইতোমধ্যে আমরা এনেছি।
এক সময় বিজ্ঞান শিক্ষার দিকে কারো কোন আকর্ষণ না থাকলেও এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মাত্র ৭ শতাংশ লোক কারিগরি শিক্ষা নিতো। আজকে তা কিন্তু অনেক উন্নত হয়েছে। আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের মোট শিক্ষার্থীর ৩০ শতাংশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে উন্নীত করে শিক্ষার মূল স্রোতধারায় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে নিয়ে আসারও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার আদর্শকে বুকে ধারণ করেই আমরা পথ চলেছি বলেই আজকে এই সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি (নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের) এবং আজকে আমরা অন্তত এইটুকু দেখাতে পারি না আমাদের শক্তি আছে যে কারো কাছে হাত পেতে নয়, আমাদেও মর্যাদা নিয়েই আমরা বিশে^ মাথা উঁচু করে চলবো। সেভাবেই ভবিষ্যত প্রজন্মকে গড়ে তোলাতেও তিনি গুরুত্বারোপ করেন যেন মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে তারা আগামীর পথ চলতে পারে।
এ সময় নোবেল পাওয়া একজন ব্যক্তি পদ্মা সেতু তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিলেন বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একটি ব্যাংকের এমডি পদে থাকার জন্য পদ্মা সেতু নিয়ে একজন নোবেল পাওয়া ব্যক্তি ষড়যন্ত্র করেছেন, বিভিন্ন পক্ষকে দিয়ে হুমকি দিয়েছেন। ষড়যন্ত্রের একপর্যায়ে সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সহায়তা বন্ধ হয়ে যায়। তখনই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বানানোর কথা বলেছিলাম। সেতুর নির্মাণকাজে জড়িত সব ইঞ্জিনিয়ার ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, শ্রমিকসহ সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।