পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রশাসনিক ভবনের আতঙ্ক খ্যাত ‘লাঞ্চের পরে আসুন’ নীতির বিরুদ্ধে এবার সোচ্চার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এতদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখনির মাধ্যমে প্রতিবাদ করে আসলেও এবার তা রূপ নিয়েছে দাবি আদায়ের প্রত্যক্ষ আন্দোলনে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে টানা ২ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর ৮ দফা দাবিতে স্মারকলিপি ও সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন এই শিক্ষার্থী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাওয়া যত কঠিন তারচেয়ে বেশি কঠিন এখানে ভর্তি হওয়া। প্রশাসনিক ভবন থেকে বিভাগীয় অফিস, বিভাগীয় অফিস থেকে জনতা ব্যাংক, জনতা ব্যাংক থেকে আবার প্রশাসনিক ভবন অতঃপর হল অফিস; এভাবেই দীর্ঘ দৌঁড়ঝাপের মধ্য দিয়ে শেষ করতে হয় ঢাবির ভর্তি প্রক্রিয়া। ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম শেষ করতেই লেগে যায় ক্ষেত্র বিশেষে ৭২ ঘণ্টা কিংবা তারও বেশি সময়। শিক্ষার্থীদের এসব ভোগান্তির পেছনে সকলেই প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আমলাতান্ত্রিক অসহযোগিতামূলক মনোভাবকে দায়ী করেন।
অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের মাথে গোলাম-মুনিব সম্পর্কের ন্যায় আচরণ করে থাকেন। ঠিকমতো শিক্ষার্থীদের কথা শুনেন না, এই অফিস থেকে ওই অফিস; ওই অফিস থেকে ফের আগের অফিসে- এভাবেই এক রুম থেকে অন্য রুমে দৌঁড়াতে হয় শিক্ষার্থীদের। বেলা ১২টা পেরুলেই কেউ সেবা নিতে গেলে বলা হয় ‘লাঞ্চের পরে আসুন।’ আবার লাঞ্চের পরে গেলেও অনেক ক্ষেত্রে পরেরদিন আসতে বলা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার একশো বছর পার হলেও এখনো সনাতন পদ্ধতিতে ম্যানুয়ালি করা হচ্ছে প্রশাসনিক অনেক কার্যক্রম। ফলে শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল যুগে এসেও বঞ্চিত হচ্ছে কাক্সিক্ষত মানের ডিজিটাল সেবা থেকে। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ। তাই তো এবার ৮ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ।
হাসনাত বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গতবছরই তার গৌরবময় শতবর্ষ পূর্ণ করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় ১০১ তম বছরে এসেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক জটিলতাজনিত হয়রানি কমেনি। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, হল অফিস ও বিভাগীয় অফিসের মধ্যে কাজের সমন্বয়হীনতার প্রবল অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও রেজিস্ট্রার ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং নিয়মানুবর্তিতায়ও ঘাটতি রয়েছে বলে দাবি করেন হাসনাত। তিনি বলেন, তাদের কাজে দীর্ঘসূত্রিতা ও আছে। কাজের ব্যাপারে তাদের অলসতা এবং দায়মুক্তির খবর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘লাঞ্চের পর আসুন সুলভ’ আচরণ হিসেবে সর্বজনবিদিত। এছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস টাইমে নির্বাচনী প্রচারণাসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। অনেকে অফিস টাইমে নিজস্ব ব্যবসায়ও সময় দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী দ্বারা শিক্ষার্থী হয়রানির ঘটনা বহুদিনের। রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের হয়রানি বন্ধে আন্দোলনরত ঢাবি শিক্ষার্থী হাসনাত আবদুল্লাহর ৮ দফা দাবিগুলো আমার কাছে যৌক্তিক ও নৈতিক মনে হয়েছে এবং ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আকাক্সিক্ষত দাবি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়কে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণে দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা।
এদিকে হাসনাতের এসব দাবির পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণও সহমত পোষণ করেছেন। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. শামসুল আলম বলেন, হয়রানি বন্ধ হোক এটা তো আমাদের সবার দাবি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যই তো কর্মকর্তারা রয়েছেন। তাহলে তাদের কাজেই যদি না আসে তাহলে কীভাবে হবে। এছাড়াও দেশ এখন ডিজিটাল হয়েছে; সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এসব কাজও ডিজিটাইজ হওয়া এখন সময়ের দাবি।
৮ দফা দাবি হলো- ১. শিক্ষার্থীদের হয়রানি নিরসনের জন্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অভিযোগ সেল গঠন করতে হবে। ২. প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম অনতিবিলম্বে ডিজিটাইজড করতে হবে। ৩. নিরাপত্তা ও হারিয়ে যাওয়া কাগজপত্র তদন্তের স্বার্থে অফিস সমূহের অভ্যন্তরে প্রতিটি রুমে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। ৪. প্রশাসনিক ভবনে অফিস সমূহের প্রবেশদ্বারে ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করতে হবে। ৫. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ৬. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আধুনিক সাচিবিক বিদ্যা, পেশাদারিত্ব, মানুষিক ও আচরণগত প্রশিক্ষণ আইন করে বাধ্যতমূলক করতে হবে। ৭. অফিস চলাকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক কোনো কাজেই লিপ্ত থাকতে পারবে না। ৮. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনকালীন প্রচারণা পরিবেশবান্ধব করতে হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের এ ধরণের সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করি। অনেক পরিবর্তন এসেছে, এ বিষয় তাদের জানা ছিল না। তবুও শিক্ষার্থীদের এ দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের আমলে নেয়া দরকার। আমরা ক্রমান্বয়ে কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার চেষ্টা করছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।