Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা নাকচ

সংবাদ সম্মেলনে তিস্তা চুক্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশাবাদ

| প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : দেশে মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শনিবার গণভবনে হাঙ্গেরি সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল বিভিন্ন টক শোতে অনেকেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখতে পান। আপনি পান কি না? জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আর মধ্য নেই, মধ্য পার হয়ে গেছে। আমরা তিন বছর পার করছি। মধ্যবর্তী যদি বলেও থাকেন, সেটা পরবর্তীর বিষয়ে বলেছেন। তিনি আরও বলেন, স্বপ্ন দেখা ভালো।
আসন্ন ভারত সফর নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীর পানি বিষয়ে কথা হতে পারে।  প্রধানমন্ত্রী কোনও শর্ত নিয়ে ভারত যাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন নদী তিস্তার ন্যায্য পানি বণ্টনের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।
শিগগিরই আপনি (প্রধানমন্ত্রী) ভারত সফরে যাচ্ছেন। সেই সফরে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে কোনও আলোচনা হবে কিনা? এমন প্রশ্নে  প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চলছে, আমি আশাবাদী। তবে বিষয়টি নির্ভর করবে ভারত সরকার বিষয়টা কিভাবে নেবে, তার ওপর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু তিস্তার পানির বিষয় নয়, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানি বণ্টন নিয়েই আলোচনা চলছে। আমি এ ব্যাপারে আশাবাদী। এর মধ্যে এসব নদীর ড্রেজিং চলছে।
গণভবনে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাম্প্রতিক হাঙ্গেরি সফরের নানা দিক তুলে ধরেন। জবাব দেন গণমাধ্যমকর্মীদের নানা প্রশ্নের। প্রাসঙ্গিকভাবেই হাঙ্গেরি সফরের সময় তাকে বহনকারী বিমানের যান্ত্রিক গোলযোগের বিষয়টিও উঠে আসে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল, বিমানে যে ঘটনা ঘটেছে, সেটি নিছকই দুর্ঘটনা নাকি অন্য কোনো কিছু?
কবিতায় উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর জবাব, ‘জীবন-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য, বুঝেছে দুর্বৃত্ত।’ তিনি বলেন, এটা একটা যান্ত্রিক দুর্যোগ ছিল। দুর্ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, ‘বিমানটি জরুরি অবতরণ যান্ত্রিক কারণে হতে পারে, মনুষ্য  সৃষ্টও হতে পারে । বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যাই হোক, কোনও ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। সহি-সালামতে ফিরে এসেছি। সবার দোয়া চাই। যেদেশে বঙ্গবন্ধুসহ আমার পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মন্ত্রী বানানো হয়েছে, সেদেশে তাহলে কার জীবনটা নিরাপদ?
 ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে একটি দলের নেতাদের বক্তব্যগুলো শুনলে অনেক কিছুই বোঝা যায়। দুর্ঘটনা দুর্ঘটনা- এত উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তদন্ত করা হচ্ছে, দেখা যাবে। সবচেয়ে বড় কথা বেঁচে আছি, আপনাদের সামনে আছি।
প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর জন্য নতুন বিমান কেনার বিষয়টিও নাকচ করে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের জন্য নতুন বিমান কেনার মতো বিলাসিতা করার সময় আসেনি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, গরিবের ঘোড়ারোগ বলা হয় না, ঘোড়া পালতেও অনেক খরচ, সেটা আমরা চাই না। সাধারণ মানুষ যেটাতে চড়ে, আমরাও সেটাতেই চড়ব। নির্দিষ্ট কারও জন্য নয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই দেশে এসেছি, মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই। দেশের মানুষ যে বিমানে যাত্রী হয়ে যাচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা না থাকলে আলাদা বিমান করে কী লাভ? আমার কাছে তো দেশের মানুষই তো সব। সেখানে যদি আমার নিরাপত্তা না থাকে তাহলে লাভ কী। যাত্রীদের জন্যই বিমানকে আধুনিকায়নের গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিমানের উন্নয়নে তার সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরেন।
নির্বাচন কমিশন গঠন  নিয়ে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) নতুন করে কী প্রস্তাব দিয়েছেন, আমি জানি না আপনারা মাথা বা লেজের কোনো হদিস পেয়েছেন কি না। আপনারা সাংবাদিকরা সেখানে প্রশ্ন করে ব্যাখ্যা চাওয়ার সুযোগও পাননি। এটাই বাস্তবতা। কাজেই তিনি কী করলেন, কী করলেন না-এটা তিনিই জানেন।
তিনি বলেন, এখন এই নির্বাচন কমিশন আমরা কিন্তু সরকার থেকে করিনি। এটা কিন্তু সার্চ কমিটি করেই করা হয়েছে। তখন তাদের যা যা দাবি ছিল সেটা মেনেই ২০০৮ সালে সেভাবেই করা হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়াই অনুসরণ করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এর আগে পাঁচটি সিটি নির্বাচনে জিতেছিল বিএনপি, তখন নির্বাচন কমিশন নিয়ে কথা বলেনি কেন? এখন কেন কথা বলছে? নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে খালেদা জিয়া প্রস্তাব দিয়েছেন। তারা প্রেসিডেন্টকে বলুক। প্রেসিডেন্ট পদক্ষেপ নেবেন। বিএনপি নির্বাচন নিয়ে কী খেলা খেলেছে, তা স্মরণ করা উচিত। একটা দলের প্রধান হিসেবে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন থেকে দূরে ছিলেন খালেদা জিয়া।
 প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ একটু হিসাব করে দেখেন, কতগুলো মানুষ তিনি পুড়িয়ে মেরেছেন। তার তো আগে প্রথমে এই কথাই বলা উচিত ছিল। তার ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল এত মানুষকে, জীবন্ত মানুষ, সাধারণ মানুষকে হত্যার জন্য।
শেখ হাসিনা বলেন, বাস, সিএনজি, ট্রাক, ট্রাকের ড্রাইভার, বাসের ড্রাইভার, রেল, লঞ্চ, কোথায় না আঘাত করেছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ তো ধ্বংস করেছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুড়িয়েছে, ইঞ্জিনিয়ারকে আগুনে ফেলে দিয়েছে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার ২০ জন সদস্যকে হত্যা করেছে। আগে সে জবাবটা জাতির কাছে দিক, তারপর তার প্রস্তাব নিয়ে কথা বলবো।
এই পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালে বিএনপি প্রধানের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়ার কথা বলেন। তখন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার গুলশান অফিস থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হন। কারণ তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ভেতর থেকে গেইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।এই বিষয়টির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের অভদ্র যারা, তারা কী প্রস্তাব দিলো, না দিলো ওটা নিয়ে আমার মতামত চান কেন? এ ধরনের ছোটলোকি যারা করে তাদের মতামত নিয়ে কোনো মতামত দেয়ার আমার কোনো অভিপ্রায় নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণই করেনি। আজ একটায় অংশগ্রহণ করবে, জিতলে সব ভালো, হারলে খারাপ, আরেকটায় অংশগ্রহণ করবে না, আবার একটায় করবে, আরেকটায় করবে না। এখন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে, সেটাও তো স্থানীয় সরকার ইলেকশন। আবার জেলা পরিষদে অংশগ্রহণ করবে না। সেখানে আবার গোসসা করে বসে থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে নেতৃত্বের কোনো সিদ্ধান্ত দেয়ার মতো ক্ষমতা নাই, জাতি তার কাছ থেকে কী আশা করে। কেবল সাজুগুজু করে বসে থাকলে চলে না।
স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত যারা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে-সেই সব দলের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তিনি একেবারে সেই ’৭২ এর পর থেকে যত পার্টি, তার মানে ফ্রিডম পার্টি থেকে শুরু করে জামায়াতকে নিয়ে কথা বলতে চান। তার মনের ভাব তো বোঝা গেলো তিনি কী চাচ্ছেন। কর্নেল রশিদ, হুদা এদেরকে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট করে সংসদে বসিয়েছিলেন। আর স্বাধীনতাবিরোধী আলবদর বাহিনীর প্রধানদেরকে মন্ত্রী বানিয়ে লাখো শহীদের পতাকা তুলে দিয়েছিল। তার প্রস্তাব নিয়ে এতো তোলপাড় করার কী আছে আমি বুঝি না?’।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব নেতাদের আরও সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এরা তো মানুষ। নারী-শিশুরাও তো কষ্ট পাচ্ছে। এটা হচ্ছে সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয়।
শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমারের ঘটনা যদিও তাদের অভ্যন্তরীণ ঘটনা, এরপরও এসব ঘটনা ঘটার পর আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যথযাথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কথা বলা হয়েছে।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি যথেষ্ট সজাগ আছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এতো অমানবিক ঘটনা ঘটে যায় যে মানুষ যখন একেবারে অসহায় হয়ে পড়ে, তাদের আশ্রয় না দিয়ে উপায় থাকে না। এটাই হলো বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এজন্য দায়ী- মাত্র কয়েকটি লোক প্রথমে তারা মিয়ানমারের নয়জন বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপিকে হত্যা করলো। তাদের শ’খানেক আর্মি সেখানে গেলে, তাদের ওপর হামলা করল। আর এখান থেকেই ঘটনার সূত্রপাত।
তিনি বলেন, দোষ দিতে হলে যারা বর্ডার গার্ডকে হত্যা করল, তাদের বিষয়ে আরও চিন্তাভাবনা করা উচিত। তারা কোথায় আছে, কী অবস্থায় আছে তাদের ধরে দেয়া উচিত। কারণ এদের কারণে আজ হাজার হাজার নারী-পুরুষ সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা (বর্ডার গার্ডের ওপর হামলাকারী) এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে, মাত্র একটা ঘটনা ঘটালো, নয়জন মানুষকে হত্যা করলো। আর তারপর এতো মানুষের জীবন নিয়ে খেলা হচ্ছে। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
তিনি বলেন, আর তারা (হামলাকারীরা) যদি আমাদের এদিকেও এসে থাকে, আমি ইতিমধ্যে আমাদের গোয়েন্দাদের বলেছি- তাদের খুঁজে বের করা হোক। কেউ যদি এখানে শেল্টার (আশ্রয়) নিতে আসে, আমরা তাদেরকে শেল্টার (আশ্রয়) দেব না, তাদেরকে মিয়ানমারের হাতে তুলে দেব।



 

Show all comments
  • মিজান ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ২:৫৪ এএম says : 0
    সুতরাং এই বিষয় নিয়ে কথা বলে কোন সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Tipu Sultan ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:২৪ পিএম says : 0
    রাইট
    Total Reply(0) Reply
  • ফারুক ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১:১২ পিএম says : 0
    যারা সম্ভাবনা দেখেন, সেটা কিভাবে দেখন সেটাই আমার বুঝে আসে না।
    Total Reply(0) Reply
  • শাহজাহান ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ২:১১ পিএম says : 0
    সব ...........
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ