পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : হায়রে দেশপ্রেম! দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে রাজনীতি করেন আমাদের নেতানেত্রীরা। টিভির টকশোতে দেশপ্রেমের বিগলিত হয়ে মুখে খই ফোটান সুশীল-বুদ্ধিজীবী-পেশাজীবীরা। অথচ বাংলাদেশের অস্তিত্বে আঘাত করেও নির্বিঘেœ ঢাকা সফর করে গেলেন ভারতের মন্ত্রী মনোহর পারিকার। সাবাস পারিকার! সাবাস অমিত শাহা!! চানক্য নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিক-পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবী-সুশীল সকলকে এতোদিনে দিল্লীপ্রেমী বানানো গেছে। ৪৪ বছর পর দেশের মানুষকে মানতে হচ্ছে ‘ভারত আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে’। বিদেশেীদের কেউ ১০ বছর আগেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে কটূক্তি করে ঢাকা এলে ঘেরাও হতেন। তার বিরুদ্ধে শ্লোগান উঠতো, ঐদ্ধত্যপূর্ণ বক্তবের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি উঠতো। এদেশের রাজনীতি যেন আর সেখানে নেই। পাল্টে গেছে রাজনীতি চিত্র। ‘ক্ষমতার মসনদ’ ইস্যুতে সবার রাজনীতি এখন দিল্লী প্রেমে মশগুল। অতএব কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ‘সাহেব কহেন, চমৎকার! সে চমৎকার! মোসাহেব বলে, চমৎকার সে হতেই হবে যে! হুজুরের মতে অমত কার?’
বিজয়ের মাস হলো ডিসেম্বর। ১৬ ডিসেম্বর ‘বিজয় দিবস’ উপলক্ষে ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ ‘স্বাধীনতা দিবস’ উপলক্ষে মার্চ ও ২১ ফেব্রুয়ারী ‘আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে ফেব্রুয়ারী মাস এদেশের মানুষের কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এ মাসগুলো এলে দেশের মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম শানিত হয়। বছরের অন্য ৯ মাসের মতোই সূর্যোদ্বয়-সূর্যাস্ত হলেও এই ৩টি মাস আমাদের জন্য গৌরব-অহংকার-আত্মমর্যাদার। প্রিন্ট মিডিয়া হাতে নিলেই; টিভির পর্দায় তাকালেই মাসগুলো তাৎপর্য চোখে পড়ে। রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনগুলো এ মাস ৩টিতে বিশেষ বিশেষ কর্মসূচি পালন করে।
বিজয়ের মাস চলছে। পহেলা ডিসেম্বর ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার ঢাকায় ছিলেন। ভারতের হিন্দুত্ববাদী আরএসএসের এই নেতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে ঐদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। কাশ্মির আন্দোলনের সময় ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বলেন, ‘লঙ্কা বিজয় করে রাম যেমন তা বিভীষণকে দিয়ে দিয়েছিলেন; বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও ভারত তাই করেছে’। আসলে কি তাই? এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ভারত এমনিতেই আমাদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে? ’৭১ এ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের ৩০ লাখ দেশপ্রেমী শহীদ হননি? ২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারাননি? ‘ছেলে ভুলানো মোয়ার মতো’ ভারত স্বাধীনতা এনে দিয়েছে? বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে বিদেশী এমন ঐদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন; তিনি ঢাকা ঘুরে গেলেন অথচ কেউ তার বক্তব্যের প্রতিবাদ করলো না? দেশপ্রেমী রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী এমনকি যারা নিত্যদিন ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ ফেরি করে বেড়ান তাদেরও কেউ প্রতিবাদ করলো না? এ মানসিকতা কি দেশপ্রেম না ভারত প্রেম?
শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা নয়; এমনকি ভারতবিরোধী রাজনীতিও নয়। তিস্তার পানিসহ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেকগুলো অমীমাংসিত ইস্যু নিয়ে কথা বলা প্রত্যেক দেশপ্রেমিকের কর্তব্য। দিল্লী সবকিছু নেবে আর ঢাকাকে কিছুই দেবে না এর সমালোচনা করা বা প্রতিবাদ করা ভারতবিরোধিতা নয়। দিল্লীর স্বার্থ ক্ষুণœ হয় এবং ঢাকা লাভবান হয় এমন ইস্যু নিয়ে কথা বললে ও লেখালেখি করলে সেটাকে ভারত বিরোধিতা হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত কেউ কেউ। যারা দিল্লীর লাড্ডু খান তাদের এ মানসিকতা থাকবে স্বাভাবিক। কিন্তু যারা দেশ ও দেশের জনগণের জন্য রাজনীতি করেন তাদের তো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কৌতুক সহ্য করার কথা নয়। বাস্তবে দেশের মানুষ দেখলো কেউ ভারতের মন্ত্রী পারিকার ঢাকায় এলেও তার ওই মন্তব্যের প্রতিবাদ করলেন না। দিল্লী অখুশি হয় সে ভয়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নীরব; সরকারের আজ্ঞাবহ বুদ্ধিজীবীরা ‘খামোশ’ এটা স্বাভাবিক। ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগী এরশাদের জাতীয় পার্টির ভূমিকা প্রত্যাশা এখানে অবান্তর। কিন্তু জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে পরিচিত বিএনপি? বাংলাদেশ নিয়ে ঐদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেয়া ভারতের মন্ত্রী ঢাকা ঘুরে গেলেন অথচ বিএনপি এ নিয়ে ‘রা’ পর্যন্ত শোনা গেল না? এমনকি বিএনপি দলীয় ব্যানারে না হোক ভারতের মন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় অঙ্গসংগঠন মুক্তিযোদ্ধা দলের ব্যানারেও পারিকারের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি করেনি; প্রতিবাদ জানায়নি। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে অন্তত বিএনপির কাছে দেশের সাধারণ মানুষ এমনটা প্রত্যাশা করে। কিন্তু দলটির ছিল ঘুমিয়ে। জাতীয়তাবাদী বিএনপিও কি দিল্লীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে? শাহরিয়ার কবিরদের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, ইমরান এইচ সরকারের ‘শাহবাগ মঞ্চ’ কেউ পারিকারের ঐদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদ করেনি। প্রতিবাদ করেনি বিএনপি সমর্থিত শত নাগরিক কমিটি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত সহস্র নাগরিক কমিটির কেউ। ইসলামী ধারা রাজনৈতিক দল ও বামদলগুলোর দু’একজন এ নিয়ে আগে প্রতিবাদ করলেও পারিকারের ঢাকা সফরের সময় ছিল নীরব। তাহলে কি আমাদের নেতানেত্রী, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, পেশাজীবী, ছাত্র-যুব সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেশপ্রেমে ভাটার টান ধরেছে? হাজার মিলিয়ন ডলারের এ প্রশ্নের জবাব কে দেবে? নাকি জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর দেশপ্রেমের রাজনীতি এখন ঢাকাই সিনেমার অর্থহীন চটুল গানের মতো ‘প্রেম করেছো তুমি/ মন দিয়েছি আমি....’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।