পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পানির উপর দ্বিতল ঈদগাহ
জয়নাল আবেদীন জয়, উল্লাপাড়া থেকে : দু’চোখ যতদূর যায়, শুধু পানি আর পানি। পানির উপর ভাসছে গ্রামগুলো। প্রবল বর্ষার পানির ডেউ সজোরে আছড়ে ভেঙে ফেলতে চাইছে মানুষের ঘরবাড়িসহ সবকিছু। পানিমগ্ন এই জনপদে মানুষের চলাচলের জন্য নৌকাই একমাত্র ভরসা। বর্ষায় চারদিকে তলিয়ে যাওয়ায় এখানকার মানুষের দুঃখের কোনো শেষ নেই। এমনকি এখানকার কবরস্থানগুলো তলিয়ে যাওয়ায় মৃত মানুষকে পর্যন্ত দাফন করা দায় হয়ে দাঁড়ায়। তাই এ জনপদের মানুষকে এতদিন পবিত্র ঈদের নামাজ পড়তে হতো কবরস্থানের পাশে সারি সারি নৌকা বেঁধে তার উপর। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলে আসছিল চলনবিল অঞ্চলের সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নের নরসিংহপাড়া, শুকলাই ও শুকলহাট গ্রামের মানুষের। গ্রামগুলোর মানুষের এ সমস্যা সমাধানে নির্মিত হচ্ছে দ্বিতল পাকা ঈদগাহ। জনহিতকর এই কাজের পরিকল্পনাকারী ও উদ্যোক্তা নরসিংহপাড়ার গ্রামের কৃতী সন্তান সাহিত্যিক সাংবাদিক মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম। তিনি এ গ্রামের বিশিষ্ট আইনজীবী, সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মরহুম আলহাজ্ব ব্যারিস্টার রওশন আলি সাহেবের একমাত্র পুত্র। পিলার ঢালাই কাজ শুরুর মাধ্যমে তিনি এই ঈদগাহ মাঠ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। অথচ এই জনপদে একটি ঈদগাহ মাঠ নির্মাণের জন্য জনপ্রতিনিধিসহ সবার কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল এলাকাবাসী। কিন্তু তাদের সহায়তায় কেউ পাশে দাঁড়ায়নি।
সম্প্রতি এক শুক্রবার জুম্মা নামাজের আগে ৩টি গ্রামের কয়েকশ’ লোকের সমাগমে মিলাদ মাহফিল ও মিষ্টি মুখ করে অভিনব এ ঈদগাহ মাঠের মাটিকাটা কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করা হয়। এই প্রকল্পের মাটিকাটা কাজের উদ্বোধন করেন তিন গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক ৬ মুরুব্বি। এরা হলেনÑ নরসিংহপাড়ার হাজী আহসান আলি আকন্দ, হাজি জাহের আলি আকন্দ, শুকলাই গ্রামের-হাজি বেলায়েত ফকির, সোরমান প্রামাণিক, শুকলহাট গ্রামের-মো: ইউনুস আলি প্রামাণিক ও খোরশেদ প্রামাণিক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ধনি প্রামাণিক। জনহিতকর এই শুভ কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন, হাজী কে.এম আব্দুর রশিদ, হাজী আহসান আলি আকন্দ, মেম্বার মোঃ আয়নাল হোসেন, আবদুল কুদ্দুস, হাজী আবদুল ওয়াহেদ প্রামাণিক, মাওলানা মো: মোরশেদ আলি, আয়নাল মেম্বার প্রমুখ।
ঈদগাহ মাঠের নির্মাণ পরিকল্পনাকারী ও অন্যতম দাতা সাহিত্যিক সাংবাদিক মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম নিজ গ্রামের মানুষের এই দুরাবস্থা নিরসনের জন্য প্রায় তিন বছর আগে ঈদগাহের সমস্যা মিটানোর জন্য তিনি একাই পরিকল্পনা করেন। তার সেই পরিকল্পনার বাস্তব রূপ লাভ করতে যাচ্ছে পানির মধ্যে পাকা পিলারে ছাদ দেয়া নির্মিত দ্বিতল খোলা ঈদগাহ। এই ঈদগাহ নির্মাণ করা হচ্ছেÑ নরসিংহপাড়া, শুকলাই ও শুকলহাট তিন গ্রামের মাঝখানে ঈদগাহের নিজস্ব জায়গায়। চলনবিলের ঘোরপল্লী এই ৩ গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। পানির উপর দ-ায়মান সাইক্লোন শেল্টার আদলে তৈরি এই ঈদগাঁহে প্রায় দুই হাজার মুসল্লি এক সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন।
স্থানীয় এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদগাহ নির্মাণের টাকার একটি অংশ ব্যারিস্টার রওশন-জাহান ফাউন্ডেশনের পক্ষে মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম ও তার পরিবার দিয়েছেন। এছাড়া জাহাঙ্গীর আলম তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের কাছ থেকেও অর্থ সংগ্রহ করেছেন। একই সাথে ঈদগাঁহ নির্মাণের জন্য ৩ গ্রামের মানুষের আন্তরিক সহযোগিতাও রয়েছে নিবিড়ভাবে। এ ঈদগাঁহ নির্মাণের স্থানটিকে চার কোণবিশিষ্ট করার জন্য নরসিংহপাড়া গ্রামের নিরক্ষর চাষী কুদরত আলী কুদু তার এক শতক জমিও দান করেছেন। নিজেদের দীর্ঘদিনের ঈদগাঁহ সমস্যা নিরসনে কায়িকশ্রম ও সহযোগিতার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করে চলেছেন তিন গ্রামের সর্বসাধারণ এবং ঈদগাঁহ কমিটির কর্মকর্তাগণ। চলনবিল অঞ্চলের এই গ্রামে পানির মধ্যে পিলার দিয়ে ঈদের মাঠ নির্মাণ কাজটি যেমন অভিনব নির্মাণশৈলী তেমনি নতুন। পানির উপরে মসজিদ নির্মাণের কথা শোনা গেলেও ঈদগাঁহ নির্মাণের উদ্যোগ এটিই প্রথম। ইতোমধ্যে এই পানির উপর অভিনব এ ঈদগাঁহ নির্মাণের ব্যাপারে বিপুল সাড়া পড়ে গেছে। প্রতিদিন লোকজনের সমাগম হচ্ছে এ ঈদগাঁহ মাঠ দেখার জন্য।
জানতে চাইলে এই কাজের পরিকল্পনার বিষয়ে মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ৪০টি পিলারের উপর প্রায় ১০০ ফুট বাই ১০০ ফুট ঈদগাঁহে জমির লেভেল থেকে ৪ ফুট উপরে একটি ফ্লোর এবং তারপর ১০ ফুট পিলারের উপরে পুরো জায়গা জুড়ে ছাদ দেয়া হয়েছে। ছাদের চারিদিকে রেলিং থাকবে। ইতিমধ্যে নির্মিত হয়েছে সিঁড়ি, গেট এবং দ্বিতল ছাদের পাঁচ ভাগের দুই ভাগ ছাদ। অর্ধ সমাপ্ত ঈদগাঁহেই ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন গ্রামবাসীরা। মূলত উপরের ছাদটিতেই ঈদের নামাজ আদায় করা হবে। বর্ষাকালে পানি কম হলে বা শুকনো মৌসুমে নিচের ফ্লোরটিও ব্যবহার করা যাবে নামাজ বা অন্যান্য যে কোনো কাজে। ঈদগাঁহটি নির্মাণে সংগৃহীত ২৫ লাখ টাকায় ৬৫% কাজ শেষ হয়েছে। পুরো কাজটি শেষ করতে আরও প্রায় ২০ লাখ টাকা লাগবে। এই ঈদগাহ নির্মাণে সময় লাগবে দুই বছর। কারণ ইট, খোয়া, বালু, রড, সিমেন্ট আনতে হয় বর্ষায় নৌকায় করে। তাছাড়া যথেষ্ট জায়গাও নেই। আর অর্থের বিষয়টি তো আছেই। তিনি উল্লেখ করেন, ইনশাআল্লাহ অর্থদাতা ও গ্রামবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় ঈদগাঁহটি আগামীতে শেষ হবে। তারপরও বিশিষ্টজন বা প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ সহায়তা আশা করেন এই উদ্যোক্তা। সেক্ষেত্রে যদি কেউ ঈদগাঁহে অর্থ সাহায্য করতে চান তবে চলতি হিসাব নং ৩৩০০৫১৩৪, সোনালী ব্যাংক লিঃ, সেগুনবাগিচা শাখা, ঢাকা বা মোবাইল নং ০১৭১৫১৫০৩০৫-তে যোগাযোগ করতে পারেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।