Inqilab Logo

রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জীবনযাত্রার ব্যয় ৩ মাসের মধ্যে কমার আশা গভর্নরের

ঋণের সুদহার বাড়বে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, দেশে জীবনযাত্রার খরচ, মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের অস্থিরতা আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে কমে আসবে। গভর্নরের মতে, বৈশ্বিক মন্দাভাব ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জেরে দেশের অভ্যন্তরীণ বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে যে সঙ্কট দেখা যাচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নতির জন্য সব নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। একই সঙ্গে সঙ্কট উত্তরণে অর্থনীতিবিদরা ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়ানোর পরামর্শ দিলেও গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার তা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মহামারি করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় ব্যাংকঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা তুলে দেয়া যাচ্ছে না। কারণ এখন সুদহারের এক অঙ্কের (৯ শতাংশ) নির্দেশনা তুলে দিলে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিঘ্নিত হবে সরবরাহ। তাই লেন্ডিং ক্যাপ (ঋণের সুদহার) তুলে নেয়া হবে না। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ব্যাংক ম্যানেজমেন্টে (বিআইবিএম) গতকাল দুই দিনব্যাপী নবম ব্যাংকিং কনফারেন্স শুরুর দিনে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর পরই আমি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের সমস্যা ও সম্ভাবনা জানার চেষ্টা করেছি। এখন যে সমস্যা (ডলার সঙ্কট) দেশে বিরাজ করছে এটি বেশিদিন থাকবে না। সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী ধারাও নিম্নমুখী হবে।
করোনা মহামারির ধাক্কা কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে ওলোটপালট করে দিয়েছে। তার প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিও সঙ্কটে পড়েছে। এ অবস্থায় অর্থনীতিবিদেরা ব্যাংকঋণের সুদের হারের সীমা তুলে দেয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন কিছুদিন ধরে।
এ বিষয়ে গভর্নর রউফ তালুকদার প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অনুষ্ঠানে বলেন, সুদহার সীমা তুলে দিলে অর্থ খরচ আরও বাড়বে উদ্যোক্তাদের। পাশাপাশি ব্যাংকেরও তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ বৃদ্ধি পাবে। আমরা উদ্যোক্তাদের কম খরচে ঋণ দিতে চাই। যাতে উৎপাদন খরচ কমে আসে।
অনুষ্ঠানে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার কাজে পরিচালনা পরিষদের পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেন, পরিচালকদের জন্য নির্দিষ্ট দায়িত্বের বাইরে হস্তক্ষেপ করলে তা ব্যাংকের জন্যই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গভর্নর লিখিত বক্তব্যে বলেন, ব্যাংকের পরিচালক ও ব্যবস্থাপনার কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ও কাজ সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী তারা কাজ করবেন। পরিচালকরা ব্যবস্থাপনার কাজ করবেন না। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করে যাবেন। দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যাংকের মালিকদের সংগঠন এবং ব্যাংকের নির্বাহীদের সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করে এ বার্তা দিয়েছেন বলে জানান নতুন গভর্নর রউফ তালুকদার। সুশাসনের উপর জোর দিতে গিয়ে গর্ভনর বলেন, ব্যাংক শুধু মুনাফাই করবে না, সুশাসনের চর্চাও অব্যাহত রাখবে, নইলে পুরো খাতটিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে দেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বে সরবরাহ ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর জেরে দেশে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারও বেশ চাপে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন কোনো উদ্যোগ নেবে কি না- এ প্রশ্নে গভর্নর বলেন, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে তিনি আশাবাদী।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বড় ধরনের উদ্বেগ নেই দাবি করে তিনি বলেন, এখন যে মূল্যস্ফীতি, তা কিন্তু আমদানির কারণে। তেল ও সার কিনে আনতে হয়। তেলের দাম বেড়েছে। সার বিকল্প উপায়ে কম দরে কেনার চেষ্টা চলছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যে পদ্ধতিতে এগোচ্ছেÑইনশাল্লাহ বাংলাদেশ ভালোর দিকে আছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যে দিয়ে পার করছে। ডলারের দাম ব্যাংকেই ১১০ টাকায় আর খোলা বাজারে ১২০ টাকায় উঠেছিল। ডলার লেনদেনে অতিরিক্ত মুনাফা করায় সম্প্রতি দেশীয় ও বহুজাতিক ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে পরবর্তী কী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে- তা জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষ হলে কথা বলব। বৈদেশিক মুদ্রাবাজার যে বেশ চাপে রয়েছে, তা উঠে এসেছে এবারের বার্ষিক ব্যাংকিং কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া প্রফেসর শাহ মো. আহসান হাবিবের মূল প্রবন্ধে।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির বর্তমান চিত্রে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যাপ্ত উদ্যোগ না নিলে বাজেটে নেয়া বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন দুরূহ হয়ে দাঁড়াবে। এ প্রসঙ্গে গভর্নর রউফ তালুকদার বলেন, অভ্যন্তরীণ সরবরাহ বাড়িয়ে বৈশ্বিক এ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যে উদ্যোগ নিচ্ছে, তা আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।
মূলপ্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, মুদ্রাবাজারে সরবরাহ অর্থ সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে মুদ্রানীতিতে। কিন্তু মূল্যস্ফীতির চাপে ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়া মানেই অর্থ পরিশোধ কমে যাবে ব্যাংকে। যার ফলে খেলাপির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্যে বিআইবিএম এর মহাপরিচালক ড. আকতারুজ্জামান বলেন, বার্ষিক ব্যাংকিং কনফারেন্স ব্যাংকারদের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করে দেয় নিজেদের কাজের অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ পরস্পরের সঙ্গে বিনিময় করার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেয়া নীতিমালার তাত্ত্বিক বিশ্লেষণও উঠে আসে এখানে। প্রতি বছর বার্ষিক ব্যাংকিং কনফারেন্সের আয়োজন করে বিআইবিএম। এতে দেশি-বিদেশি ব্যাংকাররা অংশ নেন। ব্যাংক পরিচালনায় বিষয়ভিত্তিক প্লেনারি সেশনে একাধিক প্রেজেন্টেশন পেপার উপস্থাপন করা হয়।
করোনা মহামারির কারণে গত ২০২০ ও ২০২১ সালে এ আয়োজন হতে পারেনি। দুই বছরের বিরতির পর এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুই দিনব্যাপী এবারের আয়োজনে ভারত, মালয়েশিয়া ও নেপাল থেকে ব্যাংকাররা অংশ নিচ্ছেন অনলাইনে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ