Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৩৭তম বিসিএস প্রিলির প্রস্তুতি

| প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিষয় : বাংলা
শামসুল আলম
চেয়ারম্যান
ক্যারিয়ার গাইডলাইন

প্রশ্ন: মঙ্গলকাব্যের নামকরণ সম্পর্কে লিখুন।
উত্তর: মঙ্গলবাক্য কেন মঙ্গলকাব্য নামে অভিহিত হত এ নিয়ে নানা মত বর্তমান। এ সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য মতগুলো হচ্ছেÑ
১. যে গান মঙ্গলসুরে গাওয়া হয় কিংবা যে গান যাত্রা বা মেলায় গাওয়া হয়, তাই মঙ্গলকাব্য।
২.    যে কাব্য পাঠ করলে ও শ্রবণ করলে, এমনকি গৃহে রাখলেও গৃহস্থের সব অকল্যাণ দূর হয় এবং মঙ্গল হয়, তাই মঙ্গলকাব্য।
৩.    যে গান এক মঙ্গলবারে শুরু করে আরেক মঙ্গলবার পর্যন্ত গাওয়া হয়, তাই মঙ্গলকাব্য।
৪.    যে কাব্যে দেবতার ‘বিষয়’ অর্থাৎ মাহাত্ম্যকথা বর্ণিত হয়েছে, তাই মঙ্গলকাব্য।
প্রশ্ন: একটি সম্পূর্ণ মঙ্গলকাব্যে কয়টি অংশ থাকে?
উত্তর: একটি সার্থক মঙ্গলকাব্যের মোট ৫টি খ- থাকে। এই ৫টি খ-ের বর্ণনা নিচে দেয়া হলো।
১. বন্দনা-অর্থ প্রশংসা। এতে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর দেবদেবী ও পীর-পয়গম্বরের বন্দনা করা হয়। দ্বিতীয় অংশ-‘আত্মপরিচয়’। প্রায় সব কবিই দেবতার স্বপ্নাদেশে কাব্যরচনা করার কথা ও নিজের পরিচয় তুলে ধরেছে। তৃতীয় অংশ-‘ দেবখ-’। এই অংশে কাব্য-কথাকে পৌরাণিক দেবদেবীর রূপাধারে অলৌকিকত্ব প্রদান ও আভিজাত্য দেবার চেষ্টা করা হয়। চতুর্থ অংশ-‘নরখ-’ বা মূল কাহিনী বর্ণনা। এতে দেবতার পূজা প্রচারের জন্য কোনো কোনো দেবতা ও স্বর্গবাসীর শাপগ্রস্থ হয়ে নরলোকে জন্মগ্রহণের বর্ণনা আছে। তাছাড়া রয়েছে নায়ক নায়িকার প্রথাগত রূপ-বর্ণনা, কুলকামিনীর পতিনিন্দা, রন্ধন-বিবরণ, নায়িকাকে বারমাসের সুখদুঃখের কথা ‘বারমাস্যা’, বিপন্ন নায়কের বর্ণানুক্রমে চৌত্রিশ অক্ষরে দেবতার স্তুব ‘চৌতিশা’ ইত্যাদি। পঞ্চম অংশ-‘শ্রুতিফল’।
প্রশ্ন: মঙ্গলকাব্যের রচনাকাল লিখুন।
উত্তর: মধ্যযুগের সবচেয়ে সমৃদ্ধ কাব্য ধারা হলো মনসা মঙ্গলকাব্য। গবেষকদের মতে, এই ধারার সূচনা হয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে এবং তা অব্যাহত থাকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত অর্থাৎ পঞ্চদশ শতাব্দী হতে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত সুদীর্ঘ চারশ বছর ধরে এটি রচিত হয়।

মনসা মঙ্গলকাব্য
প্রশ্ন: মনসা মঙ্গলকাব্যের পরিচয় প্রদান করুন।
উত্তর: দেবী মনসাকে নিয়ে মধ্যযুগে এক শ্রেণীর র্ধমভিত্তিক কাব্য রচিত হয় যা বাংলা সাহিত্যে মনসা মঙ্গলকাব্য হিসেবে পরিচিত। সাপের দেবী মনসার স্তব, স্তুতি, কাহিনী ইত্যাদি নিয়ে রচিত কাব্য ‘মনসা মঙ্গল’। একে ‘পদ্মপুরাণ’ নামেও অভিহিত করা হয়। বাংলার প্রাকৃত জীবন এর লৌকিক জীবনাচার থেকে উদ্ভব হয়েছে মনসা মঙ্গলের। চাঁদ সওদাগরের প্রথম দিকে মনসা বিরূপতা, পরে মনসা দেবীর অলৌকিক শক্তির প্রভাব স্বীকার করে তাঁর বশ্যতা স্বীকার করাই মনসা মঙ্গলকাব্যের প্রধান আখ্যান। এই কাহিনী চৈতন্যপূর্ব যুগ হতে নদনদী পরিবেষ্টিত গ্রাম বাংলার সর্প ভয়ে ভীত সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। মনসা মঙ্গল মূলত পাঁচালী পালা।
প্রশ্ন: মনসা মঙ্গলকাব্যের ৫ জন কবির নাম লিখুন।
উত্তর: মনসা মঙ্গলকাব্যের ৫ জন উল্লেখযোগ্য কবি হলেন-
১. কানা হরিদত্ত,  ২. বিজয়গুপ্ত,  ৩. নারায়ন দত্ত, ৪. বিপ্রদাস পিপিলাই, ৫. কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ।
প্রশ্ন:    মনসা মঙ্গলকাব্যের আদি কবি কে?
উল্টর: মনসা মঙ্গলকাব্যের আদি কবি হলেন কানা হরিদত্ত। তার রচিত কাব্য এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। মূলত তাঁর পরিচয় পাওয়া গিয়েছে বিজয় গুপ্তের কাব্যে। বিজয়গুপ্ত তাঁর সম্পর্কে বলেছেন- “মুর্খে রচিল গীত না জানে বৃত্তান্ত।  
প্রথমে রচিল গীত কানা হরিদত্ত॥”
প্রশ্ন: মনসা মঙ্গলকাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি কে? তাঁর পরিচয় দিন।
উত্তর: মনসা মঙ্গলকাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি হলেন বিজয় গুপ্ত। তাঁর লেখা মনসা মঙ্গলা কাব্য সবচেয়ে সমৃদ্ধ যে কারণে তিনি শ্রেষ্ঠ কবি। তিনি তার মনসা মঙ্গলকাব্যের নামকরণ করেন ‘পদ্মপুরাণ’। দেবী মনসার জন্ম হয়েছিল পদ্ম পাতার উপরে- যে কারণে এর নাম হয়েছে পদ্ম পুরাণ।
প্রশ্ন: বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগে সবচেয়ে প্রতিবাদী চরিত্র কে? তাকে কেন সবচেয়ে প্রতিবাদী চরিত্র বলা হয়েছে?
উত্তর: বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগে সবচেয়ে প্রতিবাদী চরিত্র হলেন চাঁদ সওদাগর।
তাকে প্রতিবাদী চরিত্র বলা হয় কারণ-
১.     মনসা দেবী তার ছয় সন্তানকে তাঁর সাপ দিয়ে মেরে ফেললেও তার প্রতি প্রার্থনা না করে প্রার্থনা করতেন মহাজ্ঞানী শিবের। শিবের ছিলেন তিনি ভক্ত।
২.     চাঁদ সওদাগর বাণিজ্যে গিয়ে বিপুল মুনাফা করে ফেরার সময় মনসা দেবীর কথা না শুনলে দেবী তার নৌকা ঝড়ে ডুবিয়ে তার সব লাভের মালামাল পানিতে ডুবিয়ে দেবার পাশাপাশি তাকে ডুবিয়ে মারতে চাইলেও তার প্রতি বশ্যতা স্বীকার করেনি এবং নদীতে মনসাদেবীর প্রাণ রক্ষাকারী কাঠখ- না আঁকড়ে ধরে সে নদীতে ভেসে ভেসে অনেক কষ্টে তীরে উঠতে সক্ষম হয়।
প্রশ্ন: মনসা মঙ্গলকাব্যের প্রধান ৫টি চরিত্রের নাম লিখুন।
উত্তর:
১.     দেবী মনসা: সাপের দেবী। তিন স্বর্গে বসবাস করেন।
২.     চাঁদ সওদাগর: চাম্পাই নগরের বণিক এবং বীরপুরুষ মহাজ্ঞানী শিবের ভক্ত।
৩.     সনকা: চাঁদ সওদাগরের স্ত্রী এবং মনসা দেবীর একজন ভক্ত ও পুজারী।
৪.     লখিন্দর: চাঁদ সওদাগর ও সনকার সপ্তম সন্তান।
৫.     বেহুলা: উজানী নগরের সুন্দরী এই নারীর সাথে লখিন্দরের বিয়ে হয়।
৬.     নেতাই ধোপানী: স্বর্গীয় দেবীর ধোপানী।
প্রশ্ন: বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগে সবচেয়ে পতিপ্রাণা চরিত্র কে? তাঁর পরিচয় দাও।
উত্তর: বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগে সবচেয়ে পতিপ্রাণা চরিত্র হলো বেহুলা। সে ছিল উজানীনগরের সুন্দরী নারী। চাঁদ সওদাগরের সপ্তম সন্তান (পুত্র) লখিন্দরের সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের দিন বাসর রাতে মনসা দেবীর নির্দেশে মনসার দূত সাপ পূর্বে তৈরি করা লোহার তৈরি বাসর ঘরে বেহুলার কেশ বেয়ে উঠে লখিন্দরকে দংশন করে এবং এতে তার স্বামীর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর সে তার মৃত স্বামীকে নিয়ে ভেলায় করে নদীতে ভাসতে ভাসতে একসময় স্বর্গের ধোপানী নেতাই ধোপানীর ঘাটে উপস্থিত হয় এবং তার কাছে স্বামীর জীবন ভিক্ষা করে। নেতাই ধোপানী তাকে মনসা দেবীর নিকট যেতে বলে এবং এও বলে দেয় তাকে যদি সে সন্তুষ্ট করতে পারে তাহলেই সে তার মৃত স্বামীকে জীবিত ফিরে পাবে। এরপর বেহুলা মনসা দেবীর নিকটে গিয়ে তাঁকে নেচে গেয়ে সন্তুষ্ট করে। এতে সে তার মৃত স্বামীকে জীবিত করার পাশাপাশি পূর্বে মৃত  ছয় ভাসুরকে জীবিত এবং শ্বশুরের নিমজ্জিত সম্পদ ফিরে পেল।

চ-ীমঙ্গল কাব্য
প্রশ্ন: চ-ীমঙ্গলে কাব্য বলতে কী?
উত্তর: মধ্যযুগে মঙ্গলকাব্য ধারার সমৃদ্ধ শাখা হচ্ছে চ-ীমঙ্গল। দেবী চ-ীকে নিয়ে এক ধরণের আখ্যান কাব্য রচিত হয় যা বাংলা সাহিত্যে চ-ীমঙ্গল কাব্য নামে পরিচিত।
প্রশ্ন: মধ্যযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি কে? তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ কবি বলার কারণ কী?
উত্তর: মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ কবি হলেন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী। তাকে মধ্যযুগের কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কবি বলার কারণ-
১.     নারীর প্রতিবাদ: মধ্যযুগে মুকুন্দরাম চক্রবর্তী নারীর যে প্রতিবাদী চরিত্র তার কাব্যে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তা তার সমসাময়িক কবিরা এমনকি আধুনিক অনেক কবি তাদের কাব্যে ফুটিয়ে তুলতে পারেনি। তাঁর কাব্যে ফুলরার একটি উক্তি-
    “পিপিলীকার পাখা উঠে মরিবার তরে।
    কাহার ষোড়শী কন্যা আনিয়াছ ঘরে॥”
২.     লৌকিক জীবনের কথা: লৌকিক জীবনকে মুকুন্দর মচক্রবর্তী তার কাব্যে অত্যন্ত চমৎকারভাবে উপস্থাপন করছেন। মধ্যযুগে কোন কবি সেভাবে আর উপস্থাপন করতে পারেননি।
৩.     পা-িত্য জ্ঞান: মুকুন্দরামের কবিত্ব শক্তির চেয়ে পা-িত্য শক্তি অনেক বেশি ছিল। তিনি রচনা করেছেন কাব্য। তিনি সেই কাব্য বপন করে গেছেন উপন্যাসের বীজ। তাঁর মধ্যে পা-িত্য শক্তি বেশি থাকার কারণে এ ধরনের কাব্য রচনা করা সম্ভব হয়েছে। তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় আধুনিক যুগের সাহিত্য সমালোচকদের এই মন্তব্য থেকে-
    “মুকুন্দরাম চক্রবর্তী মধ্যযুগে জন্ম গ্রহণ না করে আধুনিক যুগে জন্ম গ্রহণ করলে কাব্য না লিখে উপন্যাস লিখতেন।”
প্রশ্ন: চ-ীমঙ্গল কাব্যের প্রধান চরিত্রগুলো সম্পর্কে আলোচনা করুন।
উত্তর: চ-ীমহলে কাব্যের প্রধান চরিত্রগুলো নিচে আলোচনা করা হলো-
১.     দেবী চ-ী: তিনি স্বর্গীয় দেবী। যিনি মানুষ ও পশুপাখি উভয়েরই দেবী ছিলেন। তাঁর স্বামীর নাম শিব। তিনি তাঁর পূজা প্রচার ও প্রচলনের জন্য নীলাম্বর ও ছায়াকে স্বর্গ হতে মর্ত্যে পাঠান। যারা মর্ত্যে এসেছে নাম ধারণ করেন কালকেতু ও ফুলরা।
২.     কালকেতু: কালকেতুর স্বর্গীয় নাম নীলাম্বর। পৃথিবীতে আসার পর তিনি কালকেতু হিসেবে নাম ধারণ করেন। কালকেতু প্রথম দিকে একজন শিকারী ছিলেন অর্থাৎ পশুপাখি শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দেবী চ-ীর আশীর্বাদে তিনি রাজ্যের অধিপতি হন। কালকেতু মারা গেল তাঁর সন্তান এ রাজ্যের অধিপতি হন। তার সন্তানের নাম ছিল পুষ্পকেতু।
৩.    ফুলরা: ফুলরার স্বর্গীয় নাম ছায়া। মর্ত্যে এসে তিনি ফুলরা নাম ধারণ করেন। তিনি ছিলেন কালকেতুর স্ত্রী।
    মধ্যযুগে এটি একটি প্রতিবাদী নারী চরিত্র। তিনি চ-ীমঙ্গল কাব্যে প্রতিবাদ করেছেন এভাবে-
    “পিপিলীকার পাখা উঠে মরিবার তরে।
    কাহার ষোড়শী কন্যা আনিয়াছ ঘরে॥”
৪.    মুরারি শীল: দেবী চ-ীর কাছ হতে প্রাপ্ত সোনার মোহরগুলি আসল না নকল তা পরীক্ষা করার জন্য কালকেতু জুহুরী মুরারি শীল এর নিকট গমন করে। মুরারি শীল সেই মোহর পরীক্ষা করার সময় প্রতারণার আশ্রয় নেয় এবং আসল স্বর্ণ মোহরকে নকল বলে কালকেতুর নিকট উপস্থাপন করে। এতে কালকেতুর দেবী চ-ীর উপর ক্ষিপ্ত হন। তাই বলা যায়, মুরারি শীল হলেন মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ ঠগদের অন্যতম।
৫.     ভাড়ুদত্ত:  মধ্যযুগের সবচেয়ে ষড়যন্ত্রকারী চরিত্র এ ভাড়ুদত্ত। সে কালকেতুর রাজ্যে অনেক অঘটনের জন্ম দিয়ে শেষে বিতাড়িত হয়। এ অপমান সহ্য করতে না পেরে সে কলিঙ্গ রাজকে কালকেতুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্ররোচিত করে।
প্রশ্ন: মধ্যযুগের সবচেয়ে ষড়যন্ত্রকারী চরিত্র কোনটি? তাকে ষড়যন্ত্রকারী চরিত্র কেন বলা হয়েছে?
উত্তর: মধ্যযুগের সবচেয়ে ষড়যন্ত্রকারী চরিত্র হলো ভাড়– দত্ত। কালকেতু যখন তাঁর রাজ্যের অধিপতি, তখন তার রাজ্যে ভাড়ুদত্ত নামের এক ব্যক্তির  আগমন ঘটে। সে কালকেতুর রাজ্যে অনৈতিক বিশেষ সুবিধা না পেয়ে রাজা কালকেতুর নামে বিভিন্ন কুৎসা রটনা করতে থাকে। এর ফলে তাকে শাস্তিস্বরূপ মধ্যযুগীয় কায়দায় মাথা ন্যাড়া করে মাথার মধ্যে ঘোল ঢেলে দিয়ে রাজ্য হতে বিতাড়িত করা হয়। রাজ্য হতে বিতাড়িত হয়ে ভাড়ুদত্ত কলিঙ্গ রাজ্যে আশ্রয় গ্রহণ করে। কলিঙ্গ রাজ্যে আশ্রয় নিয়ে সে কালকেতু সম্বন্ধে কলিঙ্গ রাজাকে নানা ধরণের প্ররোচনা দেয়। রাজাকে কাল কেতু রাজ্য আক্রমণ করতে উস্কে দেন। এই উস্কানিতে প্ররোচিত হয়ে কলিঙ্গ রাজা কালকেতুর রাজ্য আক্রমণ করে রাজ্য কেড়ে নেয়। রাজ্য হারা হযে কালকেতু দেবী চ-ীর নিকট এ ব্যাপারে সাহায্য প্রার্থনা করেন। এ কথা শুনে দেবী কলিঙ্গ রাজাকে স্বপ্নে কালকেতুর রাজ্য ফিরিয়ে দিতে বলেন।
উপর্যুক্ত কারণ বিবেচনা করে বলা যায়, ভাড়ুদত্ত মধ্যযুগের একটি ষড়যন্ত্রকারী চরিত্র।
প্রশ্ন:    চ-ীমঙ্গল কাব্যের ৩ জন কবির নাম লিখুন।
উত্তর: চ-ীমঙ্গল কাব্যের ৩ জন কবি হলেন-
১. মুকুন্দরাম চক্রবর্তী,  ২. মানিক দত্ত ও ৩. দ্বিজমাধব।
প্রশ্ন:    কার পৃষ্ঠপোষকতায় মুকুন্দরাম ‘শ্রী শ্রী চ-ীমঙ্গল কাব্য’ রচনা করেন? নির্দেশদাতা মুকুন্দরামকে কী উপাধি দেন?
উত্তর: কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী ছিলেন জমিদার বাঁকুড়া রায়ের পুত্র রঘুনাথের গৃহ শিক্ষক। পিতার মৃত্যুর পর রঘুনাথ রায় জমিদার হন। তার সময়েই কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী লেখেন অমর কাব্য ‘শ্রী শ্রী চ-ীমঙ্গল’। রঘুনাথ কবি প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ‘কবিকঙ্কণ’ উপাধি প্রদান করেন।

ধর্মমঙ্গল কাব্য
প্রশ্ন:    ধর্মমঙ্গল কী? এ কাব্যের প্রধান চরিত্রগুলোর নাম লিখুন।
উত্তর: ধর্মঠাকুরের মাহাত্ম্য বর্ণনা করে যে কাব্য রচিত হয়েছে, তাই ধর্মমঙ্গল কাব্য। চ-ী বা মনসার মতো ধর্মঠাকুর স্ত্রী-দেবতা নন, তিনি পুরুষ দেবতা। পশ্চিমবঙ্গেই এই দেবতার পূজার প্রচলন দেখা যায়। সাধারণত, ডোম-সমাজেই এই দেবতার পূজা প্রচলিত ছিল, এখনো আছে। ধর্মঠাকুর নিরঞ্জন নিরাকার আদ্য দেবতা। ধর্মঠাকুরের উদ্ভবের মূলে কেউ বৌদ্ধ ধর্মের ত্রিরতেœর, কেউ বা বৈদিক সূর্যদেবতার, কেউ বা আর্যের প্রভাব অনুসন্ধান করেন।
এ কাব্যের মূল চরিত্রগুলো হলো-হরিশ্চন্দ্র, মদনা, লুইচন্দ্র, কর্ণসেন, গৌড়েশ্বর, লাউসেন।
প্রশ্ন:    ধর্মমঙ্গল কাব্যের একজন উল্লেখযোগ্য কবির পরিচয় দিন।
উত্তর: ধর্মমঙ্গল কাব্যের একজন উল্লেখযোগ্য কবি হলেন ময়ূর ভট্ট। তিনি ধর্মমঙ্গল কাব্যের আদি-কবি। সব ধর্মমঙ্গল কাব্যে তাঁকে আদি-কবি বলা হয়েছে। তাঁর রচনা ‘হাকন্দপুরাণ’ নামে খ্যাত। কবির ব্যক্তি-পরিচয় কিছু জানা যায়নি। খুব সম্ভব, তিনি চতুর্দশ শতাব্দীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন।

অন্নদামঙ্গল কাব্য
প্রশ্ন: অন্নদামঙ্গল কাব্য কী? এ কাব্যের প্রধান চরিত্রগুলোর নাম লিখুন।
উত্তর: অন্নদামঙ্গল হলো দেবী অন্নদার মাহাত্ম্য প্রচারে ভবানন্দ মজুমদারের জীবন নিয়ে রচিত কাব্য। এটি কবি ভারতচন্দ্র রায়ের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি কৃতি। নবদ্বীপের মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে এটি রচিত হয়। অন্নদামঙ্গল মূলত চ-ীমঙ্গল বা কালিকামঙ্গল কাব্যেরই ভিন্নরূপ। অন্নদামঙ্গল কাব্যটি তিন খ-ে বিভক্ত। প্রথম খ- ‘অন্নদামঙ্গল’; দ্বিতীয় খ-‘বিদ্যাসুন্দর’ ও তৃতীয় খ- ‘মানসিংহ’।
এ কাব্যের মূল চরিত্রগুলো হলো-ভবানন্দ, বিদ্যা, সুন্দর, মানসিংহ, ঈশ্বরী পাটনী ও হীরা মালিনী।
প্রশ্ন: মধ্যযুগের শেষ কবি কে? তার সাহিত্য কর্ম সম্বন্ধে লিখুন।
উত্তর: মধ্যযুগের শেষ কবি হলেন ভারত চন্দ্র। তিনি ১৭০১ হতে ১৭১২ সালের মধ্যে কোন এক সময় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৭৬০ সালে মৃত্যু বরণ করেন। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মূলত মধ্যযুগের সমাপ্তি ঘটে। তিনি নবদ্বীপের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাকবি ছিলেন। তার কবিত্বে মুগ্ধ হয়ে রাজা তাকে ‘রায় গুণাকর’ উপাধি প্রদান করেন। তার শ্রেষ্ঠ কাব্য অন্নদামঙ্গল কাব্য। তার আরেকটি বিখ্যাত কাব্য হলো সত্যপীরের পাঁচালী। তিনি সংস্কৃত ভাষাতেও নগাষ্টক ও গঙ্গাষ্টক নামক দুটি কবিতা রচনা করেন।
প্রশ্ন: অন্নদামঙ্গল কাব্যের কয়েকটি প্রসিদ্ধ লাইন উদ্বৃত করুন।
উত্তর: অন্নদামঙ্গল কাব্যের কয়েকটি প্রসিদ্ধ লাইন নিম্নে উদ্ধৃত করা হলো-
১। আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে,  ২। নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়,  ৩। যতন নহিলে নাহি মিলায় রতন, ৪। হাভাতে যদ্যপি চায় সাগর শুকায়ে যায়,  ৫। মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন, ৬। বড়র পিরীতি বালির বাঁধ ক্ষণে হাতে দড়ি ক্ষণেকে চাঁদ।
প্রশ্ন: ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’- ব্যাখ্যা করুন।
উত্তর: দেবী অন্নদা যখন তাঁর শ্বশুরবাড়ি হতে বিরোধে জড়িয়ে স্বামীর সংসার ত্যাগ করে খেয়াঘাটে এসে উপস্থিত হলো। ঈশ্বরী পাটনী দেবী অন্নদাকে কড়ি ছাড়া খেয়া পারাপারে অপরাগতা প্রকাশ করে। অনেক অনুরোধের পর খেয়ার মাঝি দেবী অন্নদাকে নৌকায় পার করতে রাজি হয়।  নৌকায় দেবী যে সেউতিতে পা রেখেছিলেন তা স্বর্ণে পরিণত হয়। এতে ঈশ্বরী পাটনীর মনে হতে থাকে তিনি কোন সাধারণ নারী নন। তীরে নেমে মাঝিকে দেবী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী বর চাও তুমি, মাঝি? যা চাও তাই পাবে।’ ঈশ্বরী পাটনী রাজ্য, বাড়ি ভর্তি সোনারূপা, মুক্তা, পান্না দেবীর কাছে না চেয়ে নিবেদন করলো একটি ছোটো প্রার্থনা। বললো, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।’ দেবী অন্নদা সাথে সাথে মাঝির এই প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন।

রোমান্টিক প্রণয়োপখ্যান ও আরাকান রাজসভায় বাংলা সাহিত্য
প্রশ্ন: রোমান্টিক প্রণয়োপখ্যান কী?
উত্তর: রোমান্টিক কাব্য হচ্ছে প্রণয় উপাখ্যান। বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগে মুসলিম কবিরা প্রধানত আরবি, ফারসি, হিন্দি প্রভৃতি ভাষা থেকে প্রেমমূলক অনুবাদ সাহিত্য বা কাব্য রচনা করেন- যা বাংলা সাহিত্যে রোমান্টিক কাব্য হিসেবে পরিচিত। এ প্রসঙ্গে ডঃ ওয়াকিল আহমেদ যথার্থই বলেছেন, “মানুষের প্রেমমূলক কাহিনী কাব্যই রোমান্টিক কাব্য।”
প্রশ্ন: বাংলা সাহিত্যে রোমান্টিক কাব্যের রচনাকাল বা সময়সীমা সম্পর্কে লিখুন।
উত্তর: বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগে রোমান্টিক কাব্য রচিত হয় ৪০০ বছর ধরে। এ কাব্যের যাত্রা শুরু হয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে। এ ধারা অব্যাহত থাকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত। আধুনিক যুগের সাহিত্য কর্মেও রোমান্স আছে।
প্রশ্ন: বাংলা সাহিত্য প্রথম মুসলিম/রোমান্টিক কবি কে? তার সাহিত্য কর্মের পরিচয় প্রদান করুন।
উত্তর: সাহিত্যের মধ্যযুগে প্রথম মুসলিম/রোমান্টিক কবি ছিলেন শাহ মুহম্মদ সগীর। তিনি পঞ্চদশ শতাব্দীতে সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহের রাজত্বকালে সাহিত্য সাধনা করেন। তাঁর একটি মাত্র কাব্য আমরা পাই ‘ইউসুফ-জোলেখা’। এটিই বাংলা সাহিত্যের প্রথম রোমান্টিক কাব্য। এ কাব্যটি একাদশ শতাব্দীর সুলতান মাহমুদের সমসাময়িক কবি ফেরদৌসী কর্তৃক ‘ইউসুফ ওয়া জোলেখা’ অনুসরণে রচিত।
প্রশ্ন: বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের ৫ জন রোমান্টিক কবির নাম ও তাদের একটি করে গ্রন্থের নাম লিখুন। এ শ্রেণির কাব্যের বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: রচয়িতাসহ পাঁচটি রোমাঞ্চকর প্রণয়োপাখ্যান:
১. ইউসুফ-জোলেখা-শাহ্ মুহম্মদ সগীর; ২. লায়লী-মজনু- দৌলত উজীর বাহরাম খান; ৩. মুধমালতী-মুহম্মদ কবীর; ৪. পদ্মাবতী- আলাওল এবং ৫. সতীময়না-লোরচন্দ্রানী- দৌলত কাজী।
মূল কাব্যের লক্ষ্য অনেক ক্ষেত্রেই আধ্যাত্মপ্রেম হলেও বাংলা ভাষায় পরিবেশনকালে তা আধ্যাত্মিকতা থেকে মুক্তি পেয়েছে এবং তাতে মানবপ্রেমের বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়েছে। রোমান্টিক কথা ও কাহিনীর অসাধারণ ভা-ার আরবি-ফারসি সাহিত্যের প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণায় বাংলা সাহিত্যে এ ধারার সৃষ্টি।
প্রশ্ন: দৌলত উজির বাহরাম খান কোন শতাব্দীর কবি ছিলেন? তার সাহিত্য কর্মের পরিচয় দিন।
উত্তর: দৌলত উজির বাহরাম খান বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে ষোড়শ শতাব্দীর বিখ্যাত রোমান্টিক কবি। তাঁর রচিত দুটি কাব্য পাওয়া যায়-
১.     জঙ্গনামা- প্রথম কাব্য তবে এটি রোমান্টিক কাব্য নয় বরং যুদ্ধ কাব্য। যা মর্সিয়া সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত।
২.     লাইলী মজনু- এটি তাঁর রচিত রোমান্টিক কাব্য। এ কাব্যটি ত্রয়োদশ শতাব্দীর ফার্সি ভাষার কবি জামির দ্বারা রচিত ‘লাইলী ওয়া মজনু’ অনুসরণে রচিত। এ কাব্যের প্রধান চরিত্র হলো দুটি- ‘লাইলী ও মজনু’। এ কাব্যের প্রতিপাদ্য হচ্ছে আমির পুত্র কয়েস  এবং লাইলীর মধ্যেকার প্রেম। করুণ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ প্রেমের পরিসমাপ্তি ঘটে।
প্রশ্ন: ইফসুফ-জোলেখা কাব্য কে কে রচনা করেন?
উত্তর: ইফসুফ-জোলেখা কাব্য প্রথম রচনা করেছেন শাহ মুহম্মদ সগীর- পঞ্চদশ শতাব্দী, আব্দুল হাকিম- সপ্তদশ শতাব্দী, সাফাত উলাহ ও ফকির গরিবুল্লাহ- অষ্টাদশ শতাব্দী।
প্রশ্ন: আরাকান রাজসভায় যারা রোমান্টিক কাব্য রচনা করেন, তাঁদের পরিচয় লিখুন।
উত্তর: সপ্তদশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের বাহিরে রোমান্টিক কাব্য রচিত হয় সে জায়গাটি হয় আরাকান রাজসভা। সংস্কৃত ভাষায় একে রোমাং বা রসাঙ্গ রাজসভা বলা হয়েছে। এই স্থানটি বর্তমানে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের দক্ষিণ পূর্ব কোণে মায়ানমারে অবস্থিত। এখানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাজার অধীনে মুসলিম কবিরা রোমান্টিক কাব্য রচনা করেন। যা বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগে স্বতন্ত্র ধারা সূচনা করে। এখানে যারা সাহিত্য সাধনায় নিজেদের নিয়োজিত করেন তাদের মধ্যে অন্যতম মহাকবি আলাওল, কোরেশি মাগন ঠাকুর, দৌলত কাজী, মর্দন প্রভৃতি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন