Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সড়ক যাত্রা চুক্তি নিয়ে ভূটানের আপত্তিতে উদ্বিগ্ন ভারত বাংলাদেশ ও নেপাল

| প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ফাঁকা রাস্তা, অবাধ যাত্রা। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল পার নিশ্চিন্তে। আচমকা ঠোক্কর ভূটানের লেভেল ক্রসিংয়ের রেড সিগন্যালে। বাংলাদেশ-ভূটান-ইন্ডিয়া-নেপালের (বিবিআইএন) মোটরভেহিকেল চুক্তির পথ অবরোধে। ভূটান সংসদ সোংডুর উচ্চকক্ষে পেশ করা হয়েছিল অনুমোদনের জন্য। আলোচনার পর ভোটাভুটি। ২০ সদস্যের মধ্যে পক্ষে ভোট মাত্র দুই। বিপক্ষে চুক্তিটার ১৩, অনুপস্থিত ৫। কী হবে এখন! চুক্তি কার্যকরী করার আর কি কোনও রাস্তা আছে। না নেই। ভূটান ছাড়পত্র না দিলে চুক্তি অচল। চার দেশের নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগের রাস্তায় জগদ্দল পাথর। অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক বিকাশের সুলভ সড়ক বিশ বাঁও জলে। আপত্তির যুক্তি অদ্ভুত। সাংসদরা বলছেন, পাহাড়ি রাস্তায় দিবারাত্র হাজার হাজার ট্রাকের গর্জনে কান পাতা দায় হবে। মানুষ শান্তিতে ঘুমাতেও পারবে না। পোড়া ডিজেলের ধোঁয়ায় শরীরে বিষ ঢুকবে। বিকাশের কথা ভেবে দেশকে বিনাশের পথে নিয়ে যাওয়া যায় না।
পরিবেশ নিয়ে ভুটানের ভাবনা বেশি। তার কারণও আছে। বিশ্বের একমাত্র ‘কার্বন সিঙ্ক’ রাষ্ট্র ভুটান। ভুটান যত কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে ছাড়ে তার থেকে বেশি গ্রহণ করে। বাতাসের শুদ্ধতা বজায় থাকে। বিদ্যুৎ উৎপাদনেও সতর্ক। পানিবিদ্যুৎ ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারে না। উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ রফতানিও করে। রাজধানী থিম্পু যাতে অতিরিক্ত চাপে নাভিশ্বাস না তোলে তার জন্য প্রশাসনিক রাজধানী করা হয়েছে পারো ডংয়ে। ভুটানের পরিচয় ‘ল্যান্ড অব থান্ডার ড্রাগন’ নামে। যা চরিত্রের সঙ্গে খাপ খায় না। দেশটা খুবই শান্ত। কোলাহল থেকে মুক্তি পেতেই পর্যটকরা ছোটে সেখানে। কেন যাবে না। পূর্ব হিমালয়ের এমন জায়গা আর কোথায়। উত্তরে চীন, বাকি তিন দিকে ভারত। সুউচ্চ পর্বতমালা, উর্বর উপত্যকা, ঘন অরণ্যের অনন্য রূপ। শীর্ষ পর্বত শিখর খুলা কাংরি সকালের রোদে রক্তিম। আমো চু, ওয়াং চু, মাচু নদী বেশ তেজি। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম।
১৯১০-এ ইংরেজদের সঙ্গে ভুটানের যে চুক্তি হয় তাতে বিদেশ নীতি নিয়ন্ত্রিত হত ব্রিটিশ সরকারের ইচ্ছায়। ভারত স্বাধীন হয়ে ১৯৪৯-এ ভুটানের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি করে। সেখানে ভুটান স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের সুযোগ পায়। ২০০৭-এর চুক্তিতে ভুটানকে আরও ক্ষমতা দেওয়া হয়। ২০০৮-এর মার্চে প্রথম সংসদীয় নির্বাচনে গণতন্ত্রের রাস্তা প্রশস্ত করার প্রয়াস। ভুটানে মানুষ মাত্র সাড়ে সাত লাখ। তাদের দাবিয়ে রেখেছে দারিদ্র্য। তার থেকে তারা মুক্তির পথ খুঁজছে। সার্কের সদস্য হওয়ার পর প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমন্বয় বাড়িয়েছে। মোটরভেহিকেলস চুক্তি থেকে পিছিয়ে যাওয়ায় হতাশ অন্য সদস্যরা।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোগবে বিচক্ষণ রাজনীতিক। রাজা জিগমে খেসার নামসিয়ান ওয়াংচুকের সঙ্গে পরামর্শ করেই পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করেন। সার্কের স্বার্থেই মোটরভেহিকেলস চুক্তিটি অপরিহার্য। পরিবেশ বাঁচিয়ে যান চলাচলে বাধা থাকার কথা নয়। ভুটানের উন্নয়নের জন্য সেটা দরকার। যোগাযোগ না বাড়ালে অর্থনৈতিক বিকাশ কীভাবে সম্ভব! এই চুক্তিতে পাকিস্তানেরও থাকার কথা ছিল। থাকলে ভাল হত। প্রথমটায় এগিয়ে এসেও পরে পিছিয়েছে। চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণও দেখায়নি। ইসলামাবাদে সার্ক বৈঠক বাতিল হওয়ার পর পাকিস্তান আরও বিচ্ছিন্ন। রাজনীতি যদি উন্নয়নের পরিপন্থী হয় তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ভুটানের রাজনীতি সদর্থক। অর্থনৈতিক বিকাশের স্বার্থে নিশ্চয়ই তারা মোটরভেহিকেলস চুক্তি থেকে দূরে সরে থাকবে না। পুনর্বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। Ñসূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা



 

Show all comments
  • Sajjad Ben Zafar ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১১:৩৩ এএম says : 0
    আমাদের ক্ষতি হলেও ভুটানকে স্যালুট জানায়। কারণ ভুটান তাদের দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে বদ্ধ পরিকর।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ