Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আঘাতজনিত মানসিকচাপ ছেলে ও মেয়েদের মস্তিষ্কে ভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে

| প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : কোন ব্যক্তি নিজের জীবনের নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ এমন কোন দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়ার পর অনুরূপ ঘটনার মুখোমুখি হলে তার মাঝে পোস্ট ট্রমাটিক স্টেস ডিসঅর্ডার পিটিএসডি বা আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে আঘাতজনিত মানসিক চাপ ছেলে ও মেয়েদের মস্তিষ্কে ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে। মস্তিষ্ক স্ক্যানিংয়ের একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, আঘাতজনিত মানসিক চাপ কিশোর-কিশোরীদের মস্তিষ্কে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
গবেষণায় দেখা যায়, তরুণদের মধ্যে পিটিএসডিতে আক্রান্ত ছেলে ও মেয়েদের মস্তিষ্কের ইনসুলার একটি অংশে পৃথক পৃথক কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটায়। এই ইনসুলা দেহের সংকেতগুলোকে শনাক্ত করে আবেগ ও অনুভূতিকে প্রক্রিয়াকরণ বা বাছাই করে এবং ব্যক্তির অনুভূতি ও প্রতিক্রিয়াসহ মস্তিষ্কের অন্য আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহায়তা করে।
এই গবেষণার সিনিয়র বিশেষজ্ঞ স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিনের গবেষক, মনোরোগ ও আচরণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ভিক্টর ক্যারিওন এম.ডি. বলেন, দৃশ্যত আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপজনিত সমস্যা সৃষ্টিতে ইনসুলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি বলেন, সাইকোলজিক্যাল ট্রমায় আক্রান্ত ছেলে ও মেয়েদের মস্তিষ্কে যে পার্থক্যগুলো আমরা প্রত্যক্ষ করেছি তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এটি লিঙ্গ ভেদে আঘাতজনিত মানসিক চাপের লক্ষণগুলোর পার্থক্য ব্যাখ্যা করতে সহায়ক।
পিটিএসডি বা আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপজনিত সমস্যায় আক্রান্ত লোকেরা তার আঘাতের অনুরূপ ঘটনা প্রত্যক্ষ করলে চিন্তা ও অনুভূতিতে সে তার নিজের আঘাতকালীন অবস্থায় ফিরে যায়। তাই তাদের উচিত তার আঘাতের কথা মনে হয় এমন সব স্থান, মানুষ ও বিষয় পরিহার করা।
পিটিএসটিডিতে আক্রান্ত লোকেরা সামাজিক সংসর্গতা থেকে দূরে থাকা এবং ঘুম ও মনোরোগে ব্যাঘাত সৃষ্টিসহ আরো বেশ কিছু সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে, আঘাত প্রাপ্ত মেয়েরা-ছেলেদের চেয়ে বেশি পিটিএসডিতে আক্রান্ত হয়। তবে বিজ্ঞানীরা সে সময় এর কারণ নির্ধারণ করতে সক্ষম হননি।
সাম্প্রতিক নতুন পরীক্ষায় গবেষকরা ৯ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৬৯ জন শিশু-কিশোরের মস্তিষ্কে ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) স্ক্যানিং করে ৩০ জনের মধ্যে আঘাতের লক্ষণ দেখতে পান। যাদের মধ্যে ১৬ জন ছেলে ও ১৪ জন মেয়ে ছিল। অবশিষ্ট ২৯ জনের মধ্যে আঘাতজনিত মানসিক চাপ ছিল না। অর্থাৎ এরা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। এদের মধ্যে ছিল ১৪ জন ছেলে এবং ১৫ জন মেয়ে। পরীক্ষায় আঘাতের লক্ষণধারী অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫ জনের একবার, ২৫ জনের ২ কিংবা ততোধিকবার জটিল আঘাতের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
গবেষকরা বলেছেন, তারা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণকারী গ্রুপের মস্তিষ্কে কাঠামোগত কোন পরিবর্তন দেখতে পাননি। তবে আঘাতে আক্রান্ত ছেলে ও মেয়েদের মস্তিষ্কে এন্টিরিয়র সার্কুলার সালকাস (এসিএস) নামক একটি অংশে পার্থক্য দেখতে পেয়েছেন। এসিএস ইনসুলারই একটি অংশ। আঘাতজনিত মানসিকচাপে আক্রান্ত ছেলেদের মস্তিষ্কের এই অংশটির আকার ও উপরিভাগের আয়তন মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণকারী গ্রুপের ছেলেদের তুলনায় বেশ বড়। অপরদিকে ট্রমায় আক্রান্ত মেয়েদের এই অংশের আকার ও উপরিভাগের আয়তন মানসিকচাপ নিয়ন্ত্রিত গ্রুপের মেয়েদের তুলনায় বেশ ছোট।
গবেষণায় নেতৃত্বাদানকারী গবেষক এবং মনোরোগ ও আচরণ বিজ্ঞান বিভাগের ইনস্ট্রাক্টর পিএইচডি ডিগ্রিধারী মেগান ক্ল্যাবান্দে বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, আঘাতপ্রাপ্ত যুবদের নিয়ে যারা কাজ করেন তারা লৈঙ্গিক পার্থক্যের বিষয়টি বিবেচনা করেন। তিনি বলেন, গবেষণায় তাদের প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এটা এ কারণে সম্ভব যে, ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে ট্রমায় ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং তাদের জন্য এই লক্ষণগুলো ভিন্ন ভিন্ন চিকিৎসা-উদ্যোগ গ্রহণে সহায়ক হতে পারে।
শিশু ও কিশোর বয়সে ইনসুলা স্বাভাবিকভাবে পরিবর্তন হয়। বয়স বৃদ্ধির সাথে ইনসুলা আকারে ছোট হতে থাকে। ক্ল্যাবান্দে বলেন, প্রাপ্ত তথ্যে বোঝা যায়, আঘাতজনিত মানসিকচাপ পিটিএসডিতে আক্রান্ত মেয়েদের ইনসুলা’র করটিক্যাল এইজিং ত্বরান্বিত করে।
তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চমাত্রায় মানসিক চাপে মেয়েরা অকালে সাবালিকা হয়ে যেতে পারে।
গবেষকরা আরো বলেছেন, তাদের এই গবেষণা বিজ্ঞানীদের জন্য ট্রমা লিঙ্গভেদে আবেগ-অনুভূতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তা নিরুপনে সহায়ক হতে পারে।
ডিপ্রেশন অ্যান্ড অ্যাংজাইটি সাময়িকীর এক নিবন্ধে গবেষকরা বলেছেন, লিঙ্গভেদে মস্তিষ্কে অনুভূতি প্রক্রিয়াকরণের কোষগুলোকে বুঝতে পারলে বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের জন্য বিশেষ লিঙ্গের ট্রমা ও আবেগ অনুভূতি সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসা সেবা গড়ে তুলতে সহজ হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ