Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

প্রতিবারই গঠন হয় তদন্ত কমিটি আলোর মুখ দেখে না প্রতিবেদন

বেনাপোল বন্দরে অগ্নিকান্ড

| প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বেনাপোল অফিস : বেনাপোল বন্দরে কয়েক দফা ভয়াবহ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত আমদানিকারকরা আজো কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। প্রতিবার আগুন লাগার পরপরই গঠন করা হয় ৩টি করে তদন্ত কমিটি, কিন্তু কোনো তদন্ত রিপোর্টই আলোর মুখ দেখেনি।
বেনাপোল বন্দরের ২৩ নম্বর শেডে সর্বশেষ আগুন লাগে গত ২ অক্টোবর। দুই মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও আগুন লাগার কারণ নির্ণয়ে চারটি তদন্ত কমিটি হলেও আলোর মুখ দেখেনি কোনো কমিটির রিপোর্ট। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছিলেন নৌপরিবহনমন্ত্রী। তবে দেড় মাসেও কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি আমদানিকারকরা। তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়ায় অনেক আমদানিকারক বীমা কোম্পানির কাছ থেকেও ক্ষতিপূরণ নিতে পারছে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেনাপোল বন্দর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ নিয়ে মোট সাত বার আগুন লাগলো। এতে আমদানি করা প্রায় ৬০০ কোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায় বলে বন্দর ব্যবহারকারীদের দাবি।
অভিযোগ রয়েছে, শেডে রক্ষিত পণ্যের বীমা সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে তা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয় না। বন্দরে রক্ষিত কোটি কোটি টাকার আমদানি করা মালামাল চুরির পর তা বুঝিয়ে দিতে না পারায় চুরির ঘটনা ধামাচাপা দিতে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়ে থাকে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ পাত্তা দেয়নি কখনো।
আমদানিকৃত মালামাল বন্দরে সংরক্ষণের জন্য আমদানিকারককে মোটা অংকের গুদাম ভাড়া, লেবার চার্জসহ ইকুইপমেন্ট চার্জ পরিশোধ করতে হয়। তাছাড়াও বন্দরের সেবার ভ্যাটের টাকাও দিতে হয় আমদানিকারককে। প্রতি বছরে বাড়ানো হয় মাসুল। মালামাল যতদিন বন্দরে সংরক্ষিত থাকবে তার সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব বন্দর কর্তৃপক্ষকেই বহন করার কথা। কিন্তু বেনাপোলে তা হয় না।
অভিযোগ রয়েছে, শত অনিয়ম, দুর্নীতি, দায়িত্বহীনতা ভর করেছে বন্দরে। বন্দরের দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোনো ভূমিকা দৃশ্যমান নয়। নীতিনির্ধারক রাজনীতিকদেরও এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। বড় বড় ব্যবসায়ী সংগঠনও এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা নেন না। বন্দর সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এ দিকে মনোনিবেশ করলে পরিস্থিতির উন্নতি হতো বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
বন্দরে ২ অক্টোবরের আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি ৫ অক্টোবর স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। তারাও আগুন লাগার জন্য প্রধানত বন্দর কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন। এছাড়া নাশকতার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়নি কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রধান বলেছিলেন, ‘আলাদা শেড থাকার পরও কেন অন্য শেডে তুলার সঙ্গে কেমিকেল রাখা হলো তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আমদানিকৃত মালামাল বন্দরে রাখার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে অনুমতি দেয় শুল্ক কর্তৃপক্ষ। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব মালামালের বিমা করে না। কী কারণে বিমা করা হয় না, তা এক রহস্য। বন্দর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় আমদানিকারকরা তাদের আমদানি করা পণ্যের শুধুমাত্র ট্রাকের ওপর কোনো ক্ষতি হলে তার ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকেন বিমা কোম্পানির কাছ থেকে। বিমা কোম্পানিগুলো সেভাবেই বিমা করে থাকেন আমদানিকৃত পণ্যের ওপর। বন্দরের পণ্যাগারে পণ্যের ক্ষতিপূরণ ব্যবসায়ীরা পাবেন না এমন শর্তে শুল্ক কর্তৃপক্ষ বন্দরে পণ্য রাখার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে কীভাবে অনুমতি দেয়, সে প্রশ্ন ওঠে প্রতিবার আগুন লাগার পর। কিন্তু উত্তর পাওয়া যায় না কখনো।
বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠন বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ‘বার বার বন্দরের কর্মকর্তাদের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলেছি। তারা বিষয়টি আমলে নেয়নি। পণ্যজটের জন্য আরো গুদাম বা শেড নির্মাণের কথা বলা হলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ তাতে কান দিচ্ছে না। এ বন্দরের আয় নিয়ে দেশের অন্যান্য বন্দরের উন্নয়ন করা হচ্ছে। অথচ বেনাপোল বন্দর উন্নয়নে কর্তৃপক্ষকে খুব একটা উদ্যোগী হতে দেখা যায় না।’
তিনি বার বার আগুন লাগাকে ‘পরিকল্পিত’ আখ্যায়িত করে বলেন, ‘কোটি কোটি টাকার পণ্য পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমদানিকারকরা কোনো ক্ষতিপূরণ পান না। অনেক ব্যবসায়ী পথে বসে গেছেন। তাদের সহানূভূতিও দেয় না বন্দর কর্তৃপক্ষ।’
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক নিতাইচন্দ্র সেন জানান, এখনো তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়া যায়নি। তবে বন্দর আইনে আমদানিকারকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা না থাকায় সম্প্রতি ২৩ নম্বর শেডে আগুন লেগে ক্ষতিগ্রস্ত আমদানিকারকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা সম্ভব নয়। তবে আমদানিকারকরা ক্ষতিপূরণ না পেলে আদালতে মামলা করার কথা চিন্তা ভাবনা করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ