Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আমেরিকার পশ্চাৎভূমির দেশগুলোর সাথে দ্রুত সম্পর্ক গড়ছে চীন

| প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ব্লুমবার্গ : ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন লাতিন আমেরিকার সাথে বাণিজ্য চুক্তি বাতিল ও ঐ অঞ্চল থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে চলেছেন, তখন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আমেরিকার পশ্চাৎভূমির দেশগুলোর সাথে দ্রুত সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন।
শি গত সপ্তাহে লাতিন আমেরিকা সফর করেন। তিনি ইকুয়েডরের সাথে এক হাজার কোটি ডলারের একটি জ¦ালানি ও অবকাঠামো চুক্তি করেছেন। ইকুয়েডর ও চিলিকে সর্বোচ্চ কূটনৈতিক মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি পেরুর কংগ্রেসকে বলেছেন, দু’দেশের সম্পর্ক এক নতুন ঐতিহাসিক সূচনালগ্নে দাঁড়িয়ে আছে। লিমাতে তার দুর্বল প্রতিপক্ষ বারাক ওবামার সাথে এক সম্মেলনে যোগদানকারী শি চীনকে এ অঞ্চলের সবচেয়ে আগ্রহী বাণিজ্য প্রবক্তা হিসেবে তুলে ধরেন।
চীনা নেতার সফর থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ট্রাম্পের বিস্ময়কর বিজয় তার ‘আমেরিকা প্রথম’ সেøাগানসহ রিপাবলিকানদের ক্ষমতাগ্রহণের আগেই ভূরাজনৈতিক অবস্থায় কীভাবে পরিবর্তনের সূচনা করেছে। নির্বাচনের পূর্ব  পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী মার্কিন পরিম-লে কীভাবে জায়গা করে নেয়া যায়, সে জন্য ১৫ বছর ধরে চেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছে চীন। যদিও তার পণ্যের চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে ও বামপন্থী রাজনৈতিক মিত্ররা এ অঞ্চলে বিপর্যয়ের সম্মুখীন।
এখন চীন নিজেকে লাতিন আমেরিকার প্রধান প্রবৃদ্ধি চালক হিসেবে দেখছে এবং এ অঞ্চলের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করে যাবার তার সুযোগ বাড়ছে। ইতোমধ্যে ট্রাম্প মেক্সিকোর মতো দেশগুলোর অভিবাসীদের বিরুদ্ধে দমন ব্যবস্থার এবং ১২ জাতি ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারিত্ব মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের শপথ করেছেন। চিলি, মেক্সিকো ও পেরু এ চুক্তির আওতাভুক্ত।
‘দি চায়না ট্রায়াঙ্গল : লাতিন আমেরিকা’স চায়না বুম অ্যান্ড দি ফেট অব দি ওয়াশিংটন কনসেনসাস ’ গ্রন্থের লেখক কেভিন গ্যালাঘার বলেন, ট্রেন স্টেশন ছেড়ে চলে গেছে। চীন গত সপ্তাহে যেমন দেখিয়েছে ট্রাম্পের বিজয়ের ধাক্কা তাকে লাতিন আমেরিকার সাথে সম্পর্ক দ্রুত জোরদার করার একটি অধ্যায় উপহার দিয়েছে। যার ফলে সে আরো বেশি অর্থসহায়তাসহ অধিকতর ও উন্নত বাণিজ্যচুক্তি করতে পারে।
বোস্টন বিশ^বিদ্যালয়ের বৈশি^ক উন্নয়ন নীতি বিষয়ের অধ্যাপক গ্যালাঘার বলেন, যদি এ অঞ্চলের সরকারগুলো আসন্ন মার্কিন প্রশাসনের সাথে সুবিধা লাভ করতে চায় তাহলে চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন হবে খেলার স্মার্ট কার্ড।
২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এ অঞ্চলে এটা ছিল প্রেসিডেন্ট শি’র তৃতীয় সফর। সপ্তাহব্যাপী সফরে তিনি কৃষি, জ¦ালানি, অবকাঠামো, প্রযুক্তি, পর্যটন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ৪০টিরও বেশি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তিনি চিলি ও ইকুয়েডরকে ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারত্বের মর্যাদায় উন্নীত করেন এবং চিলি ও পেরুর সাথে বাণিজ্য চুক্তি  সম্প্রসারিত করেন। পেরু তাকে তাকে কংগ্রেসের মেডেল অব অনারে ভূষিত করে।
পেরুর প্রেসিডেন্ট পেদ্রো পাবলো কুজিনস্কি সেপ্টেম্বরে তার প্রথম বিদেশ সফরে চীনকে বেছে নেন। তিনি শি’কে বলেন, তিনি সংরক্ষণবাদের বিরুদ্ধে দলবদ্ধ হতে চান। চীন এশীয়-প্রশান্ত অঞ্চলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশ , সাথে সাথে তা পেরুর বৃহত্তম রফতানি বাজার। সভার আগে চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থার সাথে এক সাক্ষাতকারে কুজিনস্কি বলেন, চীন বিশে^র অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিনে পরিণত হয়েছে।
লাতিন আমেরিকার সাথে গত দশকে চীনের বাণিজ্য ২০ গুণেরও বেশি বেড়েছে। চীনের সরকারি সিনহুয়া বর্তা সংস্থা জানায়, গত বছর এ বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৩৭ বিলিয়ন ডলার। পক্ষান্তরে এ অঞ্চলের সাথে মার্কিন বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৬৮ বিলিয়ন ডলার। গত বছর বেইজিংয়ে এক সভায় চীন ও এ অঞ্চলের মন্ত্রীরা এক দশকের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৫০০ বিলিয়ন ডলারে বৃদ্ধি করতে সম্মত হন।
কাউন্সিল অব আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট এরিক ফ্রান্সওয়ার্থ লাতিন আমেরিকার প্রতি চীন ও আসন্ন মার্কিন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গিকে ভীষণ বৈপরীত্যমূলক বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ধারণা হচ্ছে এ রকম যে আমরা পথ পরিবর্তন করেছি এবং এই নীতিতে তা প্রতিফলিত করতে শুরু করেছে।    
এখনো লাতিন আমেরিকার প্রতি চীনের যে গুরুত্ব তা হচ্ছেÑ কাঁচামালের উৎস হিসেবে যার মধ্যে রয়েছে লৌহ আকরিক, তেল ও সয়াবিন। তারা এ অঞ্চলে শিল্প উন্নয়নে অল্পই করেছে। এ অঞ্চলে বেইজিংয়ের অন্যতম প্রধান মিত্র ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ঘিরে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অশান্তি চীনকে এ অঞ্চলে তার সম্পর্কের বিস্তারের প্রয়োজনকে প্রদর্শন করেছে।  
‘কার্নেগি-তিনঘুয়া সেন্টার ফর গ্লোবাল পলিসি’স চায়না অ্যান্ড দি ডেভলপিং প্রোগ্রাম ইন বেইজিং’ এর প্রধান ম্যাট ফারশেন বলেন, চীন-লাতিন আমেরিকা সম্পর্কের পুনর্বিন্যাস এখন দীর্ঘ প্রত্যাশিত বিষয়। তিনি বলেন, এ পুনর্বিন্যাস হতে হবে এ পর্যায়ে লাতিন আমেরিকা ও চীনা উন্নয়নের মধ্যে কি ধরনের বাণিজ্য, বিনিয়োগ, আর্থিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রকৃত অবদান রাখবে তার আসল, সৎ ও সম্ভবত জটিল সংলাপের উপর।
গত সপ্তাহে এ অঞ্চল বিষয়ে গত সপ্তাহে প্রকাশিত চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নীতি পত্রে সার্ভিস, ই-কমার্স ও উচ্চ-মূল্যের পণ্য বিষয়ে বৃহত্তর বাণিজ্যের আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয়, চীনা কোম্পানিগুলোর তাদের স্বতন্ত্র উন্নয়ন সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তাদের কর্মকা-কে স্থানীয় প্রয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত করা উচিত। রিপোর্টে পারস্পরিক সমঝোতা ও আস্থা বৃদ্ধি করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের মধ্যে বৃহত্তর যোগাযোগের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
খাদ্য ও স্বাস্থ্যসামগ্রী বিষয়ে বিশেষজ্ঞ লংরান টি গ্রুপ কোম্পানির একীকরণ ও অধিগ্রহণ প্রধান রান জিয়াও লিমায় এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা শীর্ষ বেঠকের ফাঁকে ট্রাম্প ও ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে স্থিতিশীলতার প্রয়োজনের কথা বলেন।
জিয়াও বলেন, ট্রাম্পের ব্যাপারে আমরা সবাই কি চাই তা অনুমান করতে পারি। তিনি এ অঞ্চলের কৃষি চুক্তির বিষয় দেখছেন, বিশেষ করে পেরুর সুপার ফুড বিষয়ে। তিনি বলেন, স্থিতিশীলতা হচ্ছে প্রধান প্রশ্ন।
শি কৃষিসংক্রান্ত ধারণার উপর গুরুত্ব দেন, অন্য দিকে এপেকের প্রতি চীনের অঙ্গীকার ব্যাখ্যা করেন। তিনি লাতিন আমেরিকার ফসল মিষ্টি আলুর প্রতি তার অনুরাগের কথা উল্লেখ করেন।
১৯ নভেম্বর এক বক্তৃতায় বলেন, একটি মিষ্টি আলুর মিষ্টত্ব সবার জানা হয়ে যেতে পারে, তারা সবাই তা জন্মায়। তিনি বলেন, এশিয়া-প্যাসিফিকে চীনের শিকড় রয়েছে। চীন এর উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য ভূমিকা পালন করে যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ