Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘ডেথ পেনাল্টি’র কারণে দেশে এসিড নিক্ষেপ অপরাধ কমেছে : নাছিমা বেগম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০২২, ১২:০১ এএম

দেশে মানবাধিকার লংঘন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের বিষয় সুরাহা করতে সরকারকে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেত যে পরামর্শ দিয়েছেন, এ ব্যাপারে একমত বিশিষ্টজনরা।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের বক্তব্য নিয়ে মতামত প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম, মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান খান ও মানবাধিকারকর্মী খুশি কবীর বক্তব্য দিয়েছেন।
গুম-খুনের ব্যাপারে খুশি কবীর ও নাছিমা বেগম স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত সংস্থা গঠনে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের প্রস্তাবের মধ্যে যৌক্তিক মনে করছেন। তবে মিশেল ব্যাশেলেত গুম-খুনের যে অভিযোগ তুলেছেন সে ব্যাপারগুলো এখন ঘটছে না মন্তব্য করে মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান খান বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে সরকার নানা চাপে আছে। তাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে জোর দিয়ে কিছু বলা উচিত ছিল মিশেল ব্যাশেলেতের।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেন, তিনি (মিশেল ব্যাশেলেত) আমাদের এখানের ডেথ প্যানাল্টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্তু ডেথ প্যানাল্টি (মৃত্যুদণ্ড) থাকার কারণে এসিড নিক্ষেপের মতো অপরাধের ঘটনা অনেকাংশেই কমেছে। এখন ধর্ষণের বিরুদ্ধে জনদাবির মুখে ডেথ প্যানাল্টি করা হয়েছে। এসব বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের কিছু তফাত আছে।
মানবাধিকারকর্মী খুশি কবীর বলেন, মিশেল ব্যাশেলেত যে দাবিগুলো করেছেন তার যৌক্তিকতা আছে। মানবাধিকার কমিশনের হাইকমিশনার হিসেবে উনি তো ওনার বক্তব্য দেবেন। এখানে এসে আলাপ করে যা যা শুনেছেন তার আলোকেই কথা বলেছেন। আমি মনে করি তিনি সচেতনভাবেই তার বক্তব্য দিয়েছেন। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের এসব বিষয় প্রতিপালনের দায় রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জাতিসংঘ যতগুলো ফর্মে কাজ করে আমরা সবগুলোর সঙ্গেই জড়িত। আমরা পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতেই কাজ করি।
অধ্যাপক মিজানুর রহমান খান বলেন, তিনি (মিশেল) পরামর্শ দিতেই পারেন। কিন্তু তার যে প্রধান কাজ ছিল তিনি শরণার্থী বিষয়ে কথা বলবেন, সেই বিষয়ে কথা না বলে তিনি উল্টো যে পরামর্শ দিলেন তাতে আশাহত হলাম। আমরা আশা করেছিলাম রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার কাছ থেকে কোনো সুখবর শোনা যাবে। সেটা তো গেলই না বরং আরও দুই তিন বছর তাদের বাংলাদেশে রাখার প্রস্তাব করলেন। মিশেলের নিরপেক্ষ তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠনের যে কথা বলছেন, সেটা না বলে তিনি বলতে পারতেন আমাদের যে সংস্থাগুলো আছে, মানবাধিকার কমিশন, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ যেন আরো শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমান সময়ে দেশে গুম-খুন হচ্ছে না দাবি করে এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, যখন গুম খুনের প্রসঙ্গে কথা বলা হচ্ছে তখন দেশ গুম-খুন হচ্ছে না। এর মানে তার সফরকেই তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেন, তিনি (মিশেল ব্যাশেলেত) আমাদের এখানের ডেথ প্যানাল্টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্তু ডেথ প্যানাল্টি থাকার কারণে এসিড নিক্ষেপ অনেকাংশেই কমেছে। এখন ধর্ষণের বিরুদ্ধে জনদাবির মুখে ডেথ প্যানাল্টি করা হয়েছে। এসব বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের কিছু তফাত আছে।
নিরপেক্ষ তদন্ত সংস্থার বিষয়ে মিশেল ব্যাশেলেত যে দাবি করেছেন তার দাবির প্রসঙ্গে সহমত পোষণ করেন নাছিমা বেগম। সেই সঙ্গে তিনি মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশারী করার মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমরা আইনশৃংখলা বাহিনী বা অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে মানবাধিকার লংঘন করলে জবাবদিহির আওতায় আনতে পারি না। যদি আমাদের সেই অধিকার দেওয়া হয় আমরা আরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারব।
গত ১৪ আগস্ট চার দিনের সফরে ঢাকায় আসেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেত। সফরের প্রথম দিন গত রোববার আইনমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। সোমবার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, মানবাধিকারকর্মী। মঙ্গলবার তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান। আর সফরের বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ