Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দৃষ্টি এখন নারায়ণগঞ্জে

| প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তারেক সালমান : দেশের রাজনীতির দৃষ্টি এখন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (এনসিসি) নির্বাচনের দিকে। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ফলে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের এ নির্বাচনটা আর দশটা স্থানীয় নির্বাচনের মতো সহজ হবে না। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচন দেশের ইতিহাসে প্রথম দলীয় প্রতীকে সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এখানে জোরালো লড়াই হবে নৌকা এবং ধানের শীষের মধ্যে। সদ্য সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তার সঙ্গে লড়াই হবে বিএনপির প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে এটা শেষ সিটি নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই নানাভাবে বিতর্কিত। কমিশনের প্রতি সবার আস্থা সংকট চরমে। তাই এ নির্বাচন তাদের জন্যও এক অগ্নিপরীক্ষা। আগামী ২২ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গত ২৪ নভেম্বর প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। মেয়র পদে ৯ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৮ এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৭৫ জন মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াত আইভী, বিএনপির এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, ওয়ার্কার্স পার্টির এডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, ইসলামী আন্দোলনের মুফতি মাসুম বিল্লাহ, জাসদের মোসলেম উদ্দীন, এলডিপি’র কামাল প্রধান, কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস, জাপা’র মেজবাহউদ্দীন ভুলু এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সুলতান মাহমুদ। অবশ্য বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট নিজেদের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিসিতে এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান জোটের প্রার্থী। তাই এলডিপি ও কল্যাণ পার্টির মেয়র প্রার্থীরা মূলত আর নির্বাচনে নেই।   
এদিকে, নিজেদের মেয়াদকালের সিংহভাগ সময়ই সিদ্ধান্তহীনতা ও পক্ষপাতমূলক কাজের মাধ্যমে নানান বিতর্ক ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। নিজেদের বিতর্কিত ভূমিকার জন্য মেয়াদের প্রায় শুরু থেকেই সাংবিধানিক এই সংস্থাটি আস্থা হারিয়ে ফেলে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের। তাই মেয়াদ শেষের শেষ নির্বাচনে অন্তত নিজেদের ক্ষয়ে যাওয়া ইমেজ কিছুটা ফিরে পেতে ইসি নিরপেক্ষতার দিকে হাঁটবে বলে অনেকে মনে করছেন। আর সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে সংক্ষুব্ধ প্রার্থীদের অভিযোগ নিষ্পত্তি না করে উপদেশ দেয়ার কর্মকা-ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) ৫ কমিশনার আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে কমিশন তাদের নৈতিকতা হারিয়েছে বলেও অভিমত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, এনসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে ৯ জনপ্রার্থী হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রতিপক্ষ বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে। দুই দলের প্রার্থী মনোনয়নে অনেক কেন্দ্রীয় নেতার ঘাম ঝরাতে হয়েছে। দলের স্থানীয় পর্যায়ের দীর্ঘদিনের কোন্দল মিটিয়ে কাক্সিক্ষত সাফল্য পেতে ইতোমধ্যেই স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে ডেকে আনেন দলীয় প্রার্থী আইভী ও তার প্রবল প্রতিপক্ষ সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে। তাদের মধ্যেকার দীর্ঘদিনের বিরোধ আপাতত মিটিয়েও দেন তিনি। মান-অভিমান ও দ্বন্দ্ব ভুলে নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে তিনি সবাইকে নির্দেশ দেন।
অপরদিকে, বিএনপিধানের শীষের মেয়র পদে এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের মনোনয়ন পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান ‘বিতর্কিত ও মেরুদ-হীন একপাক্ষিক’ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের বিষয়ে নিজের অনীহার কথা প্রকাশ করেন তৈমুর। তার অনীহার কারণে শেষ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ বারের সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির নেতা এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। নির্বাচনে অংশ নিলেও এ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে বিএনপি শুরু থেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে আসছে। অবশ্য গণতন্ত্র রক্ষায় প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে হলেও শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন খান। তিনি বলেছেন, নৌকার প্রতি নয়, মানুষের আস্থা এখন ধানের শীষের প্রতি। নির্বাচনকে সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ করতে তিনি ও তার দল বিএনপি সেনা মোতায়েনের দাবি তুলেছেন।
অন্যদিকে, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর আওয়ামী লীগের প্রার্থী আইভী সেনা মোতায়েনে বিএনপির দাবির বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করে বলেন, সেনা মোতায়েনের কোনো প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি না। লাখো জনতাই আমার সেনাবাহিনী। পরে অবশ্য তিনি সেনা মোতায়েনের বিষয়ে নিজের সুর নরম করে বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারে।  
এনসিসি নির্বাচনে দুই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী উভয়ই জয়ী হবেন বলে যার যার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই কোন্দলে আক্রান্ত। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে কোন্দল বেশি। দলের হাইকমান্ডের হস্তক্ষেপে এই দ্বন্দ্ব না মিটে দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে বলেই সাধারণের ধারণা। সে কারণে এনসিসি নির্বাচন আদৌ শান্তিপূর্ণ ও সহিংসতামুক্ত থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে আশংকা রয়েছে। অতীতে যত নির্বাচন হয়েছে প্রায় সব জায়গায় কম বেশি সহিংস ঘটনা ঘটেছে। ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ভোট ডাকাতি, ভোটের বাক্স ছিনতাই, ব্যালট পেপারে জোর করে সিল মারা, প্রতিপক্ষ প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে অতীতে। বিরোধীদলের আরও অভিযোগ পুলিশ ও সরকারের প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে পক্ষপাতিত্ব করে থাকে। বর্তমান ইসির আমলে অতীতের প্রায় সব নির্বাচনেই এমন চিত্র দেখা যাওয়ায় দলীয় প্রতীকের এনসিসি নির্বাচন সুষ্ঠু হয় কিনা তা নিয়ে সন্দেহ বিরোধী দলের মধ্যে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। দলটির বক্তব্য ছিল, তারা  দলীয় সরকারের অধীনে ও মেরুদ-হীন বর্তমান ইসির অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। কিন্তু নানা কারণে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে উপজেলা, পৌরসভা ও বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও অংশ নেয় বিএনপি। সর্বশেষ এনসিসি নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে দলটি।  এই নির্বাচনে অংশ নেয়ায় মনে করা হচ্ছে আগামীতেও নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার মানসিকতা বিএনপির মধ্যে তৈরি হয়েছে। এটা দেশের জন্য গণতন্ত্রের জন্য একটি শুভ লক্ষণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। নারায়ণগঞ্জের সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ, নির্বাচনী প্রচারণা বাধাহীন ও  ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারলে প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের জয় নিশ্চিত হবে। বর্তমান সরকারের অধীনে মানুষ অবাধে ভোট দিতে পারলে সরকারের প্রতিও জনগণের আস্থা বেড়ে যাবে। এতে সরকারের সুনামও বাড়বে। জনগণ ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারলে গণতন্ত্র যেমন সুসংহত হবে তেমনি উন্নয়নের গতিও আরও বেগবান হবে বলেই সাধারণের ধারণা।



 

Show all comments
  • রুবেল ২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৩:১১ পিএম says : 0
    ভোটাররা কি তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে?
    Total Reply(0) Reply
  • কাওসার ২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৪:২৬ পিএম says : 0
    সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি জিতবে
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Rahman ২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৪:৪২ পিএম says : 0
    I think IV will win in the election
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নারায়ণগঞ্জ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ