Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রাজীবপুরে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ৩ শতাধিক পরিবার গৃহহীন

| প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম : জেলার রাজীবপুর উপজেলার নয়াচর বাজার এলাকা ও কোদালকাটি বাজার এলাকায় অসময়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে দু’টি এলাকায় প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার তাদের ভিটেমাটি হারিয়ে পথে বসেছে।
ভাঙনের শিকার মানুষজন জানান, নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে দু’টি এলাকায় আকস্মিক ভাঙন শুরু হয়। ধীরে ধীরে ভাঙ্গতে থাকায় মধ্য নভেম্বরে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। ভাঙন দেখে এলাকার অনেকেই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যায়। অসময়ে যে হারে ভাঙছে তাতে বাজারসহ ওই এলাকার বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি বাড়ি-ঘর বিলীন হয়ে হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এলাকাবাসী ভাঙন প্রতিরোধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করলেও এলাকাটি রক্ষায় সরকারি কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
সরেজমিনে ভাঙনকবলিত মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের নয়াচর বাজার এলাকা ও কোদালকাটি ইউনিয়নের কোদালকাটি বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নয়াচর বাজার এলাকার প্রায় তিন কিলোমিটার ও কোদালকাটি বাজার এলাকার ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ভয়াবহ ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, দিয়ারারচর, সবুজপাড়া, গোয়ালপাড়া, বাজারপাড়া। এদিকে ভাঙনের মুখে পড়েছে, দিয়ারারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
স্থানীয় বাসিন্দা চাঁন মিয়া বলেন, ‘মরার নদী আমগর ফকির কইরা দিল। শেষ সম্বল বাড়ির ভিটা তাও নদীত চইলা গেল। পোলাপান নিয়া এহন মাইনসের জায়গা আছি।’ একই এলাকার হাফিজা বেওয়া বলেন, ‘থাওনের (থাকার ঘর) মতো আমার এডা ঘর ছিল এহন আর নাই। এই নদে আমি ১৫ বার ভাঙ্গনের শিকার হয়েছি। যেডাই ঘর তুলি নদীতে  ভাইঙা যায় সেডাই।’ ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে গেছে আতোয়ার হোসেন, ইয়াছিন আলী, সাজু মিয়া, আব্দুর রহীম, নীলকান্ত, আছিয়া বেগম ও ফাতেমা বেগমের মতো প্রায় ২শ’ পরিবার।
রাজীবপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও নয়াচর সবুজপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বিলকিস খাতুন জানান, অর্ধশত বছরের পুরাতন নয়াচর বাজারের অর্ধেক অংশ এরই মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদ গিলে খেয়েছে। বাকি অংশ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এই মুহূর্তে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগ না নিলে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে এলাকার মানুষজন। কেননা মাত্র ৩ সপ্তাহের ব্যবধানে ৬ গ্রামের ২শ’ পরিবারের ঘর-বাড়ি নদীতে গেছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে আরো অসংখ্য পরিবার। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা। গত ১৭ নভেম্বর ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন প্রতিরোধে নদের কিনারায় নয়াচর এলাকাবাসী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। কর্মসূচিতে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। মানববন্ধন কর্মসূচিতে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিস খাতুন, ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি আব্দুস সালাম তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাবী সরকার, ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান, সুরুজ্জামান ও নুরুন্নবী।
অন্যদিকে কোদালকাটি ইউনিয়নের বাজার পাড়া, সাজাই, সাজাই হাটুদেওয়ানী পাড়া, মধ্য সাজাই, কারিগরপাড়ায়সহ ২ কিলোমিটার জুড়ে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এখানেও ২শ’ পরিবারের মানুষ ঘর-বাড়ি হারিয়ে ভূমিহীনে পরিণত হয়েছে। কোদালকাটি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর ছক্কু জানান, ভাঙ্গনের শিকার মানুষগুলো দিনমজুর হওয়ার কারণে তাদের মাঝে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। যে হারে ভাঙছে তা প্রতিরোধ করা না গেলে কোদালকাটি নামের যে ইউনিয়ন ছিল তা ভবিষ্যতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ভাঙনকবলিত এলাকায় সাংবাদিক ঢুকতেই ঘর-বাড়ি হারানো মানুষজনের যেন আক্ষেপের শেষ ছিল না। তাদের কথা সরকার ভাঙনের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে বাপ-দাদার বসত ভিটায় থাকার ব্যবস্থা করবে এটাই আমরা চাই। এতো ভাঙনের মধ্যেও সরকারের কোনো মন্ত্রী এমপি আমাদের দুরবস্থা দেখতে আসে না।
রাজীবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিউল আলম জানান, নয়াচর আর কোদালকাটিতে নদী ভাঙনের বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা সমন্বয় সভায় নদী ভাঙনের বিষয় এবং প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার বিষয়টি কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রাজীবপুরে নদের ভাঙন প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে কিনাÑ এমন বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, নয়াচর বাজার এলাকায় আমরা এরই মধ্যে বালির বস্তা ও জিও ব্যাগ ফেলেছি। এছাড়া সাড়ে ৭ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আমরা একটা প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছি। প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ পাওয়া গেলে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ