পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার : নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে ঘিরে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ঐক্যের আশার আলো দেখছিলেন। কিন্তু ঘটেছে তার উল্টোটা। দু’দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে এখন স্নায়ু যুদ্ধ। আর এ স্নায়ু যুদ্ধ সামাল দিতে দু’বড় দল অওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেত্রীদ্বয় পেরেশান।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ড. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমানের সঙ্গে ক্রমেই দ্বন্দ্ব বেড়ে যাওয়ায় নেতাকর্মীরা এখন দিশেহারা। ব্যক্তি ইমেজ থাকায় সাধারণ মানুষ ও তৃণমূলের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আইভীর পক্ষে থাকলেও শামীম ওসমান বলয়ের নেতাকর্মীদের ধোয়াশা অবস্থানের কারণে ভোটাররা শঙ্কায় ভুগছেন। আইভী না থাকায় এখনো নৌকার পক্ষে মাঠে নামেননি তারা। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন- শামীম ওসমান কি আসলেই আইভীর পক্ষে কাজ করবেন?
এদিকে, সেভেন মার্ডার মামলার আইনজীবী হওয়ার বদৌলতে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেনের আদালত পাড়ায় পরিচিতি থাকলেও নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় লোক না হওয়ার কারণে ভোটের ময়দানে তেমন পরিচিতি নেই বলে দাবী স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের। অন্যদিকে সাখাওয়াত হোসেনের অতীত কর্মকা-ের কারণে বিএনপির একটি বড় অংশ ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ। বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী এখনো তার পক্ষে মাঠে নামেননি। জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের কোন্দল তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের হতাশ করে তুলছে।
এই দ্বন্দ্ব মিটিয়ে বিবাদমান নেতাদের ঐক্যবদ্ধ করতে বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ নেতাদের সাথে একের পর এক বৈঠক করে চলেছেন। দলের প্রার্থী ঘোষণার দিন দলের চেয়ারপারসন বেগম জিয়া নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশ্যে সকল ভেদাভেদ ভুলে ধানের শীষ প্রতিকের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসছে অথচ জেলার শীর্ষ নেতাদের ভোট ময়দানে দেখা না যাওয়ায় নেত্রী চরম ক্ষুব্ধ হয়ে পুনরায় জেলার শীর্ষ নেতাদের গত মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) রাতে গুলশান কার্যালয়ে তলব করে নাসিক নির্বাচনের খোঁজ-খবর জানতে চান। এই সময় নারায়ণগঞ্জ শহর বিএনপির উপদেষ্টা ক্ষোভের সাথে বলেন আপনি তৃণমূল থেকে তুলে এনে কাউকে বিআরটিসির চেয়ারম্যান ও এমপি বানিয়েছেন এখন তারা শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। যখন নির্বাচন করার জন্য দলীয় প্রতিক তুলে দিতে চান টাকা খরচের ভয়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে যারা দূরে সরে যায় তিনি এই সমস্ত নেতাদের চিনে রাখার অনুরোধ করেন।
শহর বিএনপির সহ-সভাপতি সুরুজ্জামান বলেন, শাখাওয়াত বিতর্কিত লোকদের নিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম করছে। তারা এক সময় আমাদের নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে অপমান অপদস্থ করেছে। মামলা করে হয়রানিও করেছে। শাখাওয়াতের নির্বাচনী কার্যক্রমের মূল ভূমিকা পালনকারী আবু আল ইউসুফ খান টিপু প্রবীণ নেতা জামাল উদ্দিন কালুসহ অনেক নেতার বিরুদ্ধে চুরির মামলাও করেছে। তাই আমাদের মূলধারার নেতাকর্মীরা শাখাওয়াতের নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণে দ্বিধাগ্রস্ত।
সবার বক্তব্য শেষে বেগম খালেদা জিয়া নাসিক নির্বাচনে বিএনপি থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি কি কিছু বলবেন না তখন এটিএম কামাল সবার বক্তব্যের রেশ ধরে বলেন, সমস্যা যেগুলো রয়েছে ম্যাডাম এগুলো আগামী শুক্রবার নগর বিএনপির জরুরি সভা ডেকেছি সেখানে ইনশাল্লাহ সমাধান হবে। এখানে মূল সমস্যাটি হলো শহর কমিটি যখন সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হয় তখন একটি পাল্টা কমিটিও করা হয়েছিল। শাখাওয়াত ছিল সে কমিটির সাধারণ সম্পাদক আর টিপু সংগঠনিক সম্পাদক। সে সময় বৈধ কমিটির বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছিল। তাই মূলধারা ও বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে দূরত্ব রয়েছে। আমারা আশা করি আগামী শুক্রবার জরুরী সভায় সব কিছু সমাধান করতে পারব ম্যাডাম এবং সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নারায়ণগঞ্জের মেয়র পদটি আপনাকে উপহার দিতে পারব।
সর্বশেষ সভায় বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা সকলে আমাকে কথা দিয়ে গিয়েছিলেন যে আমি যাকেই মনোনয়ন দিব সেই প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। এখন সমালোচনা আলোচনা করে কোন লাভ নেই। এখন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে কিভাবে প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনবেন সেই কাজটিই করতে হবে। আপনারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করুন আগামী এমপি মনোনয়নে বা কমিটিতে এই নির্বাচনে যার যেই ভূমিকা সেইভাবে বিবেচনা করেই আপনাদেরকে মূল্যায়ন করব। আর যদি কেউ অবহেলা করেন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঠিকভাবে কাজ না করেন সে ব্যাপারগুলো আমি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করব এবং আমি ব্যবস্থা। ঐক্যবদ্ধভাবে আপনারা সবাই সঠিকভাবে কাজ করুন ইনশাল্লাহ বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। এখন যেভাবেই হোক ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে সকলকে এক হয়ে মাঠে নেমে কাজ করুন।
সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গয়েশ্চর চন্দ্র রায়, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শহীদুল ইসলাম বাবুল, অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আযাদ, শাহজাহান মিয়া, আমানউল্লাহ আমান। ওই সভাতে তৈমূর আলম খন্দকার, আবুল কালাম ও গিয়াসউদ্দিনসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনকে ঘিরে তারা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন। কাকে ভোট দিবেন, দিলেই বা কি হবে এসব জল্পনা-কল্পনা এখন তাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বড় দু’দলের দ্বন্দ্ব দেখে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন তাদের মধ্যেই যদি ঝামেলা থাকে, তাহলে আমরা কোথায় যাবো? নারায়ণগঞ্জ নৌ টার্মিনালে কথা হয় ব্যবসায়ী আবুল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, বাজান আমরা গরীব মানুষ। ভোট আইছে ভোট দিমু। তয় দুই দলেই কাইজ্যা-ঝগড়া। আমরা কার পক্ষ নিমু।
চাষাড়া মোড়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা বাবুলের সঙ্গে। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মী পরিচয় দিয়ে ক্ষোভ ঝাড়লেন। বলেন, দল নমিনেশন দিছে। এইটা নিয়া আবার ক্যান ঝামেলা করবো। আইভিতো কিছু না। এহানে নৌকা হলো বড় বিষয়। দুই গ্রুপ হইয়া যাওনে মানুষ এহন বিপদে আছে।
নারায়ণগঞ্জ রেলগেটে কথা হয় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি অবশ্য নিজের নাম গোপন রাখতে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, আইভির বিকল্প নারায়ণগঞ্জে নেই। কিন্তু শামীম ওসমান ও তার সমর্থকদের কারণে ভোটাররা আতঙ্কে আছেন। তিনি আইভির পক্ষে কাজ করবেন কিনা সেটা নিয়ে মানুষের মাঝে ধোয়াশা রয়েছে।
আবদুর রহমান নামে বিএনপির এক কর্মী বলেন, সাখাওয়াতকে প্রার্থী দেওয়ার কারণে বিএনপির অনেকে নাখোশ। যদি তাদের মধ্যে মতবিরোধ থাকে তাহলে সাধারণ কর্মীরা কোথায় যাবে? দুই দলের সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা চান দু’দলেই ঐক্য গড়ে উঠুক। কোনো ধোয়াশায় থাকতে চান না তারা। এ অবস্থা চললে সাধারণ কর্মীদের মধ্যে নানা শঙ্কা আর উদ্বেগ সৃষ্টি হবে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চান ভোটাররাও।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।