Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘ব্যাংকগুলো ডলার নিয়ে ইচ্ছেমতো খেলছে’

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০২২, ৬:৫৪ পিএম

ব্যাংকগুলো ডলার নিয়ে খেলছে বলেই অস্থিরতা কাটছে না দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে। এমন মন্তব্য করে ডলারের দামের সর্বোচ্চসীমা বেঁধে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন। এদিকে দেশে বৈষম্য না কমার বড় কারণ হিসেবে এসএমই খাতের উন্নয়ন না হওয়াকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা।

রোববার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই’র আইকন ভবনে বঙ্গবন্ধুর এসএমই উন্নয়ন ভাবনা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এসএমই খাতের উন্নয়নে অর্থায়নকে সবচেয়ে বড় বাধা বলে উল্লেখ করেন ব্যবসায়ীদের এ শীর্ষ নেতা।

কোনোভাবেই বশে আসছে না দেশে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারকে অস্থিতিশীল করে রাখা ডলারের দাম বৃদ্ধির পাগলা ঘোড়া। বৈদেশিক এ মুদ্রা নিয়ে ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে খেলছে বলেই এই অস্থিরতা কাটছে না। এমন সমালোচনা করে বাংলাদেশকে কঠোর ও কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়ার দাবি এফবিসিসিআই সভাপতির।

জসিম উদ্দিন বলেন, ব্যাংকগুলোর মাঝে কোনো শৃঙ্খলা নেই। আজকে ডলারকে রাখিমালের ব্যবসার মতো করে ফেলেছে তারা। মানে আপনি পণ্য কিনে রাখবেন, তারপর লাভ হবে। সে অবস্থায় তারা ডলারকেও নিয়ে গিয়েছেন। কেন বাংলাদেশ ব্যাংক সীমা নির্ধারণ করে দিচ্ছে না? যে আমি যদি এক ডলার কিনি, আমি যে রেটেই ডলারটা কিনি না কেন, এক টাকা দুই টাকার বেশি লাভ করতে পারব না। আমি মনে করি, সরকারকে এগুলো দেখা দরকার। তিনি বলেন, আমরা রফতানি খাতের যে বিকল্প ব্যবসার কথা চিন্তা করছি, সেখানে এসএমই খাতটা সবচেয়ে বড় খাত হিসেবে দেখছি। এগ্রিকালচারেল প্রডাক্ট বা কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্প কিন্তু একটি বিশাল বড় সম্ভাবনা। তাছাড়া সরকারও চাচ্ছেন সেখানে যাওয়ার জন্য।

ব্যাংকগুলো এসএমইগুলোকে টাকা দেয়ার জন্য সাচ্ছন্দ্যবোধ করে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ব্যাংকগুলোর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুধু ডলার বিক্রি করে লাভ করার জন্য এতগুলো ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়নি। এটা নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না। শুধু মুনাফা করাই ব্যাংকের কাজ নয়। তাদেরকে অবশ্যই জাতীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেজন্যই তাদের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। নগরাঞ্চলে বড় গ্রাহকদের ঋণ দিয়ে শহর-গ্রামের মধ্যে বৈষম্য বাড়ানো ব্যাংকের কাজ নয়। বরং উন্নয়ন সুষম করার দায়িত্ব। মন্ত্রী বলেন, এসএমই নিয়ে সবাই কথা বলে, কিন্তু কোনো কাজ করেনা। সরকারি পর্যায়ের সীমাবদ্ধতাগুলো দ্রুত কাটিয়ে ওঠার আশ্বাস দিয়ে মন্ত্রী বলেন এসএমই ফাউন্ডেশনকে আর্থিকভাবে সক্ষম করতে হবে। এসময় অর্থনীতিবিদ খন্দকার গেলাম মোয়াজ্জেম যুক্তি তুলে ধরে বলেন, দেশে বৈষম্য না কমার একটা বড় কারণ এসএমই খাতের উন্নয়ন-অগ্রগতি না হওয়া।

অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই’র প্যানেল উপদেষ্টা ও সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের মোট বিতরণ করা ঋণের মাত্র ১৮ শতাংশ দেশের এসএমই খাতে দেয়। যা মাত্র ৯ শতাংশ পায়ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান। বাকি ৯১ শতাংশ এসএমই ব্যাংক ঋণের সহায়তা বঞ্চিত। এছাড়াও গত কয়েক বছরে ব্যাংকের মোট ঋণের অনুপাতে এসএমই ঋণের হার কমেছে। যা দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

তিনি জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে এসএমই’র উন্নয়ন করে বৈষম্য কমিয়ে আনতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। দেশের বর্তমান ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের পেছনে এসএমই খাতের বিকাশ না হওয়াকে দায়ী করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি জানান, বিশ্বব্যাংকের হিসাবে দেশের এসএমই ঋণের সম্ভাব্য বাজার ২৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ কাঠামোতে এসএমই খাত অবহেলিত। তাই এই বিশাল লাভজনক খাতে ব্যাংকগুলো নজর দিচ্ছে না।

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মো. মাসুদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, বড়শিল্প যেভাবে সরকারি নীতি সহায়তা পায়, ছোট উদ্যোক্তারা সেভাবে পান না। কর ও শুল্ক কাঠামোর কারণে স্থানীয় বাজার থেকে কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য না কিনে বিদেশ থেকে আমদানি উৎসাহিত হচ্ছে। এসময় তিনি সরকারি প্রকল্পের জন্য স্থানীয় বাজার থেকে ক্রয়ের বাধ্যবাধকতা আরোপের আহ্বান জানান। একই অভিযোগ করে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান জানান, এসএমই বিকাশে সরকারের আর্থিক আনুকুল্য ও প্রকল্প আনুকুল্য পাওয়া যায় না।

২০১৯ সালের এসএমই নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য ২১৪১ কোটি টাকার বাজেট হলেও তার বিপরীতে কোনো অর্থ পাওয়া যায়নি বলে জানান এসএমই ফাউন্ডেশনের এমডি।

তৃণমূলের এসএমই উদ্যোক্তাদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে ব্যাংকের শহরের প্রতি তিনটি শাখার বিপরীতে গ্রামাঞ্চলে সাতটি শাখা স্থাপনের নিয়ম করার আহ্বান জানান বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক মোর্শেদ। তিনি জানান, তার ব্যাংকের ৯০ শতাংশ গ্রাহক এসএমই খাতের।

এছাড়া আলোচনায় উঠে আসেক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি বলা হলেও ব্যাংক ও আর্থিকখাত থেকে মোট ঋণের মাত্র ৯ ভাগ পান এসএমই উদ্যোক্তারা।##

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ