Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচন

হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক

| প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : বাংলাদেশে চিকিৎসা, প্রযুক্তি ও কৃষি বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বৃত্তি কর্মসূচি প্রবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ড. জানোস আদের। তার এই প্রস্তাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার নতুন দরজা উন্মোচন হলো। এখানে গত সোমবার সান্দর প্যালেসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ড. জানোস আদের এই প্রস্তাব দেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বুদাপেস্টে পানি শীর্ষ সম্মেলন-২০১৬-তে অংশ নিতে চারদিনের দ্বিপক্ষীয় সফরে এখন হাঙ্গেরির রাজধানীতে অবস্থান করছেন।
এদিকে হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট হানোস আদেরের সঙ্গে বৈঠকে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী চিন্তা বিনিময়ে জোর দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহায়তার ধরনের বিষয়ে জানতে চান ইউরোপের দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ কী করছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব বাংলাদেশ কীভাবে মোকাবেলা করছে, তা জানতে চান আদেরে।
বিভিন্ন গবেষণা ও সমীক্ষার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের পানি দুই থেকে আড়াই মিটার বৃদ্ধি পেলে দুই থেকে আড়াই কোটি নাগরিকের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটবে। জলবায়ু-দুর্গতদের জন্য নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচি হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টের কাছে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা
আদেরের সহায়তার প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী ঋণ কিংবা আর্থিক সহায়তার চেয়ে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী চিন্তা বিনিময়ে জোর দেন বলে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের জানান।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের সমস্যা, আমাদের নিজেদেরকে সমাধান করতে হবে। এখান থেকে আন্তর্জাতিক সংস্থাকে কতটুকু করবে, ওই আশায় বসে থাকলে হবে না। একই সাথে প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী চিন্তা বিনিময়ে বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির মধ্যে সহযোগিতার কথা বলেছেন, ঋণ বা আর্থিক সহায়তা দেয়ার থেকে।
বাংলাদেশের বন্যা-প্রবণ এলাকায় পানি শোধনের বিষয়ে নিজ দেশের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট। শহীদুল হক বলেন, পিসিকালচার এবং অ্যাকুয়া কালচারÑ এই দুই ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট প্রস্তাব দিয়েছেন।
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বৃত্তির কথা হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার ঘোষণা করবেন বলে শেখ হাসিনাকে জানান জ্যানুস আদের।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ এবং তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পে সম্ভাবনার কথা হাঙ্গেরির রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা হাঙ্গেরির রাষ্ট্রপ্রধানকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। তিনি এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের প্রতিশ্রুতি দেন।
বৈঠকে শেখ হাসিনা ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পক্ষে সমাজতান্ত্রিক হাঙ্গেরির অবদানের কথা স্মরণ করেন। হাঙ্গেরি ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে ১৯৭২ সালের ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে হাঙ্গেরির দূতাবাস ছিল। সে সময় দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিভিন্ন দ্বার উন্মোচিত হতে থাকলেও বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর এই সম্পর্ক আর বেশিদূর এগোয়নি। অন্যদিকে হাঙ্গেরিতেও দুই যুগ আগে সমাজতন্ত্রের অবসান ঘটে।
শহীদুল হক বলেন, দুই দেশের পুরনো সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরি অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছে। আগামীকাল দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে এবং বেশকিছু সমঝোতা স্মারক সই হবে। নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়টি ডকুমেন্টেড হবে।
ওয়ার্ল্ড ওয়াটার সামিটের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী ‘সাসটেনেইবল ওয়ার্ল্ড সলিউশনস এক্সপো’ পরিদর্শন করেন। এই প্রদর্শনীতে যে নতুন উদ্ভাবনী কৌশলের উন্নয়ন হচ্ছে, সেগুলো প্রধানমন্ত্রী দেখেন। একই সাথে পানি শোধনের ক্ষেত্রে নতুন যে প্রযুক্তি আসতে যাচ্ছে, তাও দেখেন তিনি।
পরে মরিশাসের প্রেসিডেন্ট আমিনাহ্ গারিব-ফাকিমের অনুরোধে তার সঙ্গে শেখ হাসিনার পানি সম্মেলন কেন্দ্রে এশটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।
বৈঠকে ফাকিম তার দেশের বিভিন্ন শিল্পে বাংলাদেশী কর্মীদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানান। এছাড়াও দু’দেশে দু’দেশের বিনিয়োগ কীভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে দু’জনে আলোচনা করেন।
শহীদুল হক বলেন, মরিশাসের তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের বেশকিছু কর্মী ভালোভাবে কাজ করছেন। আমরা তুলনা করে দেখেছি, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশী কর্মীরা ভালো অবস্থানে রয়েছেন। রাতে প্রধানমন্ত্রী তার সৌজন্যে হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টের দেয়া নৈশভোজে যোগ দেন।
হাঙ্গেরীর জাতীয় বীরদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন
 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মঙ্গলবার সিটি পার্কের ‘হিরোস-স্কয়ার’-এ হাঙ্গেরীর জাতীয় বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে হাঙ্গেরী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় প্রাণোৎসর্গকারী বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী এসময় সেখানে সম্মান প্রদর্শনের স্মারক হিসেবে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন।
হিরোস স্কয়ার হচ্ছে বুদাপেস্টের একটি অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান যা মাগিয়ার সাত নেতার প্রতিমূর্তি সম্বলিত কমপ্লেক্স ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নেতাসহ অজানা  সৈন্যদের সমাধিস্থল হিসেবে বিখ্যাত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ