Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

উপরে হাইভোল্টেজ ট্রান্সমিটার নিচে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

দুর্ঘটনার শঙ্কা

হাসান-উজ-জামান : | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

 ঘটনাটি ২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর রাতের। ধানমন্ডি মেডিনোভা হাসপাতাল সংলগ্ন ফুটপাতে একটি দোকানে বসে চা পান করছিলেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিন বন্ধু। তখন রাত ৯টা। চা দোকানটি ছিলো দু’টি বৈদ্যুতিক খুঁটির মাঝে। খুঁটির কয়েক হাত উপরে ছিলো হাই ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ বিস্ফোরণ। ট্রান্সমিটার থেকে আগুনের ফুলকির মতো যন্ত্রাংশের কিছু অংশ ছিটকে পড়ে চা পানরত শিক্ষার্থী বন্ধুদের শরীরে। এতে আহত হন তিন বন্ধু। স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে ভর্তি করেন বাংলাদেশ মেডিকেলে। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা যান আল্লামা আশরাফ প্রান্ত। তিনি ছিলেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র। মেহেরপুর পূবালী ব্যাংক ভবনের মালিক আশরাফুল ইসলাম বাচ্চুর ছেলে প্রান্ত’র বাবা-মা আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন সন্তান হারানোর বেদনা। ।
এর আরো কিছু দিন আগে ২০১৭ সালের ২০ জুন পুরান ঢাকার পশ্চিম ইসলামবাগে বৃষ্টির মধ্যে ঘরের চালে ছিঁড়ে পড়া বিদ্যুতের তারের কারণে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিশু সন্তানসহ একই পরিবারের ৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। ঘরটির পাশেই ছিলো একটি হাইভোল্টেজ ট্রান্সমিটার। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ ছিলো, ঘটনার আগেও সেখানে বেশ কয়েকবার ট্রান্সমিটার বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে তারা অভিযোগও দিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগের বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
এদিকে ঢাকা মহানগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকায়ই দেখা যায়, ফুটপাত সংলগ্ন অধিকাংশ চায়ের দোকানসহ ভাসমান অনেক ধরনের খাবারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটারের নিচে। বিশেষ করে চায়ের দোকানই বেশি চোখে পড়ে। ওইসব বৈদ্যুতিক খুটি দিয়েই দোকানের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়া হয়। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত, কোথাও কোথাও সারারাত ধরে চলে এসব চা দোকানগুলো। পল্টন এলাকার ট্রান্সমিটারের নিচে এরকম একটি দোকানে সম্প্রতি বৃষ্টির মধ্যে বৈদ্যুতিক পিলার বিদ্যুতায়িত হয়। বড় কোন ধরনের দুর্ঘটনা না হলেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছিলো সকলের মধ্যে। ঢাকা শহরে এ ধরনের মোট কতগুলো দোকান আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে। কিন্তু সবাই ঝুঁকি ও আতঙ্কের মধ্যেই ব্যবসা করছে। মিরপুর ১ নম্বরের দোকানদার সুরুজ মিয়া বলেন, বিভিন্ন ধরনের আতঙ্কের মধ্যেই ব্যবসা করছি। মাঝে মধ্যে ট্রান্সমিটার বিস্ফোরণ ঘটে। তখন বিকট শব্দে এলাকা কেঁপে ওঠে। মোহাম্মপুর টাউন হলের এক চা দোকানির বক্তব্য হচ্ছে, আগেতো বাঁচতে হবে। ভয় করলে জীবন চলবে না। দোকান না খুললেও তিন’শ টাকা গুনতে হয়। কি করবো বলেন।
মতিঝিল স্টক এক্্রচেঞ্জ সংলগ্ন ট্রান্স মিটারের নিচে রয়েছে একাধিক টি স্টল। কথা হয় দোকানি নবীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, জানি যে কোনো সময় ট্রান্সমিটার বিস্ফোরণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু কিছু করার নাই। আমি দোকান ছেড়ে দিলে অন্যজন নিয়ে নেবে। তিনি আরো বলেন, এককালীন মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে দোকানটির পজিশন নিয়েছি। এখন আবহাওয়া কিংবা নিজের শরীর খারাপ হলে দোকান বন্ধ থাকলেও চাঁদার টাকার মাফ নাই। দৈনিক কত দিতে হয় জানতে চাইলে তিনি এদিক সেদিক তাকিয়ে উত্তর দিলেন, দিনের জন্য পুলিশের নামে ১শ’ এবং রাতের জন্য ৫০ টাকা মিলিয়ে দৈনিক দেড়শ’টাকা নিয়ে যায় লাইনম্যান। এছাড়া দৈনিক ৩০ টাকা দিতে হয় বিদ্যুতের বিল হিসেবে। অবৈধ সংযোগ আবার টাকা কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন বিদ্যুতের টাকা নেয় জেনারেটর সার্ভিসের নামে। আসলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয় অবৈধভাবে। মেইন লাইনের মাধ্যমে। একাধিক ভাসমান ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন ম্যানেজ করেই এসব অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়। যে কারনে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এসব নিয়ে কথা বলেন না। কখনো দুর্ঘটনা হলেও এরা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে কৌশলে এড়িয়ে যান আসল ঘটনা। প্রশাসনের সামনে এ ধরনের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে নিজেরাসহ ক্রেতা কিংবা কাষ্টমারদের ঝুঁকির মধ্যে রেখে ব্যবসা করলেও সেদিকে যেন কারও নজর নেই।
ট্রান্সমিটারের নিচে অবস্থান করে ব্যবসা করা প্রসঙ্গে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান ইনকিলাবকে বলেন, এ ব্যাপারে সরকার, প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, বিদ্যুৎ বিভাগ এমনকি জনগনেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে। প্রত্যেকের যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বেকারত্বের কথা মাথায় রেখে অভাবী লোকদের কিছু একটা করার সুযোগও দিতে হবে আবার অবৈধ সংযোগ না দিয়ে আমাদের বিদ্যুৎও সাশ্রয় করতে হবে। বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটারগুলো থেকে সতর্ক থাকতে হবে। এর আশেপাশে কেউ যাতে জড়ো হতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। নিজেদের দায়বদ্ধতা থেকে জনগনকেও সতর্ক থাকতে হবে।
এদিকে ভাসমান ব্যবসা প্রতিষ্টানে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর (ডিপিডিসি) সংশ্লিষ্টদের মাসোহারা দিয়ে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হচ্ছে এবং ওইসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে তাদের কোন পরিকল্পনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ডিপিডিসি’র ঢাকা জোনের একাধিক কর্মকর্তাসহ জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ফোন করা হয়। তারা এ ব্যাপারে কোন বক্তব্য দিতে রাজী হননি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ