ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
সৈয়দ তৌকির আহমদ : পথশিশুদের একটি বড় অংশ তাদের পরিবার ছাড়াই দিনে-রাতে রাস্তায় অবস্থান করে। কিছু শিশু সারাদিন ভিক্ষা করে রাতে পরিবারে ফিরে আসে। আবার কিছু শিশু রাস্তাতেই রাতযাপন করে। দেশের নগর, বন্দর ও শহরে দিনে দিনে প্রসারিত হচ্ছে ছিন্নমূল শিশুদের মিছিল। এদের একটি অংশ প্রতিদিন রাত কাটায় রাস্তা ও ফুটপাতে। চোরাচালান ও মাদক বিক্রিসহ সমাজবিরোধী বিভিন্ন কার্যকলাপে পথশিশুরা ব্যবহৃত হচ্ছে আশঙ্কাজনকহারে।
বেসরকারি একটি সংস্থার মতে, দেশের অভ্যন্তরে মাদক পাচার এবং চোরাচালানে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫ লাখ। প্রায় ২০ হাজার শিশু লিপ্ত রয়েছে সমাজবিরোধী কাজে। বোমা হামলা, মিছিল, মিটিংসহ রাজনৈতিক দলের নাশকতা বাস্তবায়নে একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পথশিশু ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশের বাইরে প্রতিবছর পাচার হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার শিশু। এছাড়া দেশের ২ হাজার পতিতালয়ে পতিতা হিসেবে শিশু রয়েছে কমপক্ষে ১ লাখ যারা ন্যূনতম প্রাথমিক শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। শুধুমাত্র পিতৃ পরিচয় ও সামাজিক হীনমন্যতার কারণে এসব শিশু বেড়ে উঠছে অন্ধকারে।
বিক্ষিপ্তভাবে বেড়ে ওঠা এসব শিশু যেমন বঞ্চিত হচ্ছে তাদের ন্যূনতম অধিকার থেকে; ঠিক তেমনি বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার আলো থেকে। দরিদ্র পরিবারগুলো যেমন তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারে না দারিদ্র্যের কারণে, ঠিক তেমনি হাজার হাজার যৌন কর্মী তাদের শিশু সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারে না সামাজিক অবস্থার কারণে। এর ফলে বিপুলসংখ্যক শিশু সমাজবিরোধী চক্রের সাথে যুক্ত হচ্ছে। আর মেয়ে শিশুরা তার মায়ের হাত ধরেই হচ্ছে যৌন কর্মী। অপরদিকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে দেশের লাখ লাখ শ্রমজীবী শিশু। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দারিদ্র্যের কারণে এসব শ্রমজীবী শিশুর পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের শ্রমে নিয়োজিত হতে বাধ্য করে। আবার অনেক সময় সামাজিক অবস্থার কারণে শিশুরা নিয়োজিত হয় বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। আর এসব পথশিশু, শ্রমজীবী শিশু, যৌন কর্মী শিশুসহ অনেক শিশুই বাদ পড়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের নাগরিকত্ব তালিকা থেকে।
জন্মনিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি এসব পথশিশু, শ্রমজীবী শিশু, যৌন কর্মী শিশুসহ অন্য শিশুদের। সারাদেশে বর্তমানে সুবিধাবঞ্চিত, কর্মজীবী ও পথশিশুর সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। বিনামূল্যে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও এসব সুবিধাবঞ্চিত, কর্মজীবী ও মধ্যবিত্ত ও উচ্চতর পরিবারের অনেক শিশুই এখনো রয়ে গেছে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রমের বাইরে। উন্নত দেশগুলোতে শিশু জন্মের সাথে সাথে শিশুর জন্মনিবন্ধন করা হলেও আমাদের দেশে এখনো লাগেনি সেই আধুনিকতার ছোঁয়া। সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো শিশু সনদের যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছে তার প্রায় সব থেকেই বঞ্চিত পথশিশুরা। চট্টগ্রামের শহরের অলিগলি ও ভিআইপি সড়কগুলোয় যে ক্ষণস্থায়ী শিশু দেখা যায়, ওদের কথা পড়ালেখার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার ফলে ওরা শিক্ষা বঞ্চিত। আবার অনেকে বলে যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, একবেলা খাবার খেলে ওবেলার কথা চিন্তা করতে হয় সেখানে পড়ালেখা করব কী দিয়ে ? কেউ কেউ এনজিও পরিচালিত পথস্কুলগুলোয় পড়াশোনার সুযোগ পেলেও সে শিক্ষা তাদের জীবন মনোন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকাই রাখতে পারে না। পরিবেশের অভাবে দরিদ্র অভিভাবকদের অসচেতনতা ইত্যাদি কারণে শিশুরা শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছে। এই কারণেই ওদের অনেকে শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীজুড়েই চলছে শিশু আন্দোলন। সমাজের বিভিন্ন স্তরে শিশুর অধিকার আদায় ও সুস্থ জীবনযাপনের সুযোগ-সুবিধার জন্যই এ ধরনের আন্দোলন বা কর্মসূচি। এ আন্দোলনের সর্বপ্রথম উদ্যোক্তা জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ইউনিসেফ, ১৯৫৯ সালের ২০ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্বের শিশুদের সমস্যাবলি নিরসনে ‹শিশু অধিকার সনদ; গৃহীত হয়। এই সনদে শিশুদের মৌলিক ও মানবিক ১০টি অধিকারের প্রতি বেশি জোর দেয়া হয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে এ অধিকার ভোগ করবে। স্বাধীন, মুক্ত ও মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু আর স্বাভাবিক বিকাশে প্রতিটি শিশুর জন্য অবাধ সুযোগ নিশ্চিত করা। শিশুর একটি নাম ও জাতীয়তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা পুষ্টি ও আবাসিক সুবিধাসহ বিনোদন, স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও সামাজিক সুবিধা নিশ্চিত করা। পশু ও প্রতিবন্ধী শিশুদের শুশ্রƒষা, শিক্ষা ও পরিচর্যা নিশ্চিত করা। সমঝোতা, নিরাপত্তা বিধানসহ স্নেহময় পরিবেশে শিশুর থাকার ব্যবস্থা করা। অবজ্ঞা, নিষ্ঠুরতা এবং শোষণের হাত থেকে রক্ষা করা। বর্ণ, ধর্মসহ যে কোনো ধরনের বৈষম্য দূরীকরণ করা।
১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের গৃহীত সর্বজনীন মানবাধিকার সনদে প্রাথমিক ও মৌলিক পর্যায়ের শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক ঘোষণা করা হয়। এরপর ৬৮ বছরেও এর আশানুরূপ অবস্থা হয়নি। প্রতিবছর শিশু সপ্তাহ পালিত হলেও এসব শিশুদের জীবনধারায় কোন পরিবর্তন আসে না। নগরীর রাস্তায়, ফুটপাত, দোকানের বারান্দা, বসতির নোংরা গলির মধ্যে রাত কাটে শিশুদের। এ অবস্থায় সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপই পারে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবনচিত্র পাল্টে দিতে।
লেখক : মহাসচিব-বঙ্গবন্ধু শিশু কল্যাণ ফাউন্ডেশন (বিএসকেএফ)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।