পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের ফুয়েল প্রেসার কমে গিয়েছিল। এ সময় বিমানের ইঞ্জিনের একটি নাট ঢিলে হয়ে যাওয়ায় যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন গতকাল সোমবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। জ্বালানির চাপ কমে যাওয়ায় বিমানটিকে জরুরিভাবে অবতরণ করতে হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রাশেদ খান মেনন জানান, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি ছিল ভিভিআইপি ফ্লাইট। এই বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাদে জরুরি অবতরণ করে। এ ঘটনা তদন্তে দু’টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে বরখাস্ত করা হয়নি। অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে সংসদ ভবনে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সুপারিশ জানিয়েছে কমিটি।
রাশেদ খান মেনন বলেন, যেটা হয়েছিল, ইঞ্জিনের ফুয়েল প্রেসার (জ্বালানির চাপ) কমে যাচ্ছিল। এক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে যে, নিয়ারেস্ট (সবচেয়ে কাছের) এয়ারপোর্টে ল্যান্ড (অবতরণ) করতে হয়। সেই হিসেবে তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাদ ল্যান্ড করেছিল। সেখানেই আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা প্লেনটি সারিয়ে চার ঘণ্টা পর আবার ফ্লাই করেছে। প্রধানমন্ত্রী সেই ফ্লাইটেই রাত ১১টা ৫ মিনিটে বুদাপেস্টে পৌঁছেন।
কেন জ্বালানির চাপ কমে গিয়েছিলÑ এ বিষয়ে একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সেটা টোটালি (পুরোপুরি) টেকনিক্যাল (কারিগরি) ব্যাপার। এটা ইঞ্জিনিয়াররা বলতে পারবেন।
এ ঘটনায় কারো অবহেলা দেখছেন কি নাÑ জানতে চাইলে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আজকেই প্রিলিমিনারি রেসপনসিবিলিটি ডিসাইড (দায়িত্বশীলদের প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত) করবে তদন্ত কমিটি। তারপরই তাদের (দায়ীদের) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী সাংবাদিকদের সামনেই বিমানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে ফোন দেন। মন্ত্রী ওই কর্মকর্তাকে বলেন, ‘আপনি এখনও কাউকে সাসপেন্ড করেননি। এটা তো করতে হবে আপনাকে। কাউকে প্রিলিমিনারি তো আপনাকে করতে হবে। ভিভিআইপি ফ্লাইটের চার্জে কি কেউ থাকে না?
এরপর বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, একজন ইঞ্জিনিয়ার ভিভিআইপি ফ্লাইটের দায়িত্বে থাকেন। তার বিষয়ে (শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া) দেখা হচ্ছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বলাকা ভবনের একটি সূত্র জানায়, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বাংলাদেশ বিমানের ওই ফ্লাইটটি তুর্কমেনিস্তানে জরুরি অবতরণ করে। যদিও পরে ইঞ্জিনের ত্রুটি মেরামত করে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বুদাপেস্টে রওনা হয়। রবিবার রাত ১১টা ৫ মিনিটের সময় বুদাপেস্ট বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী সেই বিমানটি হাঙ্গেরি থেকে গতকাল সোমবার সকালে ঢাকায় ফিরেও এসেছে।
বিমান মন্ত্রণালয় জানায়, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে পরামর্শ করে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও পর্যটন) স্বপন কুমার সরকারকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কমিটির প্রধান হলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব স্বপন কুমার সরকার। তার নেতৃত্বে গঠিত কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া রবিবার রাতেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চিফ টেকনিক্যাল কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন ফজলে মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে আরো একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। এই কমিটিকে ১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিমানের জিএম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা সাকিল মেরাজ জানান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন ফজলে মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেনÑ বিমানের প্রধান ফ্লাইট নিরাপত্তা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মো: শোয়েব চৌধুরী, বিমানের উপ-প্রধান প্রকৌশলী মো: হানিফ এবং নিরঞ্জন রায়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসাদ্দেক আহমেদ বলেন, একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট ফ্লাই করার দুই দিন আগে তা কয়েক দফায় চেক করা হয়। এ জন্য একটি টিম কাজ করে। ওই ফ্লাইটে কতজন ক্রু থাকবেন, কোন কোন প্রকৌশলী থাকবেন, পাইলট কে সবারই একটি নাম তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এবং মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তারপর সেখান থেকে ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পর ওই ফ্লাইটের জন্য সিলেক্টেড সকলেই সবকিছু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন। এ জন্য এককভাবে কোনো একজন দায়ী নন।
এমডি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বহন করা বিমানটি কি কারণে জরুরি অবতরণ করতে হয়েছে এবং এ জন্য কারা দায়ী বা কি ঘটেছিল তা তদন্ত প্রতিবেদন আসার আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। তিনি আরো জানান, এ জন্য এখন পর্যন্ত কাউকে বরখাস্ত করা হয়নি। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে গতকাল বিকালে জাতীয় সংসদে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বলা হয়েছে, তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থয়ী কমিটি এ সুপারিশ করেছে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে তদন্ত রিপোর্ট সংসদীয় কমিটিকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। একই সাথে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিমান অবতরণের পূর্বে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে ত্রুটিসংক্রান্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে আরো কঠোর শাস্তির আওতায় আনার নির্দেশনা নিয়েছে।
কমিটির বৈঠকে বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ বিল, ২০১৬-এর ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ বিল, ২০১৬-এর ওপর বিস্তারিত পর্যালোচনা শেষে বিলটি চূড়ান্ত করে সংশোধিত আকারে সংসদে পাস করার সুপারিশ করা হয়।
কমিটি সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেনÑ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, অধ্যাপক মো: আলী আশরাফ এবং তানভীর ইমাম। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ড. জানোস এডারের আমন্ত্রণে বুদাপেস্ট পানি শীর্ষ সম্মেলন-২০১৬ তে অংশ নিতে চার দিনের সফরে রবিবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকা ত্যাগ করেন। সকাল ৯টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে করে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যান।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্তব্যে অবহেলা
খ-কালীন কাজেই বেশি সময় : পদোন্নতিতে গবেষণার পরিবর্তে রাজনৈতিক বিবেচনা দুপুরের পর কর্মস্থলে অনুপস্থিত : নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সুপারিশ
ফারুক হোসাইন
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যোগ্যতা মনে করা হয় সাধারণ বিবেচনায় অত্যন্ত উঁচু মানের। শিক্ষাসহ জাতীয় উন্নয়নে তারাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনও হয়ে থাকে তাদের হাত ধরেই। তবে কিছুসংখ্যক শিক্ষকের দায়িত্বে অবহেলা, অর্থ লিপ্সা ও অতিমাত্রায় রাজনৈতিক সংস্পর্শতার কারণে দুর্নাম কুড়াতে হচ্ছে সকল শিক্ষককেই। কয়েকজন শিক্ষকের কারণে একই রকম নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিচ্ছে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলা, খ-কালীন কাজে বেশি সময় দেয়া, গবেষণার পরিবর্তে রাজনৈতিক বিবেচনা পদোন্নতির অভিযোগ করেছে খোদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দায়িত্ব পালন ও আচরণের উপর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে উচ্চশিক্ষার নিয়ন্ত্রক এই সংস্থা। তবে কমিশনের এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন, বাস্তবতাবিবর্জিত উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা নিয়মনীতি মেনে কাজ করে এবং পদোন্নতি হয়। মঞ্জুরি কমিশনে যারা আছেন তারা রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পায় এজন্য অন্যদের ক্ষেত্রেও সে রকম মনে করছে।
ইউজিসি প্রকাশিত সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলাসহ বেশকিছু অভিযোগের কথা তুলে ধরা হয়েছে এবং পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশিরভাগ শিক্ষকই নিষ্ঠাবান এবং তারা শিক্ষাখাতসহ জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। কিন্তু কিছুসংখ্যক শিক্ষকের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। এসব শিক্ষক নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়া ও সময় দেয়ার চেয়ে বেশি পরিমাণে সময় ব্যয় করছে খ-কালীন শিক্ষকতায়। এতে একদিকে যেমন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে শিক্ষকদের সম্পর্কে জন্ম নিচ্ছে নেতিবাচক ধারণা। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই বেশিরভাগ সময় অনুপস্থিত থাকছেন নিজ কর্মস্থলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে দুপুরের পর থেকেই তালা বন্ধ থাকছে শিক্ষকদের অফিসকক্ষ। প্রতিবেদনে বলা হয়, একজন শিক্ষককে প্রতি সপ্তাহে কত ঘণ্টা ক্লাস নিতে হবে সে বিষয়ে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এই নিয়মের সঠিক কোনো ব্যাখ্যা না থাকায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না। স্বাভাবিক অবস্থায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি একাডেমিক সেশনে অর্থাৎ প্রতি বছর ৩০ থেকে ৩২ সপ্তাহ ক্লাস অনুষ্ঠিত হয় এবং বাকি সময় ছুটি থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসের বাইরে কিংবা ছুটি থাকাকালীন গবেষণা, প্রশাসন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনাসহ অন্যান্য কাজের জন্য কতটুকু সময় একজন শিক্ষক কর্মস্থলে উপস্থিত থাকবেন তার কোনো স্পষ্ট বিধান নেই। ফলে ক্লাস ও পরীক্ষার বাইরের বেশিরভাগ সময় শিক্ষকরা নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকছেন। দুপুরের পর থেকেই বন্ধ থাকছে শিক্ষকদের অফিস রুম। এছাড়া অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরীক্ষার উত্তরপত্র বিলম্বে মূল্যায়নের কারণে ফল নিয়মিত না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কোনো কোনো শিক্ষক নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খ-কালীন হিসেবে কাজ করেন। নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে খ-কালীন শিক্ষক হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনেই বেশি সময় ব্যয় করছেন তারা। যদিও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খ-কালীন শিক্ষক হিসেবে কতটুকু সময় ব্যয় করতে পারবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। এজন্য ইউজিসি শিক্ষকদের দায়িত্ব পালন এবং সার্বিক আচরণের উপর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও এর যথাযথ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছে।
রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতি : গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞানের নতুন নতুন শাখা ও তথ্য উদ্ভাবন, সংযোজন এবং ব্যাখ্যা প্রদান করা উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রমের অন্যতম প্রধান কাজ। আর এ কাজের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই। তাদের গবেষণা কাজের উপর ভিত্তি করেই পদোন্নতিও হয়ে থাকে। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গবেষণা প্রাথমিক বিষয় হলেও বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠান নানা কারণে গবেষণা ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য গবেষণাকে মানদ- হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নাতিতে গবেষণার পরিবর্তে রাজনৈতিক বিবেচনাকে অগ্রাধিকার দেয়ায় গবেষণা ও প্রকাশনার কাজ নিষ্প্রভ হয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতাকে প্রধান্য দেয়ার কথাও বলা হয়েছে ইউজিসি প্রতিবেদনে। বিশেষজ্ঞ প্যানেল ও পুল গঠন করে একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পাশাপাশি ক্লাস ডেমোনেস্ট্রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে চাকরির সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং আকর্ষণীয় বেতন কাঠামো চালু করার পরামর্শও এতে রয়েছে। যদিও গতবছর প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে একইরকম মন্তব্য ও পরামর্শ দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এক বছরে এর কোন বাস্তবায়ন না করে আবার তা উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ফরিদ উদ্দীন আহমেদ ইউজিসি’র প্রতিবেদনে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, প্রতিবেদনে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ভীত্তিহীন ও বাস্তবতাবিবর্জিত। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিয়মনীতি মেনে কাজ করে এবং পদোন্নতি হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মীজানুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা সরকারি অফিস করে না, তারা শিক্ষা কার্যক্রম ছাড়াও গবেষণা কাজে সময় দেয়। এজন্য ৯টা থেকে ৫টা অফিস করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তবে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগটির বিষয়ে তিনি বলেন, ক্লাস ও পরীক্ষাসহ শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষকদের আরও যতœশীল হতে হবে। শিক্ষকের পদোন্নতির বিষয়ে তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো শিক্ষকের পদোন্নতি হয় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হলো নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি করা আর কলেজের কাজ হলো সেই নতুন জ্ঞান বিতরণ করা। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এখনো দেশে-বিদেশে অনেক সুনাম রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে এখন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। মঞ্জুরি কমিশনের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, কমিশন যদি শিক্ষকদের ক্লাসে আরও আগ্রহী এবং গবেষণায় মনোযোগী করার চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে তাদের রসদও দিতে হবে। শিক্ষকদের গবেষণার জন্য রাষ্ট্রকেই ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে হবে। তিনি বলেন, নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে কিন্তু নতুন জ্ঞান সৃজন হচ্ছে না। এগুলোকে যদি জ্ঞান সৃজনের কাজে না লাগানো হয় তাহলে জাতি ও রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তবে সার্বিকভাবে শিক্ষকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ইউজিসি’তে যারা আছেন তারা প্রত্যেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তারা বিষয়গুলো ভালো করে জানেন ও বুঝেন। প্রত্যেকে যদি অন্যের দিকে আঙুল না তুলে নিজেকে নিয়ে আত্মসমালোচনা করি তাহলেই মঙ্গলজনক হবে। ঢালাওভাবে শিক্ষকদের নিয়ে মন্তব্য করার সমালোচনা করে তিনি বলেন, কোন কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের সাথে আলোচনা করলে সকলের জন্য মঙ্গলজনক হবে। বস্তুনিষ্ঠ ও যাচাই-বাছাই করে তথ্য দিলে তিনিও তার বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করবেন বলেও ইনকিলাবকে জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।