পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে আরও ২৫ পয়সা দর হারিয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে গতকাল এক ডলারের জন্য খরচ করতে হয়েছে ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা। গত বৃহস্পতিবার যা ছিল ৯৪ টাকা ৪৫ পয়সা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে টাকাণ্ডডলার বিনিময় হার ঠিক হয়ে থাকে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী। গতকাল ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩ কোটি ২০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। দাম নির্ধারিত হয়েছে ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত এক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ। এদিকে খোলা বাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে আরও চড়া দামে। ১০৫ টাকা পর্যন্ত উঠে গেছে ডলার দর। খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা বাড়লে মুদ্রা বিনিময়ের প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ব্যাংক থেকে ডলার কিনে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে থাকে। এখন ব্যাংকেও ডলারের সঙ্কট। এজন্য অনেক ব্যাংক এখন উল্টো খোলাবাজারে ডলার খুঁজছে। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় দেশে ইউএস ডলারের তীব্র সঙ্কট তৈরি হয়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডলারের দাম। এজন্য রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিনিয়ত দামও বাড়াচ্ছে। এরপরও সঙ্কট কাটছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ডলার বিক্রি করছে, বাজারে তার চেয়ে ৩-৪ টাকা বেশি দরে কেনাবেচা হচ্ছে। ফলে আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। অনেক ব্যাংক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম ১০১ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংক প্রতি ডলারে ১০০ টাকা দিয়েও প্রবাসী আয় পাচ্ছে না। বাজার ‘স্থিতিশীল’ করতে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় নতুন অর্থবছরেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি অর্থবছরের প্রথম থেকে এ পর্যন্ত ৭০ কোটির বেশি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে রিজার্ভ দুই বছর পর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। এদিকে সরবরাহ আরও কমে যাওয়ায় ঢাকার খোলা বাজারে চাহিদা অনুযায়ী ডলার মিলছে কম; যে কারণে অনেক মানি এক্সচেঞ্জ ক্রেতাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে, আগ্রহ বেশি দেখাচ্ছে কিনতেই। এতে প্রধান এ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় মূল্য আরও বেড়ে প্রতি ডলার ১০৫ টাকা ছাড়িয়েছে। ডলারের এমন চড়া দর আগের যেকোনো সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত মে মাসের মাঝামাঝিতে সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ১০২ টাকায়। গতকাল পল্টনের এক্সচেঞ্জগুলোতে ডলার বিক্রি করতে আসা ব্যক্তির সংখ্যা তেমন চোখে পড়েনি। আবার ব্যাংকও নগদে ডলার বিক্রি করছে খুবই কম। যে কারণে এক্সচেঞ্জগুলোর ডলার সংগ্রহে টান পড়েছে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। সাধারণত হজ শেষে এসময়ে সউদী ফেরত হাজিদের কাছ থেকে ডলার পাওয়া যায়। এবার তাদের কাছ থেকে তেমন ডলার মিলছে না বলে সঙ্কটের এ সময়ে সরবরাহ আর বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন মানি এক্সচেঞ্জের কর্মীরা। এদিন ব্যাংকগুলোতেও নগদ ডলার বিক্রির দর বেড়ে ১০২ টাকায় উঠেছে।
এজন্য গত রোববার দুপুর থেকেই ডলারের দাম বেড়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজধানীর মতিঝিলের একটি মানি এক্সচেঞ্জের মালিক অবুল বাশার। তিনি বলেন, ১০০ থেকে ৩০০ ডলার পর্যন্ত দিতে পারছি। তাও ম্যানেজ করে আনতে হয়। কেউ ৫০০ বা তার চেয়ে বেশি ডলার কিনতে চাইলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নিউট্রল মানি এক্সচেঞ্জের বিক্রয় কর্মী পলাশ মাহমুদ জানান, সোমবার সকাল থেকে তিনি প্রতিডলার বিক্রি করছেন ১০৫ টাকা ১০ পয়সা থেকে ২০ পয়সা দরে। আগের দিন বিকালে সবশেষ বিক্রি করেছিলেন ১০৪ টাকা ৫০ পয়সায়। বেলা ১টার সময় তার প্রতিষ্ঠানে ডলার বিক্রি করতে আসেন মো. সাইফুল ইসলাম। দরদাম করে ৫০০ ডলার তার কাছ থেকে ১০৪ টাকা ২০ পয়সা দরে কিনে নেন রুবেল। দুপুর পর্যন্ত এই প্রথম একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৫০০ ডলার বিক্রি করতে আসলো বলে জানান তিনি।
এদিন সকাল থেকেই সরবরাহ আরও কমে যাওয়ায় দাম আরও বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। পলাশ জানান, সর্বোচ্চ ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার কিনেছেন তিনি। তবুও চাহিদা মত পাওয়া যাচ্ছে না। ডলার বিক্রি করতে আসা মানুষের সংখ্যা কম।
এবারে হজ শেষে যাত্রীদের নিয়ে দেশে প্রথম ফ্লাইটটি আসে গত ১৪ জুলাই রাতে। এরপর থেকে হাজিদের ফিরে আসা চলছে। হজের সময়ে খরচ না হওয়ায় ডলার সাধারণত খোলা বাজারে বিক্রি করেন তারা। এজন্য এসময়ে খোলা বাজারে কাগুজে ডলারের সরবরাহ বেশি থাকে। কিন্তু এবার সেটি দেখা যাচ্ছে না। মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা জানিয়েছেন, ডলার বিক্রি করতে আসছেন না তেমন কেউ। আবার ব্যাংকও নগদে ডলার বিক্রি করছে খুবই কম। সোমবার বেলা দেড়টার দিকে পল্টনের হক মানি এক্সচেঞ্জে ডলার কিনতে এসে না পেয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে এলিফেন্ট রোড থেকে আসা অভি আহমেদকে। তিনি বলেন, ভাগ্নে আমেরিকা যাবে। তাই কিছু ডলার কিনতে আসছিলাম। হাজার খানেক লাগবে বলায় তারা (মানিএক্সচেঞ্জের কর্মীরা) জানাল ডলার নেই। আরও দুটিতে গিয়েছিলাম, পাইনি। এখন দেখছি ভেঙে ভেঙে (অল্প অল্প করে) কিনতে হবে। এদিন ব্যাংকের নগদ ডলার বিক্রির দরও ছিল ঊর্ধ্বমুখী। সোশ্যাল ইসলামী ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ১০২ টাকায় নগদে ডলার বিক্রি করেছে। মেঘনা ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০১ টাকায় বলে ব্যাংকগুলোর ওয়েবসাইট ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ওয়েবসাইটে তথ্য দিয়েছে। এছাড়া ব্যাংকের ডলার বেচাকেনায় অনুমোদিত প্রায় সব ব্যাংকের এডি শাখাগুলো ৯৯ টাকার উপরে নগদে ডলার বিক্রি করছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটের দেওয়া তথ্য বলছে।
এদিকে আন্তঃব্যাংক ডলারের বিনিময় হার গতকাল ছিল ৯৪ দশমিক ৪৫ টাকা। আর বৈদেশিক বাণিজ্যে ডলারের বিনিময় হার ছিল ৯৪ দশমিক ৫০ টাকা। যদিও এ দরে ব্যাংকগুলো থেকে কেউ ডলার কিনতে পারছেন না বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। আমদানির জন্যও তাদের ১০০ টাকা দিয়েই ডলার কিনতে হচ্ছে ব্যাংকের কাছ থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি চাপে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় ক্রমাগত মান হারাচ্ছে টাকা। ২০২১ সালের জুনের শেষে ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।