Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হেমন্তে শিশুর যত্ন

আলম শামস | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ষড় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। রূপের তার নেইকো শেষ। গ্রীষ্ম ও বর্ষার পর আসে শরৎ। আর শরৎ পেরুলেই হেমন্ত। হিম থেকে এসেছে হেমন্ত। তাই হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এ দুমাস জুড়ে হেমন্তকাল। এ সময় কখনো হিমহিম শীত আবার কখনও গরম। রাতের শুরুতে গরম লাগলেও শেষ রাতে শীতে কাঁপুনি ধরিয়ে দেয়। তাই ঋতু পরিবর্তনের এ সময় আবহাওয়ার রূপ বদল হচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। সেজন্য ঋতু পরিবর্তনের এ সময় স্বাস্থ্যের দিক থেকে সবারই সতর্ক থাকা উচিত। বিশেষ করে শিশুদের বেলায় এখন একটু বেশি যতœ নেয়া দরকার। আমাদের একটু অবহেলার কারণে অসুস্থ হতে পারে প্রিয় শিশু সন্তানটি। তাই প্রতিটি মায়ের উচিত এসময় শিশুর প্রতি বাড়তি নজর দেয়া। এ সময়ে শিশুর খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পোশাক নির্বাচনের সময় বিশেষ যতœবান হওয়া দরকার।
হেমন্তে শিশুর পরিচর্যা প্রসঙ্গে রাজধানীর হাজিপাড়াস্থ প্যানাসিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের শিশু চিকিৎসক ডা. জহুরুল হক সাগর বলেন, ঋতু পরিবর্তনের এ সময় ছোটদের মৌসুমজনিত কারণে নানারকম রোগ দেখা দিতে পারে। আর বাচ্চারা বড়দের তুলনায় বেশি স্পর্শকাতর। তাই এ সময় শিশুর প্রতি বিশেষ যতœবান হলে অনেক সমস্যা সহজেই এড়ানো সম্ভব। এ সময় দিনের বেলায় বেশ গরম পড়ে। দিনে শিশুদের প্রয়োজন প্রচুর পানীয় খাবার। মায়ের হাতের তৈরি নানারকম ফলের জুস, লেবুর শরবত ও ডাবের পানি শিশুর শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এতে করে শিশু ঘেমে গিয়ে যে পরিমাণ পানি শরীর থেকে বের হয়ে যায়, তার ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়, সেই সঙ্গে দিতে হবে শিশুর স্বাভাবিক খাবার। এছাড়া একটু গরম থাকলে শিশুরা খেতে চায় কম। তাই শিশুকে খাওয়ার ব্যাপারে জোর করা উচিত নয়, শিশু খেতে চায় এমন খাবার দিন।
যদি শিশু ঘেমে যায়, তবে শিশুর কাপড় পাল্টে দিতে হবে, ঘেমে যাওয়া শরীর পাতলা ও নরম কাপড় দিয়ে মুছে দেয়া উচিত।
এ সময় শিশুকে প্রতিদিন গোসল করানো ভালো। আর গোসলে প্রতিবার সাবান ব্যবহার না করাই ভালো। শিশুর কোমল ত্বকের ওপর এক ধরনের সাহায্যকারী ব্যাক্টেরিয়া থাকে, তা অত্যধিক সাবান ব্যবহার করে নষ্ট না করাই ভালো। কারণ এরা নানারকম সংক্রমণ থেকে শিশুর ত্বককে রক্ষা করে। তবে শিশুর শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, এমন ব্যবস্থা সব সময় রাখতে হবে।
এ সময়ে শিশুকে হালকা সুতির জামা পরাবেন, এমনকি বেড়াতে যাওয়ার সময়ও। শিশু আরাম পাবে এমন পোশাক নির্বাচন করুন। আজকাল বেশির ভাগ মা বেড়াতে যাওয়ার সময় শিশুকে ডায়াপার পরিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, শিশুর ত্বকের যে স্থানে সবচেয়ে বেশি ফুসকুড়ি হয়, তা হলো ডায়াপারে আবৃত স্থান। তাই ঘন ঘন ডায়াপার বদলে দেবেন, দীর্ঘক্ষণ ধরে এক ডায়াপার পরিয়ে রাখা যাবে না। কাপড়ের ডায়াপার ব্যবহার করলে সেটাকে প¬øাস্টিকের প্যান্ট দিয়ে ঢাকা ঠিক নয়। যদি ডায়াপার আবৃত স্থানটি লাল হয়, তাহলে ডায়াপার পরানো বন্ধ করতে হবে।
অনেক মা শিশুর শরীরে পাউডার মাখিয়ে দেন, এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর। অনেক সময় পাউডার শিশুর কোমল ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।
এ সময়ে শিশুর শরীরে তেল কম ব্যবহার করা উচিত। কারণ বেশি বেশি তেলের কারণে শিশুর শরীরে জীবাণুরা বাসা বাঁধতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, শিশুর শরীরে অহেতুক কৃত্রিম প্রসাধনী বা উজ্জ্বল রঙের পোশাক কিংবা মোটা কাপড়ের পোশাক না পরানো ভালো।
ঋতু পরিবর্তনের সময় আমাদের অনেকেরই শরীর অসুস্থ হতে দেখা যায়। শিশুদের বেলায় একটু বেশি সমস্যা হয়। একটু সতর্ক ও সচেতন হলেই বছরের সব সময় আপনার শিশু থাকবে সুস্থ ও সুন্দর। হেমন্তের শীতল বাতাসে আপনার শিশুকে সুস্থ-সবল রাখতে মায়েদের আন্তরিকতাপূর্ণ যতœ ও সচেতনতাই যথেষ্ট। সেই সঙ্গে বাবাদেরও সন্তানের প্রতি বাড়তি খেয়াল রাখা উচিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন