Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এবার চট্টগ্রাম বন্দরে আটক মদের চালান

মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি : সক্রিয় জালিয়াতচক্র : খালাস নেয়া ২ কনটেইনারে শুল্কফাঁকি ২৫ কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে মিথ্যা ঘোষণা এবং জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে শুল্কফাঁকি দেয়া চক্র ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এবার বন্দরের ভেতর থেকে আটক করা হয়েছে বিদেশি মদের আরও একটি চালান। গতকাল রোববার নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে সুতার ঘোষণায় আনা কনটেইনারটি আটক করে কাস্টমস। এ নিয়ে গত দুই দিনে বিদেশি মদের তিনটি বড় চালান আটক করা হলো। শনিবার আটক দুটি কনটেইনারের মাধ্যমেই সরকারের প্রায় ২৫ কোটি টাকা শুল্কফাঁকি দেয়া হচ্ছিল। গতকাল আটক কনটেইনারটির শতভাগ কায়িক পরীক্ষা শেষে শুল্কফাঁকির পরিমাণ জানা যাবে বলে জানিয়েছেন কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা।

এদিকে কয়েক ঘণ্টার মাথায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা বিদেশি মদের বড় তিনটি চালান উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। তিনটি চালানই আইপি জালিয়াতির মাধ্যমে খালাস করা হচ্ছিল। দুটি চালান বন্দর থেকে খালাস করে নেয়া হয়। আর একটি খালাসের আগেই ধরা পড়লো। এ জাল-জালিয়াতির সাথে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউস এবং সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের অসাধু কিছু কর্মচারী জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর তা না হলে এত ঘাট পার হয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে দুটি কনটেইনার বের করে নেয়া কখনোই সম্ভব হতো না।

শুল্কফাঁকি দিতে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমাদনির পাশাপাশি জালিয়াতির মাধ্যমে বন্দর থেকে পণ্য বের করে নেয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। তবে সাম্প্রতিককালে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কঠোর নজরদারির কারণে জালিয়াত চক্রটি কিছুটা কোণঠাসা হয়। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মিথ্যা ঘোষণার বড় চালান ধরা পড়ে। যন্ত্রাংশ ও সুতার নামে বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মূল্যবান মদের বিশাল চালান আমদানির ঘটনায় জালিয়াত চক্র ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারা জানান, এ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এর সাথে বন্দর ও কাস্টম হাউসের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শনিবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকায় খালাস করে নেয়ার পথে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে দুটি কনটেইনার আটক করে র‌্যাব। কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, পাবনার ঈশ^রদী ইপিজেডস্থ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বি এইচ কে টেক্সটাইলস মিল লিমিটেড চীন থেকে মেশিনারিজ ঘোষণা দিয়ে এক কনটেইনার পণ্য আমদানি করে। আমদানিকৃত পণ্য খালাসের জন্য সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নগরীর ডবলমুরিং থানার কে বি দোভাষ লেইনের জাফর আহমদ গত ২০ জুলাই কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। পণ্য চালানটি আমদানির লক্ষ্যে বেপজা হতে আইপি ইস্যু করা হয়।

একইভাবে কুমিল্লা ইপিজেডের হাশি টাইগার কোম্পানি লিমিটেড চীন থেকে সুতা আমদানির ঘোষণা দিয়ে এক কন্টেইনার পণ্য আমদানি করে। ২০ জুলাই একই সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ওই চালানটি খালাসের জন্য বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। ২০ জুলাই উভয় পণ্য চালানের শুল্কায়ন সম্পন্ন করা হয়। এর মধ্যে শুক্রবার রাত ৯টায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ এআইআর শাখার কাছে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য চালানের খবর আসে। ততক্ষণে দুটি চালান বন্দর থেকে খালাস হয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়।

কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, চালান দুটির আইপি বেপজার ওয়েবসাইটে যাচাই করে দেখা যায় তা জাল। এছাড়া পণ্য দুটি চট্টগ্রাম বন্দরের স্ক্যানিং মেশিনে স্ক্যান করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জাল স্ক্যান দলিল তৈরি করে তা গেইট ডিভিশনে দাখিলের মাধ্যমে জালিয়াতি করে পণ্য চালান দুটি বাইরে নিয়ে যায়। শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত কনটেইনার দুটির শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে ১৩শ’ ৩০ কার্টনভর্তি ৩১ হাজার ৬২৫ দশমিক ৫ লিটার বিদেশি মদ পাওয়া যায়। যার আনুমানিক শুল্কায়নযোগ্য মূল্য চার কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আলোচ্য পণ্য চালান দুটির মাধ্যমে শুল্ক ও রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ ২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

এদিকে গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরে আরও একটি কনটেইনারটির সন্ধান পায় কাস্টমস হাউস। কাস্টম হাউসের এআইআর শাখার ডেপুটি কমিশনার সাইফুল হক জানান, নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের এক নম্বর সেক্টরের ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিডি কোম্পানি লিমিটেডের নামে চালানটি আমদানি করা হয় চীন থেকে। ঘোষণা দেয়া হয় পলিস্টার আমদানির। চালানটি গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। আগের দুটি চালানের মতো এ চালানের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টও একই ব্যক্তি। চালানটি শতভাগ কায়িক পরীক্ষার পর মদের পরিমাণ ও শুল্কফাঁকির পরিমাণ জানা যাবে বলে জানিয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ