Inqilab Logo

সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সড়কে ভুমিষ্ঠ শিশুর মা-বাবা নিহত ট্রাক চালকের ছিল না লাইসেন্স : হেলপার ঘুমাচ্ছিল চালক ছিল ক্লান্ত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

ময়মনসিংহের ত্রিশাল মহাসড়কে চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত বেপরোয়া ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে বাবা-মাসহ এক সন্তানের নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক ট্রাকচালক মো. রাজু আহমেদ ওরফে শিপনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। চালকের হালকা যানের লাইসেন্স থাকলেও ছিল না ভারি যানবাহন চালানোর লাইসেন্স। ‘ট্রাকটির ধারণ ক্ষমতা ৭ টন হলেও দুর্ঘটনার সময় ওজন ছিল সাড়ে ১৩ টন। ট্রাকটির ফিটনেস সার্টিফিকেটও ছিল মেয়াদউত্তীর্ণ।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। র‌্যাব জানায়, দুর্ঘটনার আগে ট্রাকের হেলপার ঘুমাচ্ছিলেন। এ সময় পেছন থেকে আসা একটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে বামে চাপলে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ট্রাকটি তাদের ওপর উঠিয়ে দেয় চালক রাজু। রাজু ২০০২ সালে যশোরেরও দুর্ঘটনার শিকার হয়। ওই দুর্ঘটনায় তার বাম পা মারাত্মকভাবে জখম হওয়ার ফলে চালক প্রায় ৬ বছর গাড়ি চালায়নি। গত ১০ বছর ধরে নিয়মিত বিরতিতে ট্রাক চালাচ্ছেন। গত ১৬ জুলাই দুপুরে ত্রিশাল উপজেলার রায়মনি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম তার আট মাসের অন্তঃসত্তা স্ত্রী ও তার এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে রাস্তা পারাপারের জন্য মহাসড়কের পাশে অবস্থানকালীন ময়মনসিংহগামী একটি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে তাদের চাপা দেয়। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩৫), তার অন্তঃসত্ত¡া স্ত্রী রতœা বেগম (২৬) ও তার তিন বছর বয়সী কন্যা সন্তান সানজিদা আক্তারকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের নেওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করে। দুর্ঘটনার সময়, অন্তঃসত্ত¡া রতœা বেগমের ওপর দিয়ে ট্রাক চলে যাওয়ায় চাকার চাপে গর্ভে থাকা কন্যা সন্তান ভ‚মিষ্ঠ হয়। ভ‚মিষ্ট শিশুটিকে আহত অবস্থায় স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। শিশুটি এখনো একটি হাসপাতালে চিৎিসাধীন। এ ঘটনায় নিহত জাহাঙ্গীর আলমের বাবা বাদী হয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানায় সড়ক পরিবহন আইনের ৯৮/১০৫ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন।

শিশুটি অলৈৗকিকভাবে ভ‚মিষ্ট ও বেঁচে যাওয়ায় একদিকে যেমন চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। তেমনি শিশুর তার মা-বাবার মৃত্যুর ঘটনায় হতবিহল হয়ে পড়ে পুরো দেশ। র‌্যাব দুর্ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৪ এর অভিযানে সোমবার রাতে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে ট্রাকচালক মো. রাজু আহমেদ ওরফে শিপনকে গ্রেফতার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে রাজু জানায়, গত ১১ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত টানা ট্রাক চালিয়েছেন। এ কারণে তিনি কিছুটা ক্লান্ত ছিলেন। অন্যদিকে দুর্ঘটনার আগে ট্রাকের হেলপার ঘুমাচ্ছিলেন। এ কারণে বামে দাঁড়িয়ে থাকা নিহতদের তিনি দেখাননি বলে দাবি করেন। কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডের কাছে পৌঁছালে রাস্তা পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা নিহত জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী-সন্তানকে চাপা দেয়। দুর্ঘটনার পর রাজু কৌশলে ঢাকাগামী একটি বাসে উঠে। নেমে যায় ময়মনসিংহের বাইপাসে। পরে মুক্তাগাছা হয়ে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পৌঁছায়। সেখান থেকে রাজু তার পরিচিত বিভিন্ন ট্রাক চালকের ট্রাকে উঠে আত্মগোপনে থাকে। সোমবার রাতে একটি ট্রাক সাভারে পৌঁছালে সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।



 

Show all comments
  • Md. Yasin ২০ জুলাই, ২০২২, ৯:০৫ পিএম says : 0
    আল্লাহ যাকে ইচ্ছা রাখেন। যাকে ইচ্ছা মারেন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ