Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বাড়ছে ডিজিটাল প্রতারণার ভয়ঙ্কর ফাঁদ

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

সারা দেশে সক্রিয় ৫০০ চক্র : কারাগার থেকে বেরিয়ে ফের একই অপরাধ করছে
নানা কৌশলে ভয়ঙ্কর ডিজিটাল প্রতারণার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সময়ের সঙ্গে বাড়ছে প্রতারকের সংখ্যা। বদলাচ্ছে প্রতারণার ধরণ। ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া ও মোবাইল ফোনে ওৎপেতে থাকা প্রতারকরা টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিঃস্ব করছে মানুষকে। এমন সব প্রতারণার ঘটনা ঘটছে -অনেকে সামাজিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে চেপে যাচ্ছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, অবস্থাটা এমন-যেন প্রতি এক গজ দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে একেকজন প্রতারক। তারা বলছেন, এদের খপ্পর থেকে দূরে থাকার একমাত্র মাধ্যম সচেতনতা।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, সঙ্ঘবদ্ধ চক্রের প্রতারণার জালে বন্দি হয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে মানুষ। জমি লিজ, প্লট বিক্রি, চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা, এমএলএল ব্যবসার আড়ালে প্রতারণা, পে-অর্ডার প্রতারণা, অনলাইন প্রতারণাসহ হরেক রকম প্রতারণা এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ, আর্থিক জালিয়াতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করে দেয়ার আশ্বাস, আবাসন ব্যবসা, লোভনীয় চাকরির অফারে বিদেশে লোক পাঠানো, সাইবার হ্যাকিং, ভুয়া জমি-ফ্ল্যাট দেখিয়ে প্রতারণা এবং সাইবার অপরাধই বেশি হচ্ছে।

একজন দায়িত্বশীল গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, ভার্চুয়াল প্রতারণার শিকার হওয়ার পরও ৭০ ভাগই মামলা করতে চান না। ভয়ঙ্কর সব প্রতারণার অভিযোগ থাকলেও নেই প্রতিকার। মামলার পর গ্রেফতার হলেও দ্রæত জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠছে চক্রের সদস্যরা। শুধু রাজধানীতে পাঁচ শতাধিক প্রতারক চক্র সক্রিয়। ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত শুধু র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছে ৪ সহস্রাধিক প্রতারক। এর মধ্যে ডিজিটাল প্রতারকই বেশি।

তিনি বলেন, সাধারণত সহজসরল মানুষই তাদের লক্ষ্য। সুযোগ বুঝেই নানা ছলচাতুরি ও মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে তারা প্রতারণা করছে। এ ধরনের প্রতারক চক্রের সদস্যরা পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে প্রায় দিনই গ্রেফতার হচ্ছে। গ্রেফতারের পর এদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগীরা। দুই অথবা তিন মাস পর তারা জামিনে বেরিয়ে আবারও প্রতারণা শুরু করে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ইনকিলাবকে বলেন, র‌্যাবের হাতে বহু প্রতারক চক্র গ্রেফতার হয়েছে। বিশেষ করে চাকরি দেয়ার নামে এবং অনলাইনে ব্যবসা করার নামে প্রতারণা সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। এদেরকে র‌্যাব গ্রেফতার করছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তিন বিদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়। এরা বিভিন্ন বিত্তশালী ব্যক্তিকে টার্গেট করে কৌশলে ফাঁদ পেতে অভিনব কৌশলে হাতিয়ে নিত টাকা-পয়সা। এরা এক ধরনের বাক্স (ম্যাজিক বক্স) থেকে টাকাকে ডলারে রূপান্তরের কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছে লোকজনের কোটি কোটি টাকা। লোভ পরিহার করলে ভার্চুয়াল প্রতারণা থেকে অনেকটা মুক্ত থাকা সম্ভব।

পিবিআই’র বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ডিজিটাল প্রতারকরা এতটাই সক্রিয় যেন প্রতি দুই হাত দূরে একেকজন প্রতারক দাঁড়িয়ে আছে। তারা ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে ভার্চুয়াল প্রতারণার টোপ দিচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রতিনিয়ত প্রতারক চক্রের সদস্যরা গ্রেফতার হচ্ছে। যতটা গ্রেফতার হচ্ছে এর অনেক গুণ বেশি প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, এদের খপ্পর থেকে মুক্ত থাকতে হলে সচেতনতার বিকল্প নেই। শুধু আইন প্রয়োগ বা অপরাধীদের গ্রেফতার করে এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছে, জিনের বাদশা : শহিদুল ইসলাম (ছদ্মনাম) অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তিনি একটি বিজ্ঞাপন দেখেন, যেকোনো সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে জীনের বাদশা। বিজ্ঞাপনে দেয়া মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে তাকে জানানো হয়, ২০০১ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তিনি সেটা করার পর একজন তাকে ফোন করে বলেন দরবেশ হুজুর তার সঙ্গে কথা বলবেন এবং জিনের বাদশাকে ব্যবহার করে তার মনোবাসনা পূরণ করবেন। এভাবেই শুরু। কয়েক মাসে জীনের বাদশা জাহানারার সঙ্গে নিয়মিত কথাবার্তা চালাতে থাকে। একপর্যায়ে তাকে বলা হয় জিনের বাদশা তার প্রতি সদয় হয়েছেন এবং তার সঞ্চয়ের টাকা দ্বিগুণ করে দিতে রাজি হয়েছেন।

পরে বিকাশের মাধ্যমে কয়েক কিস্তিতে শহিদুল ইসলাম ২৫ লাখ টাকা তুলে দেন কথিত ওই জিনের বাদশার হাতে। এই টাকা ছিল তার সারা জীবনের সঞ্চয়। তার কাছে রাখা কিছু সঞ্চয়পত্রও তিনি ভাঙিয়ে নেন। শুধু তাই না, জীনের বাদশাকে দেয়ার জন্য তিনি তার এক প্রতিবেশীর কাছে ঋণের জন্য হাত পাতেন। ওই প্রতিবেশী যখন তার ছেলেকে ঘটনাটা জানিয়ে দেন তখন পুরো ব্যাপারটা বেরিয়ে আসে। ছেলে এ নিয়ে হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা করেন যে, প্রতারকদের একটি চক্র তার মাকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

ভুয়া ফেসবুক আইডি : স¤প্রতি ভুয়া ফেসবুক আইডি দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। তিনি ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে নারীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের পর তাদের প্রলুব্ধ করে পুরুষ ক্লায়েন্টদের চাহিদামতো সরবরাহ করত। বিষয়টি সিআইডি মনিটরিং সেল দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করছিল। নিজস্ব প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মনিটরিং সেল তাকে চিহ্নিত করে আটক করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডিজিটাল

১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ