Inqilab Logo

সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জুনেই সরকারের ঋণ ১১ মাসের দ্বিগুণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

ব্যয়ের চাপ তীব্র হলেও অর্থের জোগান সীমিত। তাই টাকার সংস্থানে সরকার। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে লাফিয়ে বাড়ছে ঋণ। গেল অর্থবছরের ১১ মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার যে ঋণ নিয়েছে, শেষ মাস জুনেই নিয়েছে তার চেয়ে দ্বিগুণ অর্থ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অর্থবছরের শুরু ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ঋণ ছিল ২৬ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা।
আর শেষ মাস জুনে ঋণ নেয়া হয় ৪৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। বলা হচ্ছে, আমদানি ব্যয় মেটাতে অর্থের চাহিদা বাড়ছে। উন্নয়ন ব্যয় চালিয়ে যেতেও দরকার অর্থ। তবে, চাহিদার বিপরীতে অভ্যন্তরীণ আয় কম। তাই বৈদেশিক ঋণ এবং ব্যাংক ঋণে ঝুঁকছে সরকার। সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে অর্থ এলেও সুদ ব্যয় বাড়ায় তা অন্য ক্ষেত্রে ব্যবহার কঠিন হচ্ছে। কিছুদিন আগেও সরকারের ব্যাংকনির্ভরতা কম ছিল। উল্টো আগের নেয়া ধার পরিশোধ করেছে সরকার। তবে, সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে যে ঋণ নেয়া হয়েছে, তা গেল তিন অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং তার আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি।
ব্যাংক থেকে এ মুহূর্তে সরকারের ঋণ তেমন সমস্যা না বলে মন্তব্য করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, অর্থবছরের শেষ দিকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় বেড়ে যায়। কারণ, বরাদ্দকৃত অর্থ সব ব্যয় করতে হয়। পাশাপাশি সুদের হার কমানোয় ও নানা কড়াকড়ি আরোপের কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে। সেখান থেকে আর আগের মতো ঋণ পাচ্ছে না সরকার; এ জন্য সরকার এবার ব্যাংকঋণে ঝুঁকেছে।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নিয়ে থাকে সরকার। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা ও সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি ঋণ নেয়া হয়। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব খাত থেকে জোগান দেয়ার কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন তিনি। আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
ঘাটতির এই পরিমাণ আগের যেকোনো বছরের তুলনায় বেশি। অভ্যন্তরীণ উৎস ও বৈদেশিক ঋণ নিয়ে অর্থমন্ত্রীকে এই ঘাটতি পূরণ করতে হবে। ফলে এই অর্থবছরে ব্যাংক থেকেই ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ধার করার পরিকল্পনা রয়েছে। এবার বিদেশ থেকে ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৫ কোটি ঋণ করার পরিকল্পনা করেছে সরকার।
ব্যাংক থেকে সরকারের কত ঋণ : সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ব্যাংক ঋণের নিট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৮৭ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত অর্থবছর ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার চাহিদা ছিল বেশ কম। শুরুর দিকে সরকার ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল, পরিশোধ করেছিল তার চেয়ে বেশি। কিন্তু অর্থবছরের শেষে ব্যয় ব্যবস্থাপনায় যখন হিমশিম অবস্থা, তখন ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নেয় সরকার।
২০২১-২২ অর্থবছরের অর্থবছরের ৫ মাস অর্থাৎ নভেম্বর শেষে সরকার প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে মোট ১৮ হাজার ৭৫৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ঋণ নেয় সরকার। কিন্তু এরপর সরকারের ব্যাংক ঋণ কমে যায়। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা ঋণ নেয় সরকার। এরপর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণের পরিমাণ হুহু করে বাড়তে থাকে। ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ব্যাংক থেকে মোট ঋণ দাঁড়ায় ৩২ হাজার ৪৮৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ৩০ জুন শেষে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ স্থিতি ২ লাখ ৭৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ৩০ জুন শেষে যা ছিল ২ লাখ ২ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে গত অর্থবছরজুড়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ ৭২ হাজার ৭৪৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেয়া হয়েছে ৩১ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নেয়া হয়েছে ৪১ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কমেছে : করোনা মহামারিতে মানুষের আয় কমে গেছে। তা ছাড়া মুনাফার ওপর করের হার বৃদ্ধি এবং নানা ধরনের কড়াকড়ি আরোপের পর সঞ্চয়পত্র বিক্রিও কমে গেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। ১১ মাসে অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সরকার ঋণ নিয়েছে ৫৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। কারণ সমাপ্ত অর্থবছরের জুলাই-মে শেষে পুরোনো সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা, যা ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ হাজার ২২৯ কোটি টাকা কম। যা শতকরা হিসাবে ৫১ শতাংশ।
সেই হিসেবে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। ওই অর্থবছরে ১১ মাসে নিট বিক্রি ছিল ৩৭ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ