পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্বজনদের সঙ্গে পবিত্র ঈদুল আজহার আনন্দ ভাগ করে নিতে যারা গ্রামে গেছেন, তাদের অনেকেই এখনও ঢাকায় ফেরেননি। ঈদুল আজহার ছুটি শেষে গতকাল থেকে খুলেছে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমাসহ সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ের বিভিন্ন দফতর এদিন যথানিয়মে সকাল ৯টায় খুলেছে। হাতেগোনা তিনজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছাড়া অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী এবং সচিব ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে অফিসে আসেননি। ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে উপস্থিতির হার ছিল তুলনামূলকভাবে কম। পরস্পরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও খোশগল্প করে সময় পার করতে দেখা গেছে অনেককে।
মন্ত্রী এবং সচিব মধ্যে যারা ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে অফিস করেছেন তারা হলেনÑ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। এসব মন্ত্রণালয়ের সচিব ছাড়াও মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব সচিবালয়ে অফিস করেছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম পবিত্র হজে থাকলেও তার দফতর সব সময় খোলা রয়েছে। এবার বেশির ভাগ দফতর ও বিভাগের গেট খোলেনি, বাতি জ্বালানো হয়নি। তাই সেসব বিভাগে বা দফতরে বিরাজ করছে ভুতুড়ে পরিবেশ।
গতকাল মঙ্গলবার পবিত্র ঈদুল আজহার তিন দিনসহ মোট ৪ দিনের ঈদের ছুটির শেষে সরকারি অফিস-আদালত খুলেছে। সচিবালয়ে সকালে মন্ত্রণালয়গুলোতে খুব কম কর্মকর্তা-কর্মচারী এসেছেন। তারা সবাই ব্যস্ত ছিলেন পরস্পরের সঙ্গে ঈদের কুশল বিনিময়ে। প্রায় সব কক্ষের টেবিলগুলো ছিল ফাঁকা। কোরবানির ঈদের অবকাশে টানা ৫ দিন পর অফিস-আদালত খুললেও ছুটির আমেজ কাটেনি। সকাল ১১টার দিকে সচিবালয় ঘুরে অধিকাংশ কক্ষই ফাঁকা দেখা গেছে। অধিকাংশ দফতরের সচিব এদিন কার্যালয়ে ফিরে কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক যুগ্ম সচিব বলেন, মঙ্গলবার সরকারি অফিস খুললেও অনেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ছুটি নেয়ায় আগামী রোববার মূলত অফিসে কর্মচাঞ্চল্য ফিরবে। যারা গ্রামে যাননি তারা আজ থেকেই অফিস করবেন, তবে সেই সংখ্যা কিছুটা কম। কোভিড নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের পুরোটাই খোলা রাখা হয়েছে। শিক্ষা বিভাগের আংশিক খোলা ছিল।
প্রথম কর্মদিবসেও অফিস-আদালতে চিরচেনা ভিড় নেই। যারা ঢাকার বাইরে ঈদ উদ্যাপন করতে গেছেন, তাদের অনেকেই ১২ ও ১৩ জুলাই ঐচ্ছিক ছুটি নিয়েছেন। সে অনুযায়ী চলতি সপ্তাহেও ছুটির আমেজ থাকবে। আগামী রোববার নাগাদ কর্মব্যস্ততা পুরোপুরি শুরু হতে পারে অফিসপাড়ায়। ঈদের আগে সরকার নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করায় এবার মূলত এ কারণেই ছুটির পর প্রথম দিন সচিবালয়ে উপস্থিতি কম বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান। তারা বলছেন, প্রথম অফিস আজ খুলছে সে কারণে এবার উপস্থিতির হার ছিল ৪০ শতাংশেরও কম। ঈদের পর প্রথম দিন অফিসে এসে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদেরও একে অপরের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কোলাকুলি করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সচিবালয়ে ঈদ-পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়কালে সেতুমন্ত্রী বলেন, এ বছর ঈদে মানুষ ভালোভাবে গ্রামে গিয়ে ঈদ উদযাপন করেছেন। পদ্মা সেতুর কারণে এ যাতায়াত আরো সুন্দর হয়েছে। ঈদের সময় সড়কের অবস্থা সব জায়গায় ভালো ছিল। সড়কের জন্য কোথাও যানজট হয়নি। যেটা হয়েছে সেটা কিছু ব্যবস্থাপনার ত্রুটি বা সমন্বয়ের অভাবে। একটা রুটে সমস্যা বেশি হয়েছে সেটি হলো উত্তরাঞ্চল। কিন্তু সেটি হওয়ার কথা ছিল না। মন্ত্রী বলেন, বিজেএমইএ ও বিকেএমইএকে অনুরোধ করা হয়েছে পর্যায়ক্রমে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ছুটি দিতে। কিন্তু দেখা গেছে শুক্রবার ও শনিবার ছুটি দিয়েছে। এ কারণেও চন্দ্রার দিকে যানজট হয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর ৪৩ বার গাড়ি বিকল বা দুর্ঘটনা ঘটেছে।
কর্মকর্তারা জানান, এবার অধিকাংশ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী ও সচিবরা অসুস্থ, আবার অনেকই ঈদ করেছেন নিজের নির্বাচনী এলাকায়। সে কারণে অফিসে আসতে পারেননি। আগামী সপ্তাহে সকলেই আসবেন। অসুস্থতার কারণে অফিফে আসনেনি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক নির্বাচনী এলাকায়, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ নির্বাচনী এলাকায়, ভূমিমন্ত্রী তার নির্বাচনী এলাকায়, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বরিশালে আর উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম আজ বুধবার যাচ্ছেন ভারতে। অফিসে রয়েছে ঈদের আমেজ, যারা এসেছেন, তাদের দেখা গেছে শুভেচ্ছা-কুশলাদি বিনিময়ের পর খোশগল্প করতে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এ বিভাগের অধিকাংশ দফতর খোলা ছিল। তবে উপস্থিতির হার খুবই কম। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত মাঠ প্রশাসন অধিশাখায় কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম হজে গেছেন। তাই এ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিবসহ অপরাপর কর্মকর্তারা কাজ করছেন নিজ নিজ দফতরে। তাদের মধ্যে অনেকেই ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় পর্বটিও সেরেছেন।
সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, তথ্য অধিদফতর, ভূমি মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি কার্যালয়ে ঈদের ছুটির পর প্রথম অফিস করেছেন কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ে পাঁচ কর্মকর্তার মধ্যে দু’জন উপস্থিত রয়েছেন। বিভিন্ন কক্ষের টেবিল-চেয়ার ফাঁকা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই তিন দিন ঐচ্ছিক ছুটি নিয়ে আরো ৪ দিন ছুটি উপভোগ করছেন। তারা বলেন, ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসে এমনটাই হয়ে থাকে। কাজ খুব একটা হয় না। যারা অফিসে এসেছেন তারাও গল্প করে সময় কাটাচ্ছেন। আগামী রোববার থেকে সচিবালয়ের অফিস পুরোদমে শুরু হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, প্রায় অর্ধেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ঈদ-পরবর্তী প্রথম কার্যদিবসে উপস্থিত নেই। তারা যে কক্ষে অফিস করেন, সেখানকার চার কর্মকর্তার মধ্যে দু’জন এসেছেন। রোববার থেকে অফিসে কর্মতৎপরতা বাড়বে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, উপস্থিতি কম, অনেকেই ছুটি নিয়ে বাড়ি গেছেন। এ সপ্তাহের বাকি কর্মদিবস এভাবেই উপস্থিতি কম থাকবে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক উপসচিব বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাইনি। ঈদ এখানে ভালো কেটেছে। অন্য কলিগরা বাড়ি গেছেন, ছুটিতে আমরা এখানেই কাজ করছি। আইন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম ইনকিলাবকে বলেন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। মন্ত্রণালয়ে না এলেও উপস্থিতি মোটামুটি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দেখা গেছে, প্রতিমন্ত্রীর দফতর, সচিবের দফতর খোলা রয়েছে। প্রয়োজনীয় কাজ করছেন উপস্থিত কর্মকর্তারা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের দফতর খোলা থাকলেও জরুরি প্রয়োজনে সীমিত জনবল রাখা হয়েছে এখানে। সরকারের প্রচারযন্ত্র হিসেবে তথ্য অধিদফতরে কার্যক্রম চালু রয়েছে। তথ্য অধিদফতরের নিউজ রুম সারা বছরই খোলা থাকে। এখানে ঈদের দিনও পিআইডির নিউজ রুমে রোস্টার অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করেন। এখনও করছেন সেভাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।