ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
আইনের আবিষ্কার, সাংবিধানিক বিধিবিধান, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন মানবজাতির অগ্রাভিজানের ইতিহাসে স্মরণীয় অধ্যায়। এসবের ক্রমবিকাশ-ক্রমবিবর্তন, চর্চা ও চালুর মাধ্যমে আদি মানবসভ্যতা থেকে আধুনিক মানবসভ্যতা ও মানবজাতির অবস্থান-উত্থান বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছেছে। পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যভাগে বিখ্যাত রোমান স¤্রাট জাস্টিনিয়ান প্রজাসাধারণের কল্যাণের জন্য আইন প্রণয়ন করেন। প্রজাহিতৈষী স¤্রাট জাস্টিনিয়ানের আইন গ্রন্থের নাম ছিল “কার্পাসা জুরিস সিভিলেস”। এই গ্রন্থ সমগ্র পৃথিবীর দেওয়ানী আইনের আদিগ্রন্থ বলে জ্ঞানী-গুণী-আইনবিদগণ মনে করেন। স¤্রাট জাস্টিনিয়ানের মূল উদ্দেশ্য ছিল, গণঅধিকার সংরক্ষণ, নাগরিকদের ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আইনের আদি ইতিহাসে হাম্মুরাব্বী এবং আইনবিদ অস্টিনের নামও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। হাম্মুরাব্বী প্রবর্তিত আইন “কোড অব হাম্মুরাব্বী” (Code of Hammu Rabbi) নামে অভিহিত। আইনবিদ অস্টিনের মতে, “Law is the command of soverignty”। আইনের প্রবর্তন ও সংবিধান প্রণয়নের পূর্বেই আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের ইতিহাসে মানবজাতির জন্য সমুজ্জ্বল ও অনুকরণীয় ইতিহাস রেখে গেছেন রাসূলে খোদা, খাতিমুন্নাবিয়্যিন, রাষ্ট্রনায়ক হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সা.)। মহানবী মোহাম্মদ মোস্তফা (সা.)র- মদীনা সনদ মানবজাতির রাষ্ট্রপরিচালনা ও রাষ্ট্রশাসনের ইতিহাসে একটি মহান ঐতিহাসিক দলিল। ষষ্ঠ শতাব্দীর শুরুতে আরব নামের উষর মরুর ধূসর দেশে আল্লাহপাকের রাসূল হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সা.) শুধুমাত্র পবিত্র ইসলাম ধর্মের প্রচারকই ছিলেন না, ছিলেন একজন আদর্শ রাষ্ট্রনায়কও। মহানবীর পর খোলাফায়ে রাশেদীন এবং তৎপরবর্তীকালে ইসলামী সা¤্রাজ্যের মহান খলিফা ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ ইসলামী শিক্ষা, মহানবী প্রদর্শিত পথে এবং “মজলিশ-ই-শুরা”-র পরামর্শ মোতাবেক রাষ্ট্রপরিচালনা করে রাজনীতি ও রাজ্যশাসনের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। তখন বিশাল মুসলিম সা¤্রাজ্যে কোন লিখিত সংবিধান ছিল না কিন্তু ন্যায়-নীতি ও আইনের শাসন ছিল। মুসলিম শাসনামলের মজলিশই-শুরা-কে হাল আমলের মন্ত্রী পরিষদ বা উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। যদিও মান-মর্যাদা ও নীতি-নৈতিকতার প্রশ্নে মজলিশ-ই-শুরার মর্যাদা ছিল ঊর্ধ্বে। ব্রিটিশ ভারতে কথিত কানুনি শাসন থাকলেও কোন লিপিবদ্ধ সংবিধান ছিল না। যদিও সরকার ও প্রশাসন ছিল। ব্রিটিশ-ভারতে ভিনদেশি-লুটেরা ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর প্রতি সুবিচার করেনি, অবিচার ও জুলুম-নির্যাতনই করেছে।
১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তির পর নবীন রাষ্ট্র পাকিস্তান ১৯৫৬ সালে প্রথমবারের মতো সংবিধানের আওতায় আসে। ’৫৬’র সংবিধানে “পার্লামেন্টারি ফর্ম অব গভর্নমেন্ট”-এর কথা বলা ছিল। ’৫৮ সালে সামরিক বাহিনীর প্রধান আয়ুব খান দেশব্যাপী সামরিক আইন জারি করে সংবিধান স্থগিত-বাতিল করে দেশের সর্বময় ক্ষমতার মালিক-মুখতার হন। ১৯৬২ সালে মারি কনভেনশন ডেকে মুসলিম লীগকে পকেটস্থ, অতঃপর গলাঃধকরণ করে তার মর্জি মত যে আয়ুবী সংবিধান প্রণয়ন করান তা রাষ্ট্রপ্রতি শাসিত বা ’৬২ সালের সংবিধান নামে অভিহিত। এই সংবিধানের অধীনে জেনারেল এএম ইয়াহিয়া খানের সামরিক ফরমান-“লিগেল ফ্রেমওয়ার্ক ওর্ডার-এলএফও”-এর আওতায় ১৯৭০ সালে পাকিস্তানে প্রথমবারের মতো সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন সেই সাংবিধানিক বিধিবিধান মোতাবেক পাকিস্তানের আইন সভা ছিল দ্বি-কক্ষবিশিষ্টÑ কেন্দ্র ও প্রাদেশিক। কেন্দ্রে গণপ্রতিনিধিগণের পদবি ছিল-এমএনএ-মেম্বার অব দি ন্যাশনাল এসেম্বলি এবং প্রদেশে এমপিএ-মেম্বার অব দি প্রভিনসিয়াল এসেম্বলি। ’৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে কেন্দ্রে ও প্রদেশে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তানের ক্ষমতালিপ্সু সামরিক জান্তা এবং উচ্চাভিলাষী আমলাতন্ত্র গণমানুষের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। বরং আলোচনার নামে টালবাহানা করে এতদঞ্চলে সৈন্য সমাবেশ করে ’৭১’র ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে অপারেশন “সার্চ লাইট” নামে বাঙালি নিধনযজ্ঞে মেতে উঠেন ফৌজি শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান, যার ফল আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক দেশপ্রেমিক চৌকস বাঙালি মেজর স্বদেশপ্রেম ও স্বদেশিকতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তখন, দেশ ও জাতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে ঘোষণা দিয়ে মহান মুক্তি যুদ্ধের দিক নির্দেশনা দেন।
’৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত এমএনএ এবং এমপিএদের নিয়ে গঠিত গণপরিষদই ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর বাংলাদেশের সংবিধান বিধিবদ্ধ, লিপিবদ্ধ ও রচনা করে দেশ ও জাতিকে উপহার দেন। স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ মহান গণপরিষদের সদস্যগণ জাতিকে যে সংবিধান উপহার দেন তা বিশ্বের লিখিত সংবিধানসমূহের মধ্যে একটি চমৎকার মানবিক দলিল। সংবিধান একটি জাতির আশা-আকাক্সক্ষা-ইতিহাস-ঐতিহ্য-কৃষ্টি-সভ্যতা-সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ এবং সকল আইনের উৎস ও আধার। বাংলাদেশের সংবিধানে তাই লিপিবদ্ধ আছে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, মানবাধিকার, সাম্য, মৈত্রী, সম্প্রীতির কথা। ন্যায়বিচার ও নাগরিকদের স্বার্থ সংরক্ষিত আছে এই সংবিধানে। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী এসেছে জনস্বার্থের কথা বলে। অথচ এখন দলীয়করণ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অশান্তি ও অবিশ্বাস, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, কারচুপি এবং সর্বোপরি একে অন্যের প্রতি আস্থাহীনতা ও অবিশ্বাসের কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠানে-“কেয়ারটেকার সরকার” ব্যবস্থার দাবি জোরদার। বিগত দিনে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে এই কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ ও মিত্রগণ আন্দোলন করেছিল। পনেরই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধানে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংযোজিত হয়েছিল বিএনপি সরকারের উদ্যোগেই।
‘৯০-এ এরশাদবিরোধী ছাত্র-গণআন্দোলনে দেশ ও জাতি ছিল ঐক্যবদ্ধ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় ঐক্যজোট অতঃপর ভেঙে খ-িত হয়ে ৮ দলীয় ঐক্যজোট, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সাত দলীয় ঐক্যজোট এবং বামদের পাঁচ দলীয় ঐক্যজোট রাষ্ট্র্রপ্রতিশাসিত সরকার পদ্ধতির পরিবর্তে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার এবং সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদকে হটিয়ে পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সামিল হয়। ১৫,৭, ৫ দলীয় তিন জোটের যুগপৎ আন্দোলনের ফলে সমগ্র দেশ ও জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। তিনজোট ঘোষিত রূপরেখার কোন সাংবিধানিক মূল্য ছিল না। কিন্তু রাজনৈতিক মূল্য ছিল অপরিসীম। তিনজোট এবং দুই নেত্রীর ঐকমত্য ও সমঝোতার কারণে সংবিধানে সংশোধনী এসেছিল। সরকারের কাঠামোগত পরিবর্তন এসেছিল। একনায়ককেন্দ্রিক-স্বৈরতান্ত্রিক প্রেসিডেন্টসিয়াল ফর্ম অব গভর্নমেন্ট-এর পরিবর্তে অধিকতর জবাবদিহিতামূলক পার্লামেন্টারি ফর্ম অব গভর্নমেন্ট বা মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সরকার পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল।
বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধিত হয়ে বর্তমানে ষোড়শ সংশোধনীর পর্যায়ে আছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার সংসদে “ব্রুট মেজরিটির” সুবাদে সুপ্রিমকোর্টের রায়ের আলোকে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করে, যা বাংলাদেশের সংবিধানে সংযোজিত ছিল। এখন সংবিধানের দোহাই দিয়ে সংবিধান থেকে শাসকদলের একচুলও না নড়া এবং সাংবিধানিক মৌলবাদ জাতীয় পর্যায়ে একটি বহুল আলোচিত বিষয়। সরকার ও সরকার প্রধান, সংবিধান এবং সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার প্রয়োজনে সরকারের বর্তমান অবস্থান এবং সংবিধান ও সাংবিধানিক ব্যাখ্যা বিষয়ে কিছু কথা বলা এই সংকটকালে একান্তই প্রাসঙ্গিক। সংবিধান এবং সাংবিধানিক কানুন মানুষের জন্যই এবং মানুষের তৈরি। মানুষের জন্যই সংবিধান। সংবিধানের জন্য মানুষ নয়। সাংবিধানিক মৌলবাদ ধর্মীয় মৌলবাদের চাইতেও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। ভারতের সংবিধান বিশারদ ননী ভাই পাল্কিওয়ালা (১৯২০-২০০২)-র মতে, ধর্মীয় মৌলবাদের মতো সাংবিধানিক মৌলবাদও ভয়ানক হতে পারে। সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদ সরকারামলে ১৯৮৬ এবং ১৯৮৮ সালে জাতীয় সংসদের নির্বাচন ও বাংলাদেশের সংবিধানের আওতা ও অধীনেই হয়েছিল। ’৮৬ এবং ’৮৮ সালের জাতীয় নির্বাচন জাতিকে কোন ফল দেয়নি। বরং এই দুটি নির্বাচনই এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসনকে বৈধতা দিয়েছিল, দীর্ঘস্থায়ী করেছিল।
যুক্তরাজ্যের কোন লিখিত ও লিপিবদ্ধ সংবিধান নেই। অথচ ব্রিটেনকেই বলা হয়, আধুনিক গণতন্ত্রের জন্মভূমি এবং এই ব্রিটেনেই প্রকৃতপক্ষে ওয়েস্ট মিনিস্টার টাইপের সংসদীয় পদ্ধতির সরকার বিদ্যমান। সেখানেই আবার পৃথিবীর অভিজাত ও প্রথাগত রাজতন্ত্র বিদ্যমান। তবে ব্রিটেনের রাজা, রাণী কিংবা প্রধানমন্ত্রীর চাইতে “হাউস অব কমন্স” শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। ব্রিটেনের পর উল্লেখ করা যায়, জাপান এবং ভারতের কথা। দুটি দেশেই সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। জাপানেও ব্রিটেনের মতো একটি অভিজাত রাজতন্ত্র বিদ্যমান। কিন্তু জাপানের স¤্রাট-সা¤্রাজ্ঞি-প্রধানমন্ত্রীর চাইতেও ক্ষমতার অধিকারী জাপানের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী সংস্থা “ডায়েট”। আমাদের নিকট প্রতিবেশি বিশাল ভারতেও সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা চালু আছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর চাইতে ভারতীয় লোকসভা-বিধানসভাই শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। ব্রিটেন-জাপান-ভারতে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার, সংসদীয় সংস্কৃতি, সংসদীয় রীতিনীতি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বিকশিত হয়েছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রধানও প্রাথমিক শর্ত পরমতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, সহিষ্ণুতা ও সহনশীলতা। অপরপক্ষে বিরোধী দল সরকারের একটি অংশ, সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা শত্রু নয়।
বাংলাদেশে ওয়েস্ট মিনিস্টার টাইপের সংসদীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও সংসদীয় সংস্কৃতি চর্চা বা চালু নেই। এখানে বিরোধীদল সরকারি দলের প্রধান শত্রু। এখানে বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হয় না। এখানে সরকারবিরোধী পত্রিকা, টিভি, বন্ধ করে দেয়া হয়। অথচ বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৯(১)-এ বলা আছে : “Freedom of thought and conscience is granted. ” বর্তমান সরকার ও সরকারি দল বারংবার সংবিধানের দোহাই দিলেও সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী চার মিনিটে শেষ করেছিল স্বাধীনতা উত্তর আওয়ামী লীগ সরকার। সংবিধানের উপক্রমনিকার অনুচ্ছেদ ১৮(২)-এ গনিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা রোধকল্পে বলা হয়েছে, 'The state shall adopt effective measures to prevent prostitution and gambling'. সংবিধানে জুয়া ও বেশ্যাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় আইনিব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও তা নেয়া হয়নি। বরং বেশ্যাবৃত্তি কান্দুপট্রি-টানবাজার থেকে বেরিয়ে সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে। জুয়া খেলাও রাজধানী থেকে গ্রামাঞ্চলে বিস্তৃত হয়েছে বিভিন্ন নামে। সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী মোতাবেক, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। এ দেশের শতকরা নব্বই ভাগ মানুষ যেখানে ইসলাম ধর্মের অনুসারী সেখানে রাষ্ট্র ইসলামের বিরুদ্ধেও কথা বলতে শোনা যায়।
দেশে একটি রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক সংকট বিদ্যমান। জাতীয় সংসদের বিগত নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও অবিতর্কিত ছিল না। একতরফা সিলমারা উৎসব গণতন্ত্র নয়। অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন এই প্রেক্ষিতে যথার্থই বলেছেন, ইলেক্ট্রক্রেসি-ডেমোক্রেসি নয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারও বলেছিল বিগত জাতীয় সংসদের নির্বাচন ছিল সাংবিধানিক নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। শাসকদল আওয়ামী লীগের শান-শওকত ও জাঁকজমকপূর্ণ বিগত কাউন্সিলে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার দুটি বার্তা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। এক. এই কাউন্সিল আগামী জাতীয় সংসদের নির্বাচনকে সামনে রেখে এবং দুই. আগামী জাতীয় সংসদের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে না। নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন। বর্তমান নির্বাচন কমিশন মেরুদ-হীন, মাজাভাঙা, অপরিণামদর্শী। সরকার ছাড়া কেউই এই কমিশনের উপর খুশি নয়। কমিশনের মেয়াদও শেষ। সরকারের উচিত রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে আলোচনা ও মত বিনিময় করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোট কেয়ারটেকার সরকার প্রসঙ্গে নমনীয় মনোভাব প্রকাশ করে এখন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলছে। গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক শাসন ও সমাজ ব্যবস্থার প্রয়োজনে বর্তমান সরকারের উচিত সাংবিধানের দোহাই পরিহার করে দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করা যা জাতিকে বিদ্যমান সংকট থেকে উদ্ধার করতে পারে।
লেখক : সিনিয়র এডভোকেট, হাইকোর্ট। সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাব। মুক্তিযোদ্ধা। কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।