পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল-হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল-মুলক, লা শারীকা লাক’- অর্থাৎ উপস্থিত ‘হে আমার আল্লাহ, উপস্থিত। উপস্থিত তোমার কোনো অংশীদার নেই, উপস্থিত। নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও নিয়ামত তোমার এবং রাজত্ব, তোমার কোনো অংশীদার নেই’- এই তালবিয়াহ ধ্বনি উচ্চারণ ও মহান আল্লাহ তা‘আলার এককত্ব ও সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে ১০ লক্ষাধিক হজযাত্রী আজ মিনা প্রান্তরে উপস্থিত হয়েছেন। শ্বেতশুভ্র পোশাকে আবৃত এসব হজযাত্রীর মিনায় উপস্থিতির মাধ্যমে তাদের ৫ দিনের তারবিয়াহ বা হজের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সুন্নতি পদ্ধতি অনুযায়ী আজ সূর্যোদয়ের পর হজযাত্রীদের মিনায় নিয়ে আসার কথা থাকলেও পথের জ্যাম এড়াতে স্থানীয় মোয়াল্লিমরা গতরাত থেকেই তাদের মিনায় নিয়ে আসা শুরু করেন। হজযাত্রীদের পরিবহনে নির্ধারিত বাসগুলোকে একাধিক ট্রিপ দিতে হয় বিধায় আগের রাত থেকেই পরিবহন শুরু হয়।
বিশ্বের বৃহত্তম তাঁবুর শহর মিনায় আজ হজযাত্রীরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন স্ব স্ব তাঁবুতে। তবে যারা মসজিদে খায়েফ বা কুয়েতী মসজিদের আশপাশে অবস্থান করছেন তারা সেখানে গিয়ে জামাতেও শরিক হতে পারবেন। হজযাত্রীরা ১০, ১১ ও ১২ যিলহজ কোন পথে জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করতে যাবেন তার পথনির্দেশিকা অনুসন্ধান ছাড়াও পাশেই অবস্থিত মোয়াইসমে কোরবানীর স্থান পরিদর্শন করতে পারবেন ২৫ নং সড়ক ধরে এগিয়ে গেলেই। এবার বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অধিকাংশ তাঁবুর অবস্থান মিনা ওয়াদী হাসপাতালের বাম পাশে, ৬৮ নং কিং ফাহাদ রোড ও ৬২ নং রোডের মাঝামাঝি এলাকায়। এখান থেকে হজযাত্রীদের টিনশেড পথে আসা-যাওয়া অনেকটা সহজ হবে বলে মনে করছেন হজ ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্টরা।
আজ এশা নামাযের পর থেকেই হজযাত্রীরা তাদের কাক্সিক্ষত আরাফাতের ময়দানে যাবার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করবেন। মোয়াল্লিমরা সাধারণত রাত ১০টার পর থেকে যে কোনো সময় তাদের মিনা তাঁবু থেকে আরাফাতে নিয়ে যাবেন। সেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে সুসজ্জিত তাঁবু। মূল হজ হবে সেখানেই। হজযাত্রীরা আরাফাতের ময়দানে তাদের জন্য নির্ধারিত তাঁবুতে ৯ জিলহজ তথা শুক্রবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন। এখানে তাদের ফজর ছাড়াও যোহর ও আসর নামাজ আদায় করতে হবে।
এবার আরাফাত ময়দানে পবিত্র হজের খুতবা দেবেন সউদী আরবের রাজনীতিক এবং দেশটির সাবেক বিচারমন্ত্রী শায়খ ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ঈসা। বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল-সউদ এক রাজকীয় ফরমানে এ বছর হজের খুতবার জন্য তাকে নিযুক্ত করেন। শায়খ ড. মোহাম্মদ বিন আব্দুল কারিম আল ঈসা বর্তমানে রাবেতা আল আলম আল ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক হেলাল অরগানাইজেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
এ বছরও হজের আরবি খুতবা বাংলাসহ মোট ১৪টি ভাষায় শোনা যাবে। হজের খুতবার বাংলা অনুবাদক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন দু’জন। তারা হলেন- মোহাম্মদ শোয়াইব রশীদ ও তার সহকারী খলিলুর রহমান। মোহাম্মদ শোয়াইব মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাদিসের ওপর পিএইচডি করছেন আর খলিলুর রহমান একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে পিএইচডি করেছেন।
আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থানের মাধ্যমে হজ আদায় করবেন ১০ লক্ষাধিক ভাগ্যবান। সেখানে তারা মহান আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি করে জীবনের সব গুনাহের ক্ষমা চাইবেন। গুনাহ মাফের মাধ্যমে তারা হয়ে উঠবেন বেগুনাহ বা মাসুম।
সূর্যাস্তের সাথে সাথে মাগরিব না আদায় করে হাজী সাহেবদের যাত্রা শুরু হবে মুযদালিফার উদ্দেশ্যে। সেখানে যাওয়া মাত্র মাগরিব ও এশা এক আজানে, দুই ইকামাতে আদায় করবেন তারা। এরপর মুযদালিফায় খোলা আকাশের নিচে মাথা খোলা অবস্থায় রাত্রীযাপন করতে হবে। ১০ যিলহজ সূর্যোদয়ের পর আবার মিনায় ফিরে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পূর্বে বড় জামারাতে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ, কুরবানী সম্পন্ন করার পর মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম পরিত্যাগ করবেন হাজী সাহেবরা। সুযোগ বুঝে মক্কায় গিয়ে ফরজ তাওয়াফ করতে হবে ৩ দিনের মধ্যে। ১১ ও ১২ যিলহজও হাজী সাহেবদের সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পর ৩টি জামারাতে ৭টি করে মোট ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। যারা সংক্ষেপ করতে চান ১২ যিলহজ সূর্যাস্তের পূর্বে মিনা ত্যাগ করবেন। নইলে ১৩ যিলহজ সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পর আবারও ৩টি জামারাতে ৭টি করে ২১টি কঙ্কর মেরে মিনা ত্যাগ করতে হবে।
পরিশেষে মক্কায় ফিরে বিদায়ের দিন বিদায়ী তাওয়াফের পূর্ব পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে প্রতি ওয়াক্তের নামাজ ও যত বেশি সম্ভব তাওয়াফে সময় কাটাবেন হাজী সাহেবরা। আল্লাহ তা‘আলা সকলকে সহীহ তরিকায় হজ পালন করে মাসুম বা গুনাহমুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।