পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
লোড-শেডিং দিতে সরকার বাধ্য হওয়ায় দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ^ব্যাপী জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সীমিত পরিসরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সরকার লোড-শেডিং দিতে হচ্ছে। গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। এ সময় তিনি শেখ জামাল ও রোজী জামালের নামে দুটি পৃথক ডরমেটরিও উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি আরো বলেন, পদ্মা সেতুর মতো স্থাপনা নিজেদের অর্থায়নে করতে পেরে আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি, আমরা পারি, বাংলাদেশ পারে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণেও আমরা সেটা প্রমাণ করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনার কারণে আমাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নানা সমস্যায় পড়েছি। এরপর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, আরও সমস্যা তৈরি করেছে। রাশিয়ার ওপর আমেরিকা ও ইউরোপের স্যাংশন সংকট আরও ঘনীভূত করেছে। এর প্রভাব সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও পড়েছে। এগুলো মোকাবিলা করেই আমাদের এগোতে হচ্ছে। এগুলো মোকাবিলা করে আমরা দেশটাকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, যুদ্ধের কারণে তেল, ডিজেল, এলএনজি সবকিছুর দাম অনেক বেড়ে গেছে। এখন বিদ্যুৎকেন্দ্র চালিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে গেছে। সবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে ফার্নেস অয়েলের মূল্য ছিল মাত্র ৭০৮ টাকা। সেটা ইউক্রেন যুদ্ধের পর হয়ে গেছে ১ হাজার ৮০ টাকা। অর্থাৎ ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এলএনজি যেটা মাত্র ১০ মার্কিন ডলারে ক্রয় করা হতো, যুদ্ধের ফলে সেটা এখন ৩৮ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ ২৮০ শতাংশ দাম বেড়ে গেছে। আমাদের কয়লাও ১৮৭ মার্কিন ডলার ছিল, এখন ২৭৮ মার্কিন ডলার। বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৬১ শতাংশ। ডিজেলের লিটার ৮০ মার্কিন ডলার ছিল তা এখন ১৩০ এ চলে আসছে। শোনা যাচ্ছে ৩০০ ডলার পর্যন্ত দাম বাড়তে পারে। ভোজ্য তেলেরও দাম বাড়ছে। প্রত্যেকটা জিনিষ যে গুলো কিনে আনতে হয় তার দাম অত্যাধিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতি কিউবিক মিটার এলএনজি ক্রয়ে সরকারের ব্যয় ৫৯ দশমিক ৬০ টাকা। কিন্তু আমরা সেটা গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করছিলাম মাত্র ৯ দশমিক ৬৯ টাকায়। যেটা সম্প্রতি ১১ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। তারপরও বিশাল অংকের ভুতর্কি রয়ে গেছে সেখানে। নবায়নযোগ্য জ¦ালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রতি ইউনিটে উৎপাদন ব্যয় ১২ দশমিক ৮৪ টাকা কিলোওয়াট ঘন্টা। কিন্তু একক প্রতি পাইকারি মূল্যে আমরা দিচ্ছি ৫ দশমিক ০৮ টাকায়। ফার্নেস ওয়েলের প্রতি একক ইউনিটের উৎপাদন ব্যয় হচ্ছে ১৭ দশমিক ৪১ টাকা। সেটাও আমরা ৫ দশমিক ০৮ টাকায় দিচ্ছি। ডিজেলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ৩৬ দশমিক ৮৫ টাকা সেখানেও আমরা ৫ দশমিক ০৮ টাকা দরে বিদ্যুৎ বিক্রি করছি। কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ১২ দশমিক ৩৭ টাকা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৫ দশমিক ০৮ টাকায়। অর্থাৎ সারা বিশ্ব এখন একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।
ডিজিটাল প্রযুক্তির ওপর এ সরকার বেশি গুরুত্ব দিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রযুক্তি তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশে সেই গ্রামে বসেও তরুণরা আজ অর্থ উপার্জন করতে পারছে। তরুণদের ডিজিটাল জ্ঞান বাড়াতে আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করে দিচ্ছি। বিশ্বের নাম করা প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের এখানে ব্যবসা করছে। আইসিটিকে আমরা এগিয়ে নিচ্ছি, যেন আমাদের ছেলেমেয়েরা অন্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। আমাদের এটাই লক্ষ্য, বাংলাদেশ একটা আধুনিক দেশ হবে।
বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের চেয়ে করোনার ভ্যাকসিন কার্যক্রমে বাংলাদেশ এগিয়ে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কোনও উন্নত দেশ একটা টিকাও বিনা পয়সায় দেয়নি। বিনা পয়সায় টেস্ট হয়নি। কিন্তু আমরা বিনা পয়সায় করেছি। ডাক্তার নিয়োগ, নার্স নিয়োগ, ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা বিনা পয়সায় করে দিয়েছি।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও একটি লক্ষ্য নিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই লক্ষ্য হলো, শোষিত-বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। যেন একটা মর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে চলতে পারি। অনেক বাধা এসেছে, কিন্তু আমরা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
পরিবারের শহীদ সদস্যদের স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ঘাতকরা গণতন্ত্র হত্যা করে মার্শাল ল জারি করেছিল। আমাকে দেশে আসতে দেয়নি। পরে জনগণের সাড়া পেয়ে দেশে আসি। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা ইনডেমনিটি অ্যাক্ট জারি করে সেই বিচার বন্ধ করে দিয়েছিল।
এ সময় চলতি বছরে নতুন করে ২ হাজার ৭১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় উভয় বিভাগের আওতায় ২ হাজার ৭১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করবে সেই ঘোষণা আমি দিচ্ছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি আজকেই এই ঘোষণাটা দিতে পারে, তাহলে দেশের মানুষের খুবই উপকার হবে। তিনি বলেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ২০২২ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতায় নতুন ২ হাজার ৫১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার ঘোষণা দিচ্ছি। এরমধ্যে রয়েছে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬৬৬টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১ হাজার ১২২টি, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৩৬টি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ১০৯টি, ডিগ্রি কলেজ ১৮টি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একইভাবে কারিগরি এবং মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের আওতাভুক্ত ৬৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিও ভুক্ত করার ঘোষণা দিচ্ছি। এরমধ্যে রয়েছে এসএসসি ভোকেশনাল অথবা দাখিল ভোকেশনাল ৯৭টি, এইচএসসি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি ২শ’টি, ডিপ্লোমা-ইন-এগ্রিকালচার দুটি, দাখিল মাদরাসা ২৬৪টি, আলিম মাদরাসা ৮৫টি, ফাজিল মাদরাসা ৬টি ও কামিল মাদরাসা ১১টি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।