Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সব থানা-কারাগারে বায়োমেট্রিক ডাটাবেজ প্রণয়নের নির্দেশ

‘কে প্রকৃত জহির’ রিটের রায় প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০২২, ১২:০০ এএম

অপরাধী ও কয়েদি শনাক্ত করতে হাতের আঙুল, তালু এবং চোখের মণি স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির ডাটাবেজ প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ইতঃপূর্বে এ বিষয়ে দেয়া হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায়ে বায়োমেট্রিক ডাটাবেজ চালু করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়।
গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের তৎকালীন ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দিয়েছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার ৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এ তথ্য জানিয়েছেন রিটের পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি রায় সম্পর্কে বলেন, মামলার ভুল আসামি জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে জারি করা পরোয়ানা অবৈধ এবং আইন-বহিভর্ভুত ঘোষণা করেছেন আদালত। সেই সঙ্গে ৩ দফা নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হচ্ছেÑ ১. বিদ্যমান ব্যবস্থার সঙ্গে সব থানায় আসামির হাতের আঙুল ও তালুর ছাপ, চোখের মণি স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির প্রচলন। ২. গ্রেফতারের পর আসামির সম্পূর্ণ মুখের ছবি ধারণ ও কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষণ। এবং ৩. দেশের সব কারাগারে আঙুল ও হাতের তালুর ছাপ, চোখের মণি সংরক্ষণের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ সিস্টেম চালু করা।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর খিলগাঁও থানায় দায়ের হওয়া একটি নাশকতার মামলায় প্রকৃত আসামি নোয়াখালী বসুরহাটের মোহাম্মদ জহির উদ্দিন নয়Ñ মর্মে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেয় পুলিশের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলার প্রকৃত আসামি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের আহসান উল্লাহর ছেলে মোদাচ্ছের আনছারী ওরফে মোহাদ্দেস।
২০২১ সালের ১০ মার্চ হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এক আদেশে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার কার্যকারিতা স্থগিত করেন। সেই সঙ্গে নোয়াখালীর জহির উদ্দিন ওই মামলার প্রকৃত আসামি কি না, তা তদন্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন। সংস্থাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলমের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, জহির উদ্দিনকে খিলগাঁও থানার মামলায় (নম্বর-১২(৪)১৩) গ্রেফতারি পরোয়ানার আসামি হিসেবে চিহ্নিত করার মতো পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জহির উদ্দিন প্রকৃতপক্ষে গ্রেফতারি পরোয়ানাধারী ব্যক্তি নয়। প্রকৃত আসামি মোদাচ্ছের আনছারী ওরফে মোহাদ্দেস।
রিটের কৌঁসুলি মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, রাজধানীর খিলগাঁও থানায় ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল দায়ের হওয়া মামলায় (নম্বর-১২(৪)১৩) পুলিশ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের শাহজাদপুর গ্রামের আহসান উল্লাহর ছেলে মোদাচ্ছের আনছারীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর মোদাচ্ছের তার নাম-ঠিকানা গোপন করে নিজেকে নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার আজগর আলী মোল্লা বাড়ি মসজিদ রোড এলাকার মোহাম্মদ আব্দুল কাদেরের পুত্র ‘মোহাম্মদ জহির উদ্দিন’ বলে পরিচয় দেন। এরপর ওই বছর ৩১ অক্টোবর মোদাচ্ছের জামিন পেয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে পালিয়ে যান। তিনি জহির উদ্দিন নামেই আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন।
এদিকে, পুলিশ তদন্ত শেষে জহির উদ্দিনসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল চার্জশিট দেয়। পরে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর জহিরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এ অবস্থায় জহির উদ্দিন তার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। রিটের শুনানি শেষে জহির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে জারিকৃত পরোয়ানার বিরুদ্ধে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে গত ২৮ জুন দেশের সব জেলখানায় কয়েদিদের শনাক্তে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইরিশ স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক ডাটা পদ্ধতি চালু করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে নাÑ এ মর্মে রুল জারি করেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে উপরোক্ত রায় দেন হাইকোর্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ