Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন্যায় সিলেটে জনপ্রতি বরাদ্দ সাড়ে ৮ টাকা, ৫০০ গ্রাম চাল ঢাকা উত্তর আ.লীগের থানা-ওয়ার্ডের সম্মেলন

সিলেট ব্যুরো: | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০২২, ১২:০০ এএম

গত ৬২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতে স্মরণকালের ভযাবহ বন্যার কবলে গোটা সিলেট। সদ্য গত হওয়া জুন মাসে ১৯৫৬ সালের পর এতো বেশি বৃষ্টির রেকর্ড নেই সিলেটে। সেই বৃষ্টিতে ডুবেছে সিলেট। বিরাজ করছে হাহাকার আর আর্তনাদ। বৃষ্টি যেমন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে, তেমনি বন্যা অতীতের সব রেকর্ড খান খান করে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে সিলেটকে। দেশের সঙ্কট, সমাধান ও অর্জনে অবদান রাখে সেই সিলেটের মানুষ আজ দিশেহারা। প্রকৃতির অমোঘ এক সত্যের মুখে দাঁড়িয়ে নির্মম পরিহাসে রয়েছে সিলেটে মাটি ও মানুষ। এ রকম অবস্থায় বন্যাক্রান্ত সিলেটের প্রায় ৩০ লাখ মানুষের জন্য জনপ্রতি বরাদ্দ মিলেছে সাড়ে ৮ টাকা করে। আর চাল বরাদ্দ এসেছে আধা কেজির মতো! সরকারি ত্রাণের কতই অপ্রতুল, বরাদ্দের অঙ্কে একেবারে প্রমানিত।
এদিকে সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, জুন মাসে সিলেটে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৮১৮.৪ মি.মি.। কিন্তু এ বছরের জুন মাসে এখানে ১৪৫৬.০২ মি.মি. বৃষ্টি হয়েছে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৩৭.৬২ মি.মি. বেশি। শতকরা হিসেবে প্রায় ৭৭.৭৮ ভাগ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে সদ্য বিদায় জুনে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘এবারের জুন মাসে বৃষ্টি হয়েছে অস্বাভাবিক। জুন মাসে গড়ে ২২ দিন বৃষ্টি হয়; কিন্তু এবার হয়েছে ২৮ দিন। এ মাসে বৃষ্টির পরিমাণ অনেক বেড়েছে। এর আগে ২০০৪ সালে জুন মাসে সর্বোচ্চ ১৩৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল।’ তিনি জানান, এ বছরের জুন মাসের ১৮ তারিখে ৩০৩.৬ মি.মি. বৃষ্টি হয়। এ ছাড়া একশ’ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে ১৭ (১০৯ মি.মি.) ও ২৭ জুন (১১০ মি.মি.)।
এই আবহাওয়াবিদ জানান, ১৯৫৬ সাল থেকে বৃষ্টিপাতের মোটামুটি পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড আছে সিলেটে। তবে ১৯৭১, ১৯৭৩, ১৯৮১ সালসহ পাঁচ বছরের জুন মাসের তথ্য নথিতে নেই। অর্থাৎ ৬২ বছরের জুন মাসের যে তথ্যাদি সংরক্ষিত আছে, সেগুলোর হিসেবে এ বছরের জুন মাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে।
তবে জুনে অস্বাভাবিক বৃষ্টির প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব আমরা ঠের পেতে শুরু করেছি।’
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যানুসারে, গত রোববার পর্যন্ত সিলেটে ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫ লাখ টাকা আসে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে। এ ছাড়া ১ হাজার ৬১২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়ে বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ লোকসংখ্যার সাথে ত্রাণ সহায়তার পরিমাণ ভাগ করলে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৩০ লাখ ক্ষতিগ্রস্থ লোকের প্রত্যেকের জন্য জনপ্রতি বরাদ্দ হয়েছে ৮ টাকা ৫৬ পয়সা। আর জনপ্রতি চাল বরাদ্দ হয়েছে ০.৫৩ কেজি। এর বাইরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে শিশুখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা, গোখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা এবং ২০ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সচেতন মহল মনে করছেন, সিলেটে সরকারি পর্যায় থেকে যে ত্রাণ সহায়তা এসেছে, তা খুবই অপ্রতুল। এক্ষেত্রে গাফিলতি আছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ত্রাণ সহায়তার এই পরিমাণ দেখে আমরা বিস্মিত, হতবাক। এটা একেবারেই অপ্রতুল সহায়তা। এদিকে, সিলেটে ত্রাণ সহায়তা হিসেবে আরও অর্থ চেয়েছে জেলা প্রশাসন। এলক্ষ্যে চিঠি পাঠানো হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, নগদ বিতরণের জন্য ৫০ লাখ টাকা, শিশুখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা এবং গো-খাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে পাঠানো হয়েছে চিঠি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ