পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিয়ানমারের আরকানে মুসলমান নারী ও শিশু নির্যাতন এবং নির্বিচারে গণহত্যা বন্ধের দাবিতে শুক্রবার চট্টগ্রামে বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠনের উদ্যোগে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। জুমার খুৎবায় ইমাম ও খতীবগণ মুসলিম নির্যাতন বন্ধের দাবি জানান। দোয়া করা হয় মিয়ানমারের নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য। জুমার পর বিভিন্ন এলাকায় বের হয় বিক্ষোভ মিছিল। এসব বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে অবিলম্বে মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে জোর দাবি জানানো হয়।
বাদ জুমা নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী মসজিদের উত্তর গেট চত্বরে এক বিশাল সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করে হেফাজতে ইসলাম। মিছিল-পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর বৌদ্ধ সন্ত্রাসী ও সরকারী বাহিনী যৌথভাবে সরাসরি হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে।
তিনি সে দেশের শাসকগোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী, খুনি ও মানবতার শত্রু উল্লেখ করে বলেন এ গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।
সমাবেশ থেকে আগামী ১ ডিসেম্বর ঢাকাস্থ মিয়ানমার দূতাবাস অভিমুখী গণমিছিল এবং ২ডিসেম্বর সীমান্ত জেলা কক্সবাজারে হেফাজতের উদ্যোগে মহাসমাবেশের ডাক দেওয়া হয়।
আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, বর্তমান হত্যাকাণ্ড অতীতের যে কোন সময়ের চাইতে মর্মান্তিক। যা বিশ্ব মিডিয়া এড়িয়ে যাচ্ছে। এমন পৈশাচিক আর নির্মমতার কোন নজীর নেই। তারা মুসলমানদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, নারীদেরকে যৌন নির্যাতন করে হত্যা করছে, মসজিদগুলি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, শিশুসহ সব বয়সী মানুষদেরকে দা দিয়ে কুপিয়ে মারছে, এমনকি জীবন্ত মানুষগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করতেছে। এরা সন্ত্রাসী, খুনি, এরা মানবতার শত্রু। তিনি বর্ডার খুলে দিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানিয়ে বলেন, অন্যথায় আপনারাও মানবতার শত্রুদের কাতারে শামিল হবেন।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ ও ওআইসি মিয়ানমার সরকারকে এই সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত নিপীড়ন বন্ধের আহ্বান জানালেও মিয়ানমার সরকার তাতে কর্ণপাত করছে না। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারণা চালাচ্ছে এবং তাদের নেতৃত্বেই চলছে হত্যাযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ। প্রাণ বাঁচাতে ক্ষুধার্ত রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধরা নৌকায় করে প্রতিবেশী ভ্রাতৃ প্রতীম মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার জন্য আকুতি জানাচ্ছে। কিন্তু সরকার তাদের গ্রহণ করছে না।
তিনি বলেন, বিশ্বমোড়ল আমেরিকা, রাশিয়া, জাতিসংঘসহ গোটা দুনিয়ার কাছে বিবেকবান মানুষের প্রশ্ন, মুসলমান হওয়াটাই কি আরাকানের নির্যাতিত নাগরিকদের অপরাধ? যে নির্যাতন আজ আরাকান চলছে তার শতভাগের একভাগও যদি কোনও মুসলিম দেশে অমুসলিমদের ওপর করা হতো তাহলে বিশ্বসংস্থা ও প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের শক্তিধর দেশগুলো এভাবে নীরব ভূমিকা পালন করতো ? আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী আগামী ১ডিসেম্বর হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে মিয়ানমার দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল ও স্মারকলিপি পেশ এবং ২ ডিসেম্বর কক্সবাজারে মহাসমাবেশের কর্মসূচী ঘোষণা করেন।
হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাওলানা হাফেজ তাজুল ইসলাম, যুগ্মমহাসচিব মাওলানা জুনাইদ আলহাবিব, মাওলানা লোকমান হাকীম, মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা সরোয়ার কামাল আজিজী, মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী, মওলানা ইসহাক মেহেরিয়া, মাওলানা নুরুল ইসলাম, মাওলানা হাবিবুল্লাহ আজাদী, মুফতি হাসান মুরাদাবাদী, মাওলানা হাজী মুজাম্মেল হক, মাওলানা জিয়াউল হোসাইন, মাওলানা আলমগীর মাসুদ, মাওলানা হাফেজ ফায়সাল, মাওলানা আনোয়ার হোসেন রব্বানী, মাওলানা জয়নাল আবেদীন, মাওলানা ইকবাল খলিল, মাওলানা আনিসুর রহমান, মওলানা ইউনুস, মাওলানা কুতুব, মাওলানা ওসমান কাসেমী প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন মাওলানা আনম আহমদুল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, হাজার বছর ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানরা বসবাস করলেও নিজ মাতৃভূমিতে তাদের নাগরিকত্ব নেই। এত অত্যাচার-নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করেও তারা মিয়ানমারে বসবাস করছে। সামরিক বাহিনী ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছে। এদের সাহায্য করুন। তাড়িয়ে দিয়ে আল্লাহর গজব ডেকে আনবে না।
মাওলানা জুনাইদ আলহাবিব বলেন, অসহায় রোহিঙ্গা মুসলিম ভাই বোনদের প্রতি সরকারের এই অমানবিক নিষ্ঠুর আচরণের নিন্দা জানানোর ভাষা জানা নেই। কিন্তু কেন আজ রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু মুসলিমরা তাদের অধিকারহারা? কেন ওরা নিজের আবাসভূমিতে এরকম নিষ্ঠুর বর্বরতম নির্যাতনের স্বীকার? এই প্রশ্নের উত্তর কারো অজানা নয়। তারপরও মানবতাবাদী কোন রাষ্ট্র সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসেনি, বিশ্ববিবেক আজ বড় নিষ্ঠুর। উগ্রজাতীয়তাবাদ আর ক্ষমতালিপ্সা মানুষের পাশবিকতাকে কতটা উসকে দিতে পারে, তারই বাস্তবচিত্র আরাকানের অসহায় মানুষের আর্তচিৎকার। কিভাবে উগ্রসাম্প্রদায়িকতা মানুষকে যে পশুতে পরিণত করে তার নিকৃষ্টতম উদাহরণ আজকের মিয়ানমার।
মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী বলেন, আরকানে মুসলমানের ওপর যে নির্মম নির্যাতন-নিপীড়ন চলছে তা জাহেলী যুগের বর্বরতাকেও হার মানায়। এ করুণ পরিস্থিতিতে কোন বিবেকবান ও ঈমানদার মানুষ নীরব বসে থাকতে পারে না। আরকানের অত্যাচারিত মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো সকল মুসলমানদের ঈমানী ও মানবিক দায়িত্ব।
মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেছেন, সংবিধানের ২অনুচ্ছেদের ২৫ (গ) ধারা অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশ সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। অথচ আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদেরকে পুশব্যাক করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। অধিকারহারা মানুষের আহাজারি, রক্তের হোলি খেলা আর লাশের গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের গ্রামগুলোর আকাশ বাতাস ও সাগরছোঁয়া সবুজ গহিন বন। তিনি বলেন, বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর দেশ মিয়ানমার। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের মূল দর্শন হলো, ‘অহিংসা পরম ধর্ম। জীব হত্যা মহাপাপ।’ কিন্তু সে দেশের সামরিক বাহিনীর দোসর হয়ে ধর্মগুরু বৌদ্ধভিক্ষুরা এক একজন দস্যু সরদারে পরিণত হয়েছে। তাদের নেতৃত্বে চলছে নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীকে নিধন এবং নির্মূল অভিযান।
সমাবেশ শেষে এক বিরাট বিক্ষোভ মিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাব চত্বরে গিয়ে মাওলানা হাফেজ তাজুল ইসলামের মুনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।