Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

যমুনা পশ্চিম তীরে আড়াই হাজার কোটি টাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ স্থাপনা হুমকিতে

ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন/শ’ শ’ পরিবারের রাতের ঘুম হারাম

মহসিন রাজু/টিএম কামাল | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বগুড়ার সারিয়ান্দি ও ধুনট এবং পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে এক শ্রেণীর বালু দস্যু রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে ১০টি বালু মহাল থেকে বিপজ্জনক ভাবে বালু উত্তোলন করে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে প্রমত্তা যমুনার পশ্চিম তীর সংরক্ষণে নির্মিত শ’ শ’ কোটি টাকার স্থাপনা যেমন হুমকির মুখে পড়ছে, তেমনি সরকার বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে।
সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সারিয়াকান্দির  ২টি, ধুনটের ২টি এবং পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জে জেলার কাজিপুর উপজেলার ৬টি বৃহৎ বালু মহালে ড্রেজার বসিয়ে ব্যাপকভাবে বালু উত্তোলন করছে। স্থানীয়ভাবে বালুদস্যু হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ইচ্ছা থাকলেও কোন প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নিতে পারেনা। আবার এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রশাসনকে অবৈধ অর্থের একাংশ ভাগ দিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের এ অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
কোন রকম বাধা না থাকায় বালু দস্যুদের প্রতিযোগিতমূলক বালু উত্তোলনের ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় নদী পাড়ের শত শত জনবসতি হুমকির মুখে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী সব সময় আতংকগ্রস্ত থাকে কখন না জানি ভূমি ধসের কবলে পড়ে তাদের ভিটেমাটি ছাড়া হতে হয় !
সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্র জানায়, বালু মহালগুলো ইজারা দিতে না পারায় সরকার প্রতিবছর লাখ লাখ টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। ইজারা না নিয়েও দিন-রাত এসব মহাল থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উপজেলার পশ্চিম পার্শ্ব দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিব্যি বালু উত্তোল করছে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
সূত্রে আরও জানায়, শুভগাছা, মেঘাই, নতুন মেঘাই, ঢেকুরিয়া, বিলচতল এবং বগুড়ার ধুনট উপজেলার শহরাবাড়ি, ভান্ডারবাড়ীর উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে বালু দস্যুদের অপতৎপরতা।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, ধুনট এবং সিরাজগঞ্জের কাজিপুর এলাকায় প্রমত্তা যমুনার পূর্বতীর এলাকাকে নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষার জন্য ইতোমধ্যেই আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থে গড়ে তোলা হয়েছে দেড়শ’ কি.মি. এলাকা জুড়ে গ্রোয়েন,স্পার, ফিসপাস গেট ও বাঁধ। পাকিস্তান আমল থেকেই এই এলাকায় শক্ত অবকাঠামোর টেকসই মাটির বাঁধ তৈরী করার প্রচলন থাকলেও সম্প্রতি বাঁধ ব্যবসায়ী ঠিকাদার সিন্ডিকেট পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ম্যানেজ করে বালু দিয়ে বাঁধ তৈরীর বিপজ্জনক প্রকল্প আইনানুগ ভাবে পাস করিয়ে নিয়েছে। ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ প্রকল্পগুলোতে প্রচুর বালুর সরবরাহ নিশ্চিত করতেই বালু দস্যুরা নদীর বিপজ্জনক পয়েন্টগুলোতে বালু উত্তোলন করে থাকে। এখানে বাঁধ ব্যবসায়ী ও বালু দস্যু সিন্ডিকেটের স্বার্থ এক হওয়ায় তারা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু তাদের লোভ লাভ ও স্বার্থের কারণে যেমন হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পগুলো হুমকির পড়েছে তেমনি নদীর তীর ঘেঁষে বসবাসকারী শ’ শ’ মানুষের রাতের ঘুমও কেড়ে নিয়েছে।






 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ