পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আকষ্মিকভাবে ভারতীয় ৫০০ ও এক হাজার রুপি বাতিলের কারণে বাংলাদেশীরা পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও দেশটির বিভিন্ন শহরে এখনো চরম দুর্ভোগে পোহাচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে যেসব বাংলাদেশী রয়েছেন, তাদের অনেকেই দেশে ফিরতেও বিড়ম্বনায় পড়েছেন বলে জানা গেছে। অনেক বাংলাদেশী কলকাতার পথে পথে ঘুরছেন দেশে ফেরার টাকা জোগাড় করার জন্য। চরম দুর্ভোগ আর বিড়ম্বনা মাথায় করে দেশে ফেরা বাংলাদেশীদের কাছ থেকে এই খবর জানা গেছে। এ অবস্থায় কোলকাতা ও দিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন শহরে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও উপ-দূতাবাসগুলো নিজ দেশের মানুষের নূন্যতম
খোঁজখবর রাখছেন না বলে ক্ষোভের সাথে জানিয়েছেন সদ্য স্বদেশে ফেরা বাংলাদেশীরা।
তবে কলকাতার হোচি মিন স্ট্রিটে সোনালী ব্যাংক থেকে বাংলাদেশীদের মাথাপিছু ১০০ ডলারের সমপরিমাণ ভারতীয় রুপি বদলিয়ে দেয়ার কার্যক্রম চললেও ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক নোটের জোগান দিতে না পারায় সেখানেও বিড়ম্বনা চলছে। ভোর রাত থেকে কোলকাতায় অবস্থিত একমাত্র বাংলাদেশী ব্যাংকটির সামনে লাইন দিচ্ছেন এ দেশের মানুষ। স্থানীয় সময় সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত সেখানে নোট বদলানোর সুযোগ পাচ্ছেন বাংলাদেশীরা। তবে যারা ভারতে গিয়ে আগে ৫০০ ও এক হাজার টাকার নোট নিয়েছেন তাদের দুর্গতির কোনো শেষ নেই। অথচ নোট বাতিলের ধাক্কায় ভারত ক্রমশ পর্যটক শূন্য হতে চলেছে। গত ১৫ দিনে অন্তত ৮০ ভাগ পর্যটকই ভারত ছেড়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায় পড়েছেন বাংলাদেশী চিকিৎসা প্রার্থীরা। বিশেষ করে কলকাতার বাইরে যেসব বাংলাদেশী চিকিৎসার প্রয়োজনে গেছেন, তারা ইতোমধ্যে অনেকটাই মানবিক বিপর্যয়ের কবলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরিশাল অঞ্চলের এক পুলিশ কর্মকর্তা শিশুকন্যাকে নিয়ে ভারতের ভেলোরে গিয়ে চিকিৎসা শুরুর ২০ দিনের মাথায় নোট বাতিলের কারণে অনেকটা অসহায়ের মতো কপর্দকশূন্যাবস্থায় দেশে ফিরে আসার করুন কাহিনী জানিয়েছেন। বেনাপোলের অপর পাড়ে পেট্রাপোল সীমোন্তর মানিচঞ্জোরের কাছে তিনি ভারতীয় কয়েকটি এক’শ টাকার নোট বদল করলেও তার বিনিময়ে বাংলাদেশী ৫৫ টাকা করে পেয়েছেন।
নোট বাতিলের কারণে কলকাতার সব মানি চেঞ্জারের দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে গত ৯নভেম্বর থেকে। আর এ সুযোগে কোলকাতার নিউমার্কেট, কেওয়াইডি স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট ও মির্জা গালিব স্ট্রিটে কিছু দালাল এখন বাংলাদেশী টাকার বিনিময়ের অবৈধ ব্যবসা খুলে বসেছেন। তারা এখন বাংলাদেশী টাকার বিনিময়ে ৫০Ñ৫৫টাকার সম পরিমান ভারতীয় রুপি দিচ্ছে। কলকাতায় যেসব বাংলাদেশীর দীর্ঘ দিনের নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে, তারা বিভিন্ন পরিচিত হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশী টাকা জমা রেখে ভাড়া ও খাবার দাম মিটিয়ে দেশে ফিরছেন। পরে গিয়ে তারা হিসাব সমন্বয় করবেন। তবে এ সুযোগে শতকরা এক থেকে পাঁচজনের বেশির ভাগ্যে জুটছে না বলে জানা গেছে। গতকাল বেনাপোলসহ কয়েকটি সীমান্ত চেকপোস্টের মানি চেঞ্জারদের সাথে সেল ফোনে আলাপ করে জানা গেছে, ভারত সীমান্তের মানি চেঞ্জাররা এখন বাংলাদেশী ১০০ টাকার বিনিময়ে ৫৫Ñ৬০ টাকার বেশি দিচ্ছে না। অথচ নোট বাতিলের আগে তা ছিল ৮৫ টাকা। এমনকি ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারের ব্যাংকগুলোতে ডলারের দাম ৬৭ টাকার ওপরে উঠলেও সেদেশের সীমান্তের মানি চেঞ্জাররা ৭০ টাকার বেশি দিচ্ছে না।
ফলে ভারতীয় নোট বাতিলের কারণে বিদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাংলাদেশীরাই। গত ১৫দিনে অন্তত ৭০ ভাগ বাংলাদেশীই ভারত ছেড়েছেন। এমনকি বাংলাদেশ থেকে ভারতে গমনের হারও লক্ষণীয়ভাবে কমে গেছে। গতকাল বেনাপোল চেকপোষ্টের বিভিন্ন দায়িত্বশীল মহলে আলাপ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সবাই বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তাদের মতে বাংলাদেশীদের ভারতে গমনের হার ৮০ ভাগেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ এখন ভারতের মাটিতে পা রাখতে চাইছেন না বলেও জানান ওইসব কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, গত ৮নভেম্বর ভারত সরকার আকষ্মিকভাবেই ৫০০ ও এক হাজার টাকার নোট বাতিল ঘোষণা করে ১০ নভেম্বরÑ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বাতিলকৃত নোট বদলানোর সুযোগ প্রদান করে। এটিএম বুথগুলো থেকে দৈনিক দুই হাজার টাকা করে ১০০ টাকার নোট প্রদানের কথাও বলা হয় ভারত সরকারের ঘোষণায়। এমনকি পেট্রোলপাম্প ও সব হাসপাতালে বাতিলকৃত নোট দিয়ে লেনদেন চলবে বলেও জানায় সরকার। তবে পরদিন ৯ নভেম্বর সব ব্যাংক বন্ধ রাখা হয়। সবাই আশা করেছিলেন, বাতিলকৃত নোট বদলানোর প্রাকÑপ্রস্তুতি গ্রহণের জন্যই হয়তো ৯ নভেম্বর ব্যাংক বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু ৯ নভেম্বর ভোর রাত থেকেই ব্যাংকগুলোর সামনে লম্বা লাইন পড়ে যায়। পোস্টঅফিসের সামনের চেহারাটাও ছিল প্রায় একই।
কিন্তু ভারত সরকার নতুন নোট না ছাপিয়েই চলমান পুরনো নোটগুলো বাতিল করায় চরম সংকটে পড়তে হয় আমজনতাকে। ব্যাংক থেকে প্রথমে দৈনিক দুই হাজার টাকার সমপরিমান নোট বদলের সুযোগ দিয়ে এক সপ্তাহের মাথায় তা চার হাজারে উন্নীত করে পরে আবার তা দুই হাজারেই হ্রাস করা হয়েছে। ফলে সংকট পিছু ছাড়ছে না। তবে গত সোমবার থেকে নতুন ৫০০ টাকার নোট ব্যাংক ও এটিএম বুথে পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে দুই হাজার রুপির নোটও বাজারে ছাড়া হয়েছে। কিন্তু দুই হাজার রুপির নোট পুরনো ৫০০ ও হাজার রুপির বদলে কোনো কাছে আসছে না। ভারত সরকার যে নতুন নোট না ছাপিয়ে এবং তা ব্যাংকে না পৌঁছিয়েই পুরনো নোট বাতিল করেছেন তা সবার কাছ পরিষ্কার হয়ে গেছে। আর কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া ভারতের মত প্রায় দেড়’শ কোটি মানুষের দেশে এতবড় একটি পদক্ষেপ যে সুবিবেচনাপ্রসুত হয়নি তাও সবার জানা। বিষয়টি নিয়ে সে দেশের সব বিরোধীদল জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নামলেও মোদি সরকার তা খুব একটা আমলে নিচ্ছেন না বলেই মনে করছেন সে দেশের রজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
ভারত সরকারের আকষ্মিক নোট বাতিলের এ ঘটনায় বাংলাদেশীদের চরম দুর্ভোগ দেখারও কেউ নেই। এমনকি সে দেশে অবস্থিত আমাদের দুতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের নোট বদলে ভারত সরকারকে কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ না করায়ও সবাই ক্ষুদ্ধ। এমনকি ‘পরিস্থিতি স্বভাবিক না হওয়া পর্যন্ত যেন আর কোনো বাংলাদেশী ভারতে না যায়’ তেমন কোন ঘোষণা না দেয়াও হতবাক দুর্ভোগ মাথায় করে সে দেশ থেকে ফেরা বাংলাদেশীগণও।
তবে সাধারণ মানুষ বাংলাদেশ ও ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে বিষয়টি যেন সতর্ক হয়েছেন। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রতিদিন সকাল ও রাতে অন্তত ১৫টি বাস বেনাপোলে যাতায়াত করলেও এখন কার্যত তার অর্ধেকেরও বেশি খালি যাচ্ছে। তবে বেনাপোল থেকে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলমুখি বাসগুলো ফিরছে ভারত প্রত্যাগত যাত্রী বোঝাই করেই। তবে এসব যাত্রীদের অনেকেই টিকেট কেটে বাসে উঠেতে পারছেন না। তাদের অনেকেই গন্তব্যে পৌঁছে ভাড়া মেটাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বাস চালক ও কন্ডাক্টররা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।