Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষার্থীকে মারধর করে হল ছাড়া করলো ছাত্রলীগ

ঢাবির জগন্নাথ হল

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০২২, ১২:০৭ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলের এক শিক্ষার্থীকে রুমে ঢুকে বেধড়ক মারধরের পর হল ছাড়া করেছে ওই হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এমনকি ভবিষ্যতে যদি হলে ঢুকে তাহলে ওই শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও হল প্রভোস্ট বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।গত মঙ্গলবার বিকেলে জগন্নাথ হলের সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য ভবনের ৭০১২ নং রুমে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হলের বাইরে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা যায়।

হামলার ঘটনায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। অভিযুক্তরা হলো- ভূতত্ত্ব বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের সত্যজিৎ দেবনাথ, একই শিক্ষাবর্ষের বাঁধন (বিভাগ জানা যায়নি), ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সবুজ কুমার, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ব্যাংকিং এন্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শুভ সাহা, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের রাজিব বিশ্বাস, একই শিক্ষাবর্ষের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের গণেশ ঘোষ, মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের অমিত দে ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের রিভু রিদম।
এছাড়াও লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্বাগতম বাড়ৈ, অর্থনীতি বিভাগের দীপ্ত রায়, উর্দু বিভাগের সবুজ শীল, যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের অভিষেক ভাদুরী, পাপন বর্মণ (বিভাগ জানা যায়নি), ইতিহাস বিভাগের সৌরভ সাহা, একই বিভাগের জয় দাস।
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অপূর্ব দাস, একই বিভাগের পুষ্পেন্দু মণ্ডল, ব্যাংকিং এন্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অমৃত মণ্ডল ও ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের প্রিতম আনন্দ। এরা সবাই জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মণের অনুসারী। অতনু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী।
অভিযোগ পত্রে উল্লেখিত হামলার নীলনকশাকারী ছাত্রলীগ নেতা সত্যজিৎ দেবনাথ পূর্বের হল কমিটিতে জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে সে ওই হলের একজন অনিয়মিত ছাত্র এবং রাজনীতি করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে। অপরদিকে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম উৎসব রায়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য ভবনের ৭০১২ নাম্বার রুমে।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দুপুরে খাওয়ার পর তার নিজ কক্ষে (সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য ভবনের ৭০১২ নাম্বার রুম) বিশ্রাম নিচ্ছিলেন উৎসব রায়। এমন সময় অভিযুক্ত (সত্যজিৎ) এর নেতৃত্বে পঁচিশ থেকে তিরিশ জনের একটি দল তার কক্ষের দরজার ছিটকিনি ভেঙে ভিতরে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায়। তারা রড, স্ট্যাম্প দিয়ে তাকে বেধড়ক মারপিট করে। তার মাথায়, কানে, পিঠে মারাত্মকভাবে আঘাত করে। এসময় উৎসব নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। মারতে মারতে তাকে হল থেকে বের করে দেয় এবং তাকে হুমকি দেয়া হয় যাতে আর কোনদিন হলে প্রবেশ না করে। হামলার পর থেকে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

তবে হামলায় নিজের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে উল্টো ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকেই দোষারোপ করেন সত্যজিৎ। তিনি বলেন, হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরাই তাকে মেরেছে, কারণ সবাই তার উপর অসন্তোষ। সত্যজিৎ বলেন, সে আমার পাশের রুমে থাকে। সেদিন (ঘটনার দু’দিন আগে) রুম থেকে নাকি তার ফোন চুরি হয়েছে, তো সে আমাকে বিষয়টা জানালে আমি থানায় জিডি করতে বলি। দুইদিন পর্যন্ত ঠিক ছিল কিন্তু তারপর আমার নামে এবং হলের আরো বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর নামে মোবাইল চুরির অপবাদ দেয়। পরে সে বিষয়টি নিয়ে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অতনুর কাছে যায় এবং তিনি তাকে পরামর্শ দেন যাতে আমার কাছে মাফ চায়। কারণ যেহেতু আমি তার সিনিয়র এবং আমার নামে সে যেই অপবাদ রটাচ্ছিল সে কারণে আমার সম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে।
অভিযুক্ত এই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, সে আমার কাছে মাফ না চেয়ে উল্টো আমাকে নানাভাবে হুমকি দেয়া শুরু করে যে আমাকে দেখে নিবে। ওর ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের অনেক অভিযোগ রয়েছে। যারতার সাথে খারাপ ব্যবহার করে, নিয়মিত মাদক সেবন করে, চিনতাইয়ের মামলা আছে তার নামে। ধর্ষণ মামলায় তিনমাস জেলও খেটেছে। নিয়মিত মোবাইল চুরির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এদিকে ঘটনার সাথে কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না বলে দাবি করেন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মণ। ইনকিলাবকে তিনি বলেন, মারধরের সময় তিনি বন্যার্তদের সাহায্যে সিলেট অবস্থান করছিলেন।
জগন্নাথ হল প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মিহির লাল সাহা গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে গিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর খোঁজ নেন এবং অভিযুক্তদের শাস্তির আশ্বাস দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ