Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের কর্মস্থলে দুর্ঘটনা থেকে নিরাপত্তায় আইএলও’র পাইলট প্রকল্প

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০২২, ৩:৩৫ পিএম

শ্রম ও কর্মসংস্থার মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথ উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে (পাইলট) নতুন একটি প্রকল্প শুরু করেছে ‘আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা’ (আইএলও)। এই যাত্রায় মন্ত্রণালয় ও আইএলও-কে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করে আসছে নেদারল্যান্ড এবং জার্মানি সরকার। এরই ধারাবাহিকতায়, আয় সুরক্ষা নিশ্চিতের মাধ্যমে উন্নত সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় থাকবে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের (আরএমজি) শ্রমিকরা।

মঙ্গলবার (২১ জুন) আইএলও এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় (এমওএলই) যৌথভাবে ‘এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম’ (ইআইএস) প্রকল্পের পাইলট প্রোগ্রামের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে। অনুষ্ঠানে, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। আরও উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসান-এ-এলাহী; আইএলও বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পৌটিআইনেন; জার্মানি, নরওয়ে ও নেদারল্যান্ডসের দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এনসিসিডবিøউই, শ্রমিক সমিতি, উন্নয়ন সহযোগী ও অন্যান্য জাতীয় স্টেকহোল্ডারদের গণ্যমান্য প্রতিনিধিরা।

তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতি ও ক্রমবর্ধমান জিডিপি-তে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে, তাই তাদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্ক্রিম’ (ইআইএস) পাইলট প্রোগ্রামের সাফল্যের পর অন্যান্য অর্থনৈতিক খাতেও এরূপ সুবিধা প্রদান করা হবে। শ্রমিকদের সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২০১৩ সাল থেকে আইএলও ও জিআইজেড বাংলাদেশের সরকার এবং ইন্ডাস্ট্রি পার্টনারদের সাথে কাজ করছে। তারই ধারাবাহিকতায়, ত্রিপাক্ষীক আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার একটি সিদ্ধান্ত নেয় যে, তৈরি পোশাক শিল্পের কোন কর্মী কাজ করার দরুন আহত, নিহত এবং দুর্ঘটনার শিকার হলে তাকে বা তার পরিবারকে দীর্ঘমেয়াদে মাসিক ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশের সরকার দেশের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বদা স্বচেষ্ট এবং এই প্রকল্পটি তারই একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, আইএলও বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পৌটিআইনেন বাংলাদেশের শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের তৈরি পোশাক শ্রমিকদের দুর্ঘটনা জনিত নিরাপত্তা মজবুত করতে এই ইআইএস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপও বটে। সরকার, সকল মালিক পক্ষ ও শ্রমিক পক্ষের সাথে কাজ করে একটি আধুনিক ও সমসাময়িক ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা তৈরি করতে পেরে আইএলও ভীষণ আনন্দিত। এমন একটি উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত হবে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসান-এ-এলাহী আইএলও-কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই দিনটি সামাজিক সুরক্ষা খাতে উন্নয়নের একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করতে চলেছে। আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, এই পাইলট প্রোগ্রামটি ‘আন্তর্জাতিক শ্রম মানদন্ড’ অনুযায়ী ডিজাইন করা হয়েছে এবং এর সফলতা নিয়ে কোন প্রকার সন্দেহ নেই।

বিজিএমইএ-এর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, দেশের তৈরি পোশাক শিল্প টেকসই ও নিরাপত্তা খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধন করেছে, বিশেষ করে শ্রমিক কল্যাণ এবং শিল্প সংযোগের ক্ষেত্রে। ইআইএস শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এবং বিশেষ করে দেশের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। আমরা শ্রমিকদের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও কল্যাণে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ এবং এমন আরও উদ্যোগে অংশগ্রহণে আগ্রহী।

এনসিসিডবিøউই-এর সভাপতি শামীম আরা বলেন, এই উদ্যোগের ফলে শ্রমিকরা দুর্ঘটনা পরবর্তী জীবনের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হতে পারবে। এটি একদিকে যেমন শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, অন্যদিকে কর্মস্থলকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলবে।

ঢাকায় অবস্থিত নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ব্যাস বøাও বলেন, বাংলাদেশে ইআইএস পাইলট প্রোগ্রাম চালুতে পাশে থাকতে পেরে নেদারল্যান্ডস অত্যন্ত আনন্দিত। যেহেতু, এই খাতে প্রতিযোগীতা ও সামাজিক নিরাপত্তা একত্রে চলে, তাই এই প্রোগ্রামটি সর্ব ক্ষেত্রেই লাভজনক হতে পারে। এই উদ্যোগকে সফল করতে আমরা প্রাসঙ্গিক সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে কাজ করতে আগ্রহী।

ঢাকায় অবস্থিত জার্মান দূতাবাস-এর ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন প্রধান জোহানেস স্নাইডার বলেন, বাংলাদেশের এই সংস্কার প্রক্রিয়ার শীর্ষে থাকবে ইআইএস পাইলট প্রোগ্রাম। কারণ, এর ফলে আমাদের কাছে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি স্কিম রয়েছে, যা কর্মস্থলে দুর্ঘটনা ও দারিদ্র থেকে শ্রমিকদের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ