Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রোহিঙ্গাদের উপর দমন-পীড়নে বাংলাদেশের কড়া প্রতিবাদ

মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বার্মার (মিয়ানমার) আরাকান (রাখাইন) রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর কর্তৃক রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর দমন-পীড়নের কারণে সৃষ্ট মানবিক সঙ্কটে বাংলাদেশ উদ্বেগ জানিয়েছে। অবিলম্বে সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে দেশটিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকায় বার্মার রাষ্ট্রদূত মিউ মিন্ট থানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে এ উদ্বেগ জানানো হয়। বেলা সোয়া ৩টায় এ বৈঠক শুরু হয়ে ৪টার দিকে তা শেষ হয়।  
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয় বিষয়াবলি) কামরুল হাসানের কার্যালয়ে তাঁকে তলব করা হয়। বৈঠক শেষে বেরিয়ে কামরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের কাছে আমাদের উদ্বেগ তুলে ধরেছি। সেখানকার লোকজনের দেশে ফিরে যাওয়ার পথ নিশ্চিত করতে আমরা তাদের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে বলেছি। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রদূতের হাতে একটি কূটনৈতিক পত্র দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধান কামনা করেছে বাংলাদেশ।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত বৈঠকে কী বলেছেন জানতে চাইলে কামরুল হাসান বলেন, তিনি বরাবরের মতোই খবরের কাগজে প্রকাশিত এসব সংবাদকে বানোয়াট বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, প্রকৃত অর্থে এমন কিছুই হচ্ছে না।
রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচারের এসব খবর বানানো।
অন্যদিকে বৈঠক থেকে বেরিয়ে রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রসঙ্গত, গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ হামলায় সে দেশের নয় সীমান্ত পুলিশের মৃত্যুর পর আশপাশের এলাকাগুলোয় ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। আরাকান রাজ্যের রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত জেলাগুলোয় শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সে সময় থেকেই রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর বার্মিজ সেনাবাহিনীর নৃশংস হামলা চলছে। সেখানে আন্তর্জাতিক ত্রাণ কর্মীদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এ হামলা অব্যাহত থাকায় আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্যটিতে জঙ্গি নিধনের নামে নির্বিচারে হত্যা, নারী ও শিশুদের নির্যাতন এবং বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
উপগ্রহ থেকে তোলা ছবির বরাত দিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, আরাকান প্রদেশে রোহিঙ্গাদের গ্রাম ধ্বংস করা হয়েছে। এই ঘটনার তাৎক্ষণিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে তারা।
এ সহিংসতায় ৮৬ জনের মৃত্যুর খবর বার্মার কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করলেও নিহতদের মধ্যে ৬৯ জনকে সন্দেহভাজন বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে দাবি করেছে তারা। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, নিহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। এদিকে দমন অভিযানের মুখে পালাতে থাকা রোহিঙ্গাদের অনেকে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছেন। আবার অনেকে বাংলাদেশে ঢুকতে না পেরে নদীর মধ্যই মানবেতর জীবন-যাপন করে। এ প্রেক্ষাপটে সীমান্তে বাড়তি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গত কয়েক দিনে কয়েকশ’ রোহিঙ্গাকে বার্মায় ফেরত পাঠানোর কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এ বিষয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে বৈঠকও হয়েছে।
তিন দশক ধরে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বহনকারী বাংলাদেশ সরকার নতুন করে শরণার্থী নিতে নারাজ। বারবার আহ্বান সত্ত্বেও আগের শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার কোনো উদ্যোগও নিচ্ছে না বার্মিজ সরকার। দেশটির অভ্যন্তরীণ সঙ্কট থেকে উদ্ভূত এই শরণার্থী সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার সরকারকে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ