পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিয়ানমারের আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর সেদেশের সরকারী বাহিনী ও মগদস্যুরা নির্যাতন চালিয়ে সমৃদ্ধ আরাকানকে মুসলিম শূন্য করার ষড়যন্ত্র করছে বলে মনে করেন দেশের রাজনৈতিক সচেতন ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ। তারা মনে করেন রোহিঙ্গা মুসলমানরা বিশ^ সম্প্রদায়েরই একটি অংশ। প্রত্যেক জাতি গোষ্ঠীর অধিকার আছে বিশে^র যেকোন প্রান্তে নিজের ধর্মবিশ^াস নিয়ে বেঁেচ থাকার। রোহিঙ্গা মুসলমানরা হাজার বছর ধরে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে বসবাস করে আসছে। সেই রোহিঙ্গা জাতি গোষ্ঠীর উপর সরকারী বাহিনী ও মগদস্যুদের বর্বরতম নির্যাতন কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়। তারা মনে করেন এই হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার এবং দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে সোচ্চার হওয়া দরকার।
মাসব্যাপী মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর ইতিহাসের বর্বরতম নির্যাতন চললেও বিশ^ সম্প্রদায়ের কার্যকর কোন উদ্যোগ এখনো দেখা যাচ্ছে না। প্রতিদিন নির্যাতিত ঘরবাড়ি ছাড়া সহস্র রোহিঙ্গা নারী পুরুষ শিশু আশ্রয়ের সন্ধানে ছুড়াছুটি করছে। আর ওসব নিরীহ মানব সন্তান গুলোকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে, গুলি করে অথবা আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে পুড়িয়ে মারছে মিয়ানমারের সেনা-পুলিশ ও মগদস্যুরা। সহায় সম্বল, ভিটেবাড়ি সব ছেড়ে নাফনদী পাড়িদিয়ে পালিয়ে আসা অসহায় মানুষ গুলোকে সংগত কারণে আশ্রদিতে অপারগ বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মানব সন্তান গুলোকে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষীরা আবার ঠেলে দিচ্ছে মগ হায়েনার মুখে, নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে।
পটিয়া আল জামেয়া ইসলামিয়ার পরিচালক ও কাওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাসচিব মুফতি আব্দুল হালিম বোখারী বলেন, মিয়ানমারে এখন রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার পাশর্^বর্তী মুসলিম দেশ হিসেবে চোখ বুজে থাকতে পারে না। বিশ^ সম্প্রদায়ের মাধ্যমে এই হত্যাকা- বন্ধের ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান তিনি। একই সাথে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম নারী শিশু পুরুষদেরকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে তাদের প্রতি মানবিক সাহায্য দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি ও হুইপ শাহজাহান চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, মিয়ানমারে সাম্প্রতিক হত্যাযজ্ঞ ইতিহাসের জঘন্যতম বর্বরতা। এভাবে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের পাশর্^বর্তী দেশে জোর করে ঠেলে দিয়ে সমৃদ্ধ আরাকানকে মুসলিম শুন্য করারই ষড়যন্ত্র। অতীতে এভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে মিয়ানমার থেকে আমাদের দেশেবিশেষ করে কক্সবাজার ও বান্দরবানে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা আমাদের অনেক ক্ষতি করলেও মিয়ানমারে বর্তমানের হত্যাকা- চলছে তা কিছুতেই সমর্থন করা যায়না।
তিনি আরো বলেন, এই হত্যাকা- বন্ধের ব্যাপারে সরকার মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ করতে পারে। মিয়ানমারে যতবারই এই ধরনের অমানবিক কর্মকা- হয়েছে ততবারই বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই বাংলাদেশ সরকারকেই এই হত্যাকা- বন্ধের ব্যাপারে কথা বলতে হবে। বিএনপি কক্সবাজার ও বান্দরবানে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানেদের উপর নির্যাতন বন্ধের ব্যাপারে কর্মসূচী ঘোষণা করবেন বলেও জানান।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রিন্সিপ্যাল হামিদুল হক চৌধুরী মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন প্রসঙ্গে বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানরা যেন মিয়ানমারের মঘের দেশে জন্ম নিয়ে আজন্ম পাপ করেছে। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের প্রকৃত নাগরিক হলেও তাদেরকে দেশ ছাড়া করা হচ্ছে। নির্মম হত্যাকা- চালিয়ে তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে তাদের নিঃশেষ করে দেয়া হচ্ছে। নির্যাতনের মুখে নিজেদের আবাসভূমি ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার জন্য বাধ্য করে বাংলাদেশের উপর বোঝা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই অসভ্য বর্বরতার নিন্দা জানান। তাছাড়া মিয়ানমার এমন কোন সুপার পাওয়ার নয় যে, তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কথা শুনবেনা। তাই আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগ করে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর নির্যাতন বন্ধের উদ্যোগ নেয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানান।
ইসলামী ঐক্যজোট কক্সবাজার সভাপতি ও নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি হাফেজ সালামত উল্লাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ইতিহাসের বর্বরতম নির্যাতন চলছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর। গোটা মুসলিম বিশ^কে তাদের পাশে দাড়াঁনো দরকার। বিশ^ সম্প্রদায়ের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে এই নির্যাতন বন্ধ করার জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানান। পাশাপাশি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে স্বাধীন মুসলিম জাতি সত্তা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার দেয়ার জন্যও তিনি আহবান জানান।
বিজিবি-বিজিপি বৈঠক
কক্সবাজার সেক্টরের বিজিবি রেষ্ট হাইজে বেলা ১২টায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) মিয়ানমার কর্মকর্তাদের মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অতিরিক্ত মহাপরিচালক, রিজিয়ন কমান্ডার, চট্টগ্রামের দক্ষিণ পূর্ব রিজিয়ন এবং মিয়ানমারের মংডু ১নং বর্ডার গার্ড পুলিশ কমান্ডিং অফিসের উপ-মহাপরিচালকসহ উভয় দেশের বিজিবি-বিজিপি কর্মকর্তাদের সৌজন্য সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে ২৭ সদস্যের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খোন্দকার ফরিদ হাসান ও মিয়ানমার পক্ষে ৩১ সদস্যের নেতৃত্ব দেন বিজিপি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তু সান লিন। বৈঠকে বাংলাদেশ দলে উপস্থিত ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সেলিম মাহমুদ চৌধুরী, কর্ণেল এম এম আনিসুর রহমান, কর্ণেল মো: হাবিবুর রহমান, লে. কর্ণেল মো: তৌহিদুল ইসলাম, লে. কর্ণেল মো: আনোয়ারুল আযীম, লে. কর্ণেল গোলাম মনজুর সিদ্দিকী, লে. কর্ণেল ইমরান উল্লাহ সরকার, লে. কর্ণেল মো: আবুজার আল জাহিদ, লে. কর্ণেল এআরএম নাসিরউদ্দীন একরাম, মেজর মো: আবদুস সালাম, মেজর মাহবুব সাবের ও মেজর মেহেদী হাসান রবিন।
সাক্ষাতকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ইয়াবা ও মাদকদ্রব্য চোরাচালান, তথ্য আদান প্রদান, নিয়মিত সীমান্তে অধিনায়ক পর্যায়ে সৌজন্য সাক্ষাত, যৌথ টহল, বর্ডার লিয়াজো অফিস, বন্ধুত্বমূলক খেলাধুলার আয়োজন করা এবং অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উভয় পক্ষ পরস্পরকে সীমান্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার ব্যাপারে সম্মত হন। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় যে কোন সমস্যা সমাধানে উভয় কমান্ডার বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণে একমত হন। বুধবার বিকেলে তারা টেকনাফ স্থলবন্দর হয়ে মিয়ানমারে ফিরে যান।
তবে এই বৈঠকে মিয়ানমারের সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়ে কোন আলাপ না হওয়া দুঃখজনক বলে মনে করছেন কক্সবাজারের সচেতন মহল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।