পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পুলিশের বিরুদ্ধে অন্তহীন অভিযোগ। প্রতিদিনই বিভিন্ন অপরাধ ও অনিয়মের কথা উল্লেখ করে পুলিশ সদর দপ্তরে জমা পড়ছে অভিযোগ। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তও হচ্ছে এবং তদন্তের পর দেয়া হচ্ছে নানা ধরনের শাস্তি। আইজিপি বলেছেন, শাস্তি দেয়ার কারণে পুলিশ বাহিনীতে এখন গতি এসেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ বেশ পুরনো। নানা অনিয়ম, চাঁদাবাজি, ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়, খুন, ধর্ষণ, অপহরণ এবং বিভিন্ন গুরুতর অপরাধসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার কারণে ৭৬ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্যের শাস্তি হয়েছে গত পাঁচ বছরে। তারপরেও থেমে নেই পুলিশের অপরাধমূলক কর্মকা-। পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতি মাসে ২ হাজারের বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ২১ হাজার ৭৯৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে পুলিশ সদর দপ্তরে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দানে নিয়োজিত সরকারি এ বাহিনীর কিছু অসাধু এবং অসৎ পুলিশ সদস্যের কারণে পুলিশ বাহিনীর ভাব-মর্যাদা ক্ষুণœ হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক কর্মকর্তা। আবার দেশের বিশিষ্ট আইনজীবী ও সমাজ সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, পুলিশের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব এবং তদ্বির কারণেই কিছুসংখ্যক পুলিশ সদস্য বেপরোয়া হয়ে পড়ছেন। রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের নেক দৃষ্টির কারণে অনেক সময় সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশ নির্দেশেরও তোয়াক্কা করেন না অনেক পুলিশ সদস্য।
আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, কিছুসংখ্যক অসাধু পুলিশের জন্য পুরো বাহিনী দায়ী নয়। অপরাধ করলে সেটা তার ব্যক্তিগত, এ জন্য তদন্তসাপেক্ষে শাস্তি পাবে। এ পর্যন্ত অনেকই শাস্তি পেয়েছেন এবং আরো কিছু ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, গত ৫ বছরে পুলিশ বাহিনীর ৭৬ হাজার ৪২৬ জন সদস্যকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। ব্যক্তির দায় পুলিশ নেয় না- পুলিশের এই নীতির ধারাবাহিকতায়ই অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত সদস্যদের বিভিন্ন দ-ে দ-িত করা হয়েছে। গুরুদ-, লঘুদ-, চাকরিচ্যুতি ও বাধ্যতামূলক অবসর এই চার ধরনের শাস্তি রয়েছে।
আইজিপি আরো বলেন, পুলিশে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা অনেক বেড়েছে। ফলে কোনো রকম ছাড় দেয়া হচ্ছে না। সাধারণ ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্যও লঘুদ- দেয়া হয়ে থাকেÑ ফলে দিন দিন পুলিশি সেবার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে দায়িত্ব কর্তব্যে অবহেলা বা কোনো অপরাধে জড়িত অভিযোগ পেলে কোনো ছাড় নয়।
আইজিপি বলেন, ভালো কাজের পুরস্কার এবং মন্দ কাজের তিরস্কার না থাকলে সেখানে কাজে কোনোদিন গতি আসবে না। এ বিষয়টা নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে পুলিশ বাহিনীতে এখন গতি এসেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৭৬ হাজার ৪২৬ জনকে বিভিন্ন অপরাধে শান্তি দেয়া হয়েছে। ২০১১ সালে ১২ হাজার ৯৭২ কনস্টেবল ও সাব ইন্সপেক্টরকে লঘুদ-, ৬১২ জনকে গুরুদ-, ৯০ জনকে চাকরিচ্যুত ও ৩৭ জনকে বাধ্যতামূলক অবসর, একই বছর ২৬ পুলিশ পরিদর্শককে লঘুদ-, ২ জনকে গুরুদ-, ১ জনকে চাকরিচ্যুত এবং এএসপি থেকে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ৯ জনকে লঘুদ-, একজনকে গুরুদ- ও একজনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত কনস্টেবল থেকে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ৭১ হাজার ১৭০ জনকে লঘুদ-, ৪ হাজার ৩৩ জনকে গুরুদ-, ৫৫১ জনকে চাকরিচ্যুত ও ৭২ জনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। গুরুদ-ের ক্ষেত্রে পুলিশের সিকিউরিটি সেলে জমা পড়া অভিযোগ তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে তার অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী চাকরিচ্যুত, বাধ্যতামূলক অবসর ও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এছাড়া লঘুদ-ের ক্ষেত্রে পোশাক-পরিচ্ছদ অপরিচ্ছন্ন থাকলে বডি ল্যাংগুয়েজ প্রবলেমসহ নানা কারণে এ দ- হয়ে থাকে। এ দ-টির শাস্তি হচ্ছে সাধারণত তিরস্কার করা।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, জনগণের জানমালে নিরাপত্তা দেয়াই তাদের মূল কাজ, সেই বাহিনীর ওপর এতসব অভিযোগ। এটা কোনো ভালো লক্ষণ নয়। পুলিশকে দায়িত্বশীল হতে হবে এবং তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। দায়িত্বে অবহেলা বা অনিয়মের কারণে সাময়িক বদলি কিংবা ক্লোজ করা কোনো সমাধান নয়। তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় পুলিশ অপরাধ করার পর কোনো শাস্তি হয় না। ফলে তার কিছুটা উৎসাহিত হয়।
বদিউল আলম বলেন, দেশে বেশ কয়টি আলোচিত অমানবিক ঘটনা ঘটেছে, যেমন নাসিরনগর, দিনাজপুর এবং কক্সবাজারের রামুতে যেসব অমানবিক হামলা ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে এর জন্য পুলিশ তাদের ব্যর্থতাকে এড়াতে পারে না। কিন্তু এ ধরনের ঘটনায় কোনো সরকার আমলেই সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যর্থতার দায়ে শাস্তি পেতে হয়নি। পুলিশ প্রায়ই নানা অপরাধে জড়িত হচ্ছে মাঝে মধ্যে কিছু পুলিশের শাস্তি হলেও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অধিকাংশ অপরাধ ধামাচাপা পড়ে যায়। এ জন্য পুলিশ বাহিনীকে রাজনীতি থেকে মুক্ত রাখতে হবে। নয়তো এমন অপকর্ম বন্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২ হাজারেরও বেশি অভিযোগ জমা পড়ে। এই জন্য ২০১৪ সালে চাকুরি যায় ৮১ জনের আর বিভিন্ন ধরনের শাস্তি হয় ১৫ হাজার ২শ’ ৮৭ জনের। ২০১৫ সালে এই সকল অপরাধের কারণে চাকুরি গেছে ৭৯ জন এবং গুরু ও লঘুদ- হয় ১১ হাজর ১শ’ ৬৭ জনের। এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত চাকুরি যায় ৬৩ জনের এবং বিভিন্ন মাত্রায় শাস্তি হয় আরও ২ হাজার ২শ’ ২৩ জনের। গত ৩ বছরে চাকুরি গেছে ২ শতাধিক পুলিশ সদস্যের। বিভিন্ন মাত্রায় শাস্তি হয়েছে ৩৫ হাজার পুলিশের। তবুও থামছে না অপরাধ। এজন্য পুলিশকে রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যবহার আর বাহিনীর নৈতিক অবক্ষয়কেই দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।