Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খালেদা জিয়ার প্রস্তাবনা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ নেই মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বেগম খালেদা জিয়ার ১৩ দফা প্রস্তাবনা নিয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে বিএনপি। বেগম জিয়ার ওই প্রস্তাবের পর আলোচনা-সমালোচনার ব্যাখ্যায় দলটি বলছে, বিএনপির প্রস্তাব  প্রেসিডেন্টর কাজকে আরো সহায়তা করবে।
বিএনপি মহাসচিব গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা সংবিধান সামনে রেখেই প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করেছি। সুতরাং সংবিধান কোথাও লঙ্ঘিত হয়েছে বলে আমরা মনে করি না। এমতাবস্থায় দেশের চলমান সঙ্কট নিরসনে  প্রেসিডেন্ট উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। এদিকে বেগম জিয়ার ১৩ দফা প্রস্তাব  প্রেসিডেন্টর কাছে পেশ করার লক্ষ্যে প্রথমে টেলিফোনে তার সাক্ষাৎ চেয়েছিল বিএনপি। এ বিষয়ে কোনো জবাব না পেয়ে গতকাল  প্রেসিডেন্টর বরাবর ফের আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে দলটি।
গতকাল বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশনেত্রীর প্রস্তÍাবনাগুলো পেশ করার জন্য তার একান্ত সচিব আব্দুস সাত্তার গত রোববার মহামান্য  প্রেসিডেন্টর সাক্ষাৎ চেয়ে তার সামরিক সচিবের সঙ্গে টেলিফোনে বিএনপির তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎকার চেয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত (গতকাল) সামরিক সচিব এ বিষয়ে কিছু জানাননি। আমরা আজকে লিখিতভাবে  প্রেসিডেন্টর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময় চেয়ে চিঠি দিচ্ছি। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি আমাদের প্রতিনিধিদলকে সাক্ষাতের একটা সময় দেবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। এরপরই বঙ্গভবনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠিটি পৌঁছে দেন দলের সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ ও সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন।
গতকাল দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তারাও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাব উত্থাপনের পর দেশের রাজনীতিবিদ, সিভিল সোসাইটির অনেকে, জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো, নির্বাচন নিয়ে কাজ করেন এ ধরনের সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ তাদের মতামত প্রদান করেছেন, আলোচনা-সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা এতে অনুপ্রাণিতবোধ করছি, আমরা এটাই চাচ্ছিলাম। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাতির প্রতি তার দায়িত্ববোধ থেকেই জাতির এই চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য দলের পক্ষ থেকে একটি সুচিন্তিত প্রস্তাব পেশ করেছেন এবং পরের দিনই টুইটারে তিনি জানিয়েছেন এই প্রস্তাবাবলি কোনো শর্ত আরোপ করা নয়Ñ মহামান্য  প্রেসিডেন্ট, সরকার এই প্রস্তাবের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারেন অথবা এর ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। কোথাও বলা হয়নি যে, এই প্রস্তাবগুলোই গ্রহণ করতে হবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিপ্রেক্ষিতে এগুলো প্রণীত হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে বিএনপি কোনো আইন করতে চায় না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে ১৫৪ জন অনির্বাচিত এমপি নিয়ে যে সংসদ বহাল আছে, সে সংসদ যদি কোনো আইন বা বিধি প্রণয়ন করে, তার নৈতিক ভিত্তি হবে খুবই দুর্বল। এ সংসদ প্রণীত আইন নৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থানে থেকে যেভাবে এবং যে ভাষায় প্রণীত হবে, তা অনেক রাজনৈতিক দলের কাছে, এমনকি দেশবাসীর কাছে অগ্রহণযোগ্য হয়ে যেতে পারে। তবে সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সমঝোতা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই আইনের যে কাঠামো এবং শর্তাবলি নির্দিষ্ট করে দেবে, তার হুবহু অনুসরণ করে আইন প্রণীত হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে। একদলীয় পার্লামেন্ট কখনই জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে না। দমন-পীড়ন চালিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না। সে জন্যই এই প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। আমরা আশা করি এই প্রস্তাবগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে মহামান্য  প্রেসিডেন্ট জাতিকে চলমান সঙ্কট থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
তিনি বলেন, এই প্রস্তাবগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে লেখালেখি হচ্ছে এটা আমাদের অনুপ্রাণিত করছে। গণমাধ্যমকে আমরা ধন্যবাদ জানাচ্ছি যেসব প্রশ্ন উঠেছে সেই বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা প্রদান করা আমাদের দায়িত্ব।
সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়ার মধ্য দিয়ে আপনারা দেশে সামরিক আইন চান নাকি? এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনকালীন প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতাসহ মোতায়েনের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তাকে কোনোক্রমেই সামরিক আইন বলা যাবে না। এ ধরনের মোতায়েনকে সামরিক আইন বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিরক্ষা বাহিনী একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। কারণ জাতীয় প্রয়োজনে বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে নিয়োজিত করার সুযোগ আছে সিআরপিসিতে, তার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে।
এসময় মওদুদ আহমদ বলেন, এটা নতুন প্রস্তাব নয়। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে  সেনা মোতানে করা হয়েছিল বলে মানুষ স্বস্তিতে ভোট দিতে পেরেছে এবং দেশবাসী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পেয়েছে। ইফেক্টিভলি কাজ করতে হলে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়া যেতে পারে।
বিএনপি কি প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক ক্ষমতা খর্ব করতে চাচ্ছে? এই প্রশ্নে উত্তরে বিএনপি মহাসচিব বলেন,  প্রেসিডেন্টর ক্ষমতাকে খর্ব করার জন্য কোনো প্রস্তাবনা করা হয়নি। চেতনাগতভাবে আমাদের প্রস্তাব প্রেসিডেন্টর কাজকে সহায়তা করবে এবং প্রেসিডেন্টের ভাবমর্যাদাকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগের ব্যাপারে  প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে এই প্রস্তাবনায় কোনোভাবেই সীমাবদ্ধ করা বা এতে কোনো প্রকার ব্যত্যয় ঘটানোর চেষ্টা করা হয়নি। আমরা  প্রেসিডেন্টকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করি এবং তার এই অবস্থান আমাদের দৃষ্টিতে অলংঘনীয়।
নির্বাচন কমিশন গঠনে বিচার বিভাগকে উপেক্ষা করার বিষয়টি সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল বলেন, বিচার বিভাগের ওপর বিএনপির অবিচল শ্রদ্ধা রয়েছে। তবে হাইকোর্টের এক রায়ে (রিট মামলা নম্বর ৩৮১৮/২০০৫) বলা আছে, আপিল বিভাগ বা হাইকোর্টের কোনো বিচারপতি (কর্মরত বা অবসরগ্রহণের পর) নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না। কেননা নির্বাচন কমিশন আধাবিচারিক প্রতিষ্ঠান নয়।
নির্বাচনকালীন মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তাদের গণহারে প্রত্যাহারের প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা জানেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ বা মহাজোট সরকার কিভাবে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মাঠপর্যায় পর্যন্ত দলীয়করণ করেছে। নির্বাচনের সময় সরকারি দলের সাজানো মাঠ কর্মকর্তারা নির্বাচন পরিচালনা এবং আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকলে ফলাফল কী হয়, তা আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন।
এমতাবস্থায় মির্জা ফখরুল সবার উদ্দেশে বলেন, অহেতুক কালক্ষেপণ না করে এবং একগুঁয়েমি ত্যাগ করে জাতির মঙ্গলের জন্য একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো গঠনে প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ গঠন অনিবার্য। এ কারণেই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও সাহসী নির্বাচন কমিশনের কোনো বিকল্প নেই। আসুন আমরা সবাই সেই লক্ষ্যে দেশনেত্রীর এই প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলি এবং এই রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে মুক্ত হয়ে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে একযোগে কাজ করি। আমরা ব্যর্থ হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে, জনগণের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে। আমরা ব্যর্থ হতে চাই না। সকল বাধা অপসারণ করে বিজয় অর্জন করতে চাই।
এত কম সময়ে বিএনপির প্রস্তাব অনুযায়ী কমিশন গঠন সম্ভব কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে সাত দিনেই সম্ভব, আর সদিচ্ছা না থাকলে সাত বছরেও সম্ভব নয়।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগের উচিত ছিল আলোচনার দ্বার খুলে দেয়া। কিন্তু দুঃখজনক তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। এর মানে হচ্ছে সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না। আমরা আশা করব এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু সমাধান বেরিয়ে আসবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ