Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এনআইডি-পেশা পরিবর্তন করে এনামুলের ২২ বছর আত্মগোপন

প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০২২, ১২:০৩ এএম

কোটালীপাড়ায় বোমা পুতে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শেখ মো. এনামুল হককে উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব সদস্যরা। দীর্ঘ ২২ বছরে তিনি উত্তরা, মোহাম্মদপুর, বনশ্রী, গাজীপুরে নাম-পরিচয় ও পেশা পরিবর্তন করে আত্মগোপনে ছিলেন। পরিবর্তন করেছিলেন ন্যাশনাল আইডি কার্ডও। ব্যবসায়িক সূত্রে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হুজির আমির মুফতি আব্দুল হান্নানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল এনামুল হকের। তার মালিকানাধীন ‘সোনার বাংলা ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ’ কারখানায় মুফতি হান্নান গোপন বৈঠক ও কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থলে বোমা বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করে। গতকাল রোববার কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, জঙ্গি হামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি পরিচালনা করছিল র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পলাতক আসামিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গোয়েন্দা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত শুক্রবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর একটি দল উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জঙ্গি শেখ মো. এনামুল হক ওরফে শেখ মো. এনামুল করিম (৫৩) গ্রেপ্তার করে। ২০০০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কোটালীপাড়ার জনসভার অদূরে জঙ্গি শেখ মো. এনামুল করিমসহ অন্যান্য জঙ্গি সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখার ঘটনায় কোটালীপাড়া থানায় হত্যাচেষ্টা, হত্যার ষড়যন্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৩টি মামলা হয়।
তদন্ত শেষে মামলায় বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ গ্রেপ্তার শেখ মো. এনামুল হকসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
তিনি আরো বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের কারখানায় সাবান তৈরির কেমিক্যাল সংগ্রহের আড়ালে বিভিন্ন প্রকার বিস্ফোরকদ্রব্য, বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি আনে ও লোহার ড্রামের ভেতর ৭৬ কেজি ও ৪০ কেজি দুটি শক্তিশালী বোমা তৈরি করে। প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে কোটালীপাড়ার জনসভার অদূরে বোমা পুতে রাখে। তবে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ফাঁস হবার পর সেনাবাহিনী বোমা দুটো নিস্ক্রিয় করে। প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার বিষয় প্রকাশ্যে আসার পর এনামুল রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আত্মগোপনে চলে যান। পরবর্তী সময়ে সে নিজের পরিচয় গোপন করে ক্বারী না হওয়া সত্ত্বেও ক্বারী পরিচয় দিয়ে গাজীপুরের একটি মসজিদে ৮ বছরের বেশি সময় ইমামতি করেন। গাজীপুরে থাকতেই তিনি ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন।
গাজীপুরে একটি হোমিওপ্যাথি কলেজে দুই বছর প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একইভাবে তিনি নিজেকে গাজীপুর হোমিও কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ হিসেবে দাবি করতেন। পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে তিনি ঢাকার উত্তরা ও বনশ্রীতে বাসা ভাড়া করে আত্মগোপনে ছিলেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামি কীভাবে পেশা ও এনআইডি পরিবর্তন করে অনেকটা ২২ বছর আত্মগোপনে থাকলো জানতে চাইলে তিনি জানান, বিভিন্ন সময় তিনি বিভিন্ন স্থানে থেকেছেন। গাজীপুরে থাকতেই ২০১০ সালে তিনি নামের কিছু অংশ পরিবর্তন করে শেখ মো. এনামুল হক থেকে শেখ মো. এনামুল করিম নামে স্থায়ী ঠিকানা গোপনগঞ্জের স্থানে গাজীপুরের ঠিকানায় এনআইডি করেন। সর্বশেষ তিনি উত্তরা দিয়াবাড়ীতে বাসা ভাড়া নিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন। তার গতিবিধি ও কার্যক্রম সংক্রান্ত সন্দেহের অবকাশ ছিল। সে ধরনের গোয়েন্দা তথ্য পেয়েই তাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তাকে গ্রেপ্তারে দেরির কারণ পেশা স্থান ও নাম পরিবর্তন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ