Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

উন্নয়ন ফি কমানোর দাবি করায় ঢাবিতে পরীক্ষা স্থগিত, বহিষ্কারের হুমকি

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আরবি বিভাগের উন্নয়ন ফি কমানোর দাবি করায় মাস্টার্সের প্রথম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দু'দফা স্থগিত করেছে বিভাগটির একাডেমিক কমিটি। ফি কমানোর দাবি করায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকিও দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আবদুল কাদিরের বিরুদ্ধে। তবে বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি চেয়ারম্যান।

বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আরবি বিভাগের ১১তম ব্যাচের মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা গত ১৭ এপ্রিল শুরু হওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষা শুরুর আগে শিক্ষার্থীদের বিভাগ উন্নয়নের জন্য ৫ হাজার টাকা ফি জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীরা উন্নয়ন ফি কমানোর দাবি করায় পরীক্ষা পিছিয়ে ৫ জুন নির্ধারণ করা হয়। ৫ জুনের আগেই উন্নয়ন ফি জমা দেওয়ার জন্য পুনরায় নির্দেশ দেন বিভাগের চেয়ারম্যান। এর প্রেক্ষিতে গত ১৭ মে বিভাগটির মাস্টার্স শিক্ষার্থীরা উন্নয়ন ফি কমানোর দাবিতে একটি আবেদন জমা দিতে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কাছে যান।
অভিযোগ ওঠে, এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল কাদির। উন্নয়ন ফি জমা না দিলে পরীক্ষা হবে না বলে জানান তিনি। এ সময় তিনি কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন।
বিষয়টি নিয়ে ইনকিলাবের সাথে কথা হয় পরীক্ষা কমিটির একজন সভাপতির সাথে। তিনি জানান, বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরা ৫ জুনের আগে একাডেমিক কমিটির মিটিং করেছি। সেখানে দু'টো বিষয়ে পরামর্শ গৃহীত হয়েছে। একটি হলো- শিক্ষার্থীরা চেয়ারম্যানের নিকট যে আবেদন দাখিল করেছে সেটা যথাযথ পন্থায় হয়নি। তারা শুধু মাস্টার্স শিক্ষার্থীরা লিখে আবেদন জমা দিয়েছে; কারো নাম সেখানে লিখেনি। তাই আমরা পরামর্শ দিয়েছি যেন যথাযথ পন্থায় আবেদন করা হয়। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে বিভাগের চেয়ারম্যানের নিকট তারা যখন আবেদন নিয়ে গিয়েছে তখন ওখানে অনেক সিনিয়র শিক্ষকরাও ছিলেন। শিক্ষার্থী-শিক্ষক যে সম্পর্ক সেখানে সেই সম্পর্কের অবনতি হয়েছে কিছু শিক্ষার্থীর আচরণের কারণে। তাই আমরা তাদের পরামর্শ দিয়েছি যাতে তারা শিক্ষকদের সাথে দেখা করে বিষয়টিতে ক্ষমা চায়।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে ওই ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, স্যারদের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা অফিসে যাই এবং ক্ষমা চেয়ে পুনরায় ৮০ জন শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর সম্বলিত আবেদন জমা দিয়ে ফি কমানোর দাবি করি। কিন্তু চেয়ারম্যান স্যার মাত্র ১ হাজার কমিয়ে ৪ হাজার করে বলেন, এই পরিমাণ টাকা দিয়েই পরীক্ষা দিতে হবে না হলে পরীক্ষা নেয়া হবে না। তোমরা যদি টাকা না দিতে পারো তাহলে অন্য কোথা গিয়ে পড়াশোনা করো।
তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করায় আমাদের কয়েকজন বন্ধুকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করার হুমকি দিয়েছে।
এই শিক্ষার্থী আরো জানায়, গতবছর মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন ফি নেয়া হয়েছিল ২ হাজার টাকা। এর আগের বছর নেয়া হয় ৩ হাজার টাকা। তাহলে আমাদের সময় কেন এত টাকা হবে- প্রশ্ন করেন তিনি।
জানা যায়, কলা অনুষদের ১৭ টি বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ উন্নয়ন ফি ধরা হয়েছে এই বিভাগে। অন্যান্য বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা উন্নয়ন ফি ধরা হয় কিছু বিভাগে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, একমাত্র আরবি বিভাগেই অতিমাত্রায় উন্নয়ন ফি নেওয়া হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে ইনকিলাবের সাথে কথা না বললেও একটি গণমাধ্যমকে প্রফেসর আব্দুল কাদির জানায়, উন্নয়ন ফি ছাড়া তো ডিপার্টমেন্ট তাদের গ্রহণ করবে না। এখন সব কিছুর ফি বেড়েছে আমরা বাড়ালে দোষ কোথায়!
তিনি বলেন, আমাদের তো কেউ টাকা দেয় না; সরকার টাকা দেয় না, বিশ্ববিদ্যালয় টাকা দেয় না তাহলে আমরা কীভাবে চলব? আমাদের বিভাগের উন্নয়ন করতে হয়, এসি চালাতে হয়।
কলা অনুষদের অন্য ডিপার্টমেন্ট উন্নয়ন ফি ২০০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ, তাহলে আপনারা কেন এত টাকা নিচ্ছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমি তো অন্য ডিপার্টমেন্ট দেখব না তো, ওটা দেখার রাইট নেই আমার। এটা আমার ডিপার্টমেন্টের বিষয়। তারা যদি উন্নয়ন ফি দেয় তবেই পরীক্ষা নেব না হলে নেব না।
কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর আব্দুল বাছির বলেন, আমার নিকট বিষয়টি নিয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি তবে আমি বিষয়টি সম্পর্কে শুনেছি। বিভাগের চেয়ারম্যানকে আমি ফোন দিয়েছি কিন্তু কথা হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ