Inqilab Logo

বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

২০ লাখ টাকা বিতরণে খরচ ১০ লাখ!

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

পাবনায় রুপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের গ্রীন সিটিতে একটি বালিশ ক্রয়ে খরচ দেখানো হয়েছিল ৬ হাজার টাকা। ফরিদপুরে হাসপাতালের একটি পর্দা ক্রয়ে খরচ দেখানো হয়েছে ৩৭ লাখ টাকা। দুটোই সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রকল্পের কাজ। কিন্তু এসব অনিয়মকেও হার মানিয়েছে বেসরকারি একটি সংগঠন। এবার ডিজিটাল যুগে ২০ লাখ টাকা বিতরণে ১০ লাখ টাকা খরচ করে অনিয়মের নতুন রেকর্ড করল ডিজিটাল ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাব।
সম্প্রতি ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশান অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাবের) বার্ষিক সাধারণ সভায় নিরীক্ষিত প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় সদস্যদের প্রশ্নের মুখে পড়েন বর্তমান কমিটির সদস্য আবদুল ওয়াহেদ তমাল ও আবদুল হক অনু। জানা গেছে, করোনাকালীন ই-ক্যাব মানবসেবা নামে একটি জনহিতকর উদ্যোগ গ্রহণ করে যেখানে দেশি প্রবাসীসহ বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অনুদান প্রদাণ করে। সাধারণ সভায় উপস্থাপিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই প্রকল্পে সংগ্রহ ছিল ৩০ লাখ ৬ হাজার ২৩১ টাকা। যার মধ্য প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ দেখানো হয়েছে ১০ লাখ ৬ হাজার ৩৭ টাকা। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে ‘পৌঁছেছে’ ২০ লাখ ১৯৪ টাকা।
ডিজিটাল যুগে ২০ লাখ টাকা বিতরণে ১০ লাখ টাকা ব্যায়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করল ই-ক্যাবের বর্তমান কমিটি। যার মূল কারিগর সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল এবং অর্থ সম্পাদক আবদুল হক অনু।
জানা গেছে, দেশের প্রযুক্তিখাতের বেসিসের আধিপত্য রোধে ২০১৫ সালে ই-ক্যাবের যাত্রা শুরু হয়। রাজীব আহমেদ নামে একজন উদ্যোক্তা ফেইসবুকে ই-কমার্স নিয়ে গ্রুপে ই-ক্যাবের ধারণা নিয়ে আসেন। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে রাজীব আহমেদকে রাখা হলেও মূল চাবিকাঠি থাকে কম্পিউটার জগৎ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য তমাল ও অনুর হাতে। সম্পর্কে চাচাতো দুই ভাই প্রতিষ্ঠার সাত বছর ধরে ই-ক্যাবকে একটি পারিবারিক সংগঠন হিসেবে পরিচালনা করে সুবিধা গ্রহণ করেছেন সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে।
দেশে ই-কমার্স ব্যবসায় প্রসারের সাথে সাথে বাড়তে থাকে সদস্য সংগ্রহ। দেশি-বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে সুবিদা আদায়ে সামনে আনা হয় অভিনেত্রী শমী কায়সারকে যিনি ধানসিঁড়ি নামে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার নির্বাহী প্রধান।
ই-ক্যাবের নেতৃত্ব পর্যায়ে আসেন বিজ্ঞাপন নির্মাতা শমী কায়সার, ইভেন্ট ব্যবসায় থাকা ব্রেকবাইটের আসিফ আহনাফকেও নিয়ে আসা হয় এখানে। বেশ কিছু বছর ধরেই আলোচনায় আছেন শমী কায়সার। জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মোবাইল চুরির অভিযোগ তুলে হৈচৈ ফেলে দেন। পরে তদন্ত প্রকাশের পর সাংবাদিকদের কাছে শমি কায়সার ক্ষমা চান। পরবর্তীতে কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের শত শত কোটি টাকা জালিয়াতি করে নেয়ার খবর প্রকাশ হলে তাদের গ্রেফতার করা হয়। সে ঘণ্টা নিয়েও শমী কায়সার সংবাদ সম্মেলন করে অভিযুক্তদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিতর্কিত হন। ই-কমার্স ব্যবসায় না থাকলেও ই-ক্যাবের নেতৃত্বে থেকে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের প্রবেশাধিকার, সর্বোচ্চ বণিক সংগঠনÑএফবিসিসিআই’র পরিচালক পদ, ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশ-বিদেশ। পাশাপাশি, সাংবাদিক ও ইভেন্ট ফার্ম অর্পণ কমিউনিকেশনের মালিক আবদুল হক অনুও চাচতো ভাই তমালকে নিয়ে এগিয়ে নিয়েছেন নিজের ব্যবসা।
রাজীব আহমেদের সময়ে ই-ক্যাবের উদ্যোগে চালু হওয়া ই-পোস্ট নামে একটি সেবা চালু হয়, যা পরবর্তীদের নিজস্ব ব্যবসা হিসেবে দখলে নেন আবদুল ওয়াহেদ তমাল। দখলে নিয়েছেন ই-ক্যাবের আরেকটি উদ্যোগ ই-জিনিয়াস নামে একটি মোবাইল অ্যাপ।
এদিকে ই-কমার্স পলিসি কনফারেন্স নামে অনলাইন প্লাটফর্ম জুমে আয়োজিত আলোচনা সভার নামে সাড়ে ১৬ লাখ টাকা অনিয়মের তথ্য রয়েছে ইনকিলাবের হাতে। গত বছরের ১১ এপ্রিল ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাব আয়োজন করে রুরাল টু গ্লোবাল ই-কমার্স পলিসি কনফারেন্স। পুরো আয়োজনই হয় অনলাইনে। কিন্তু ওই সভার আপ্যায়ন বিল দেয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
সংগঠনটির পুরোনো সদস্য বিজ ট্র্যাকার চেয়ারম্যান শরীফুল আলমের মতে, আপ্যায়ন বিলসহ সেখানে যে খরচ ধরা হয়েছে তা পুরোপুরিই বিস্ময়কর। একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সালেহ আহমেদ জানান, মাত্র তিন মাসের জন্য তার সংগঠন তৈরি করেছিল একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ। অস্তিত্ব হারানো সেই কার্যক্রমে ভিন্ন নাম দিয়ে দেখানো হয়েছে একই কাজের বিল। তবে যে কমিটির বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগ, তা আমলে নিতে রাজিই নন কমিটির বর্তমান সভাপতি শমী কায়সার। উল্টো ভবিষ্যতে সংগঠনে এর চেয়েও বড় অনিয়ম হতে পারে বলে ধারণা তার। উল্লেখ্য, ই-ক্যাবের বর্তমান সদস্য সংখ্যা প্রায় সতেরশ’।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ