পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের করা দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ সেতু করতে গিয়ে আমার ও আমার পরিবার এবং সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা চ্যালেঞ্জ করেছিলাম সেই অভিযোগ প্রমাণের। আমরা দুর্নীতি করতে আসিনি, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ২৫ জুন বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণ জনপদের মানুষ আর অবহেলিত থাকবে না।
গতকাল পল্লী জনপদ, রংপুর এবং বঙ্গবন্ধু দারিদ্র বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বাপার্ড), কোটালিপাড়া, গোপালগঞ্জের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে এ উপলক্ষে পল্লী জনপদ, রংপুর এবং বাপার্ড, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ প্রান্তে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণাঞ্চল বা পদ্মা পারের মানুষ বরাবরই অবহেলিত ছিলো। দারিদ্র্য আমাদের নিত্যসঙ্গী। আল্লাহর অশেষ রহমতে, সেই পরিস্থিতি আর থাকবে না। কারণ, আমরা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করেছি। যে দক্ষিণাঞ্চলের জনগণ সারাজীবন অবহেলিত ছিল, এখন আর অবহেলিত থাকবে না। কারণ, একটা জায়গায় যদি যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয় তাহলে সেখানকার অর্থনৈতিক অবস্থা এমনিতেই উন্নত হয়। এটাই হলো বাস্তবতা।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু জাতীয় অর্থনীতি জোরদারে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের জনগনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে অবদান রাখবে। তিনি আরো বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের জনগণকে উন্নত জীবন উপহার দিতে আমরা চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষে কাজ করছি। আমরা উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি লাভ করেছি এবং আমাদেরকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। দেশের একজন লোকও গৃহহীন ও ক্ষুধার্ত থাকবেনা।
আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রসঙ্গে তিনি সকলকে ধৈর্য ধারণের আহবান জানিয়ে বলেন, সেতু উদ্বোধনের পর সেখানে গাড়ি নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা কেউ যেন না করেন, যাতে কোন ধরণের দুর্ঘটনা না ঘটতে পারে।
পদ্মা সেতুর স্থপতি শেখ হাসিনা বলেন, এই উৎসব কেবল পদ্মা পারেই হবে না, সারা দেশের প্রত্যেক জেলায় এই সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মহোৎসব হবে। কারণ, এটা ছিল আমাদের জন্য একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে খরস্রোতা নদীগুলোর অন্যতম এই পদ্মায় বাংলাদেশ যে সেতু নির্মাণ করতে পারে সেটা অনেকেরই ধারণায় ছিল না। তারপর আবার সেতুটি একটি দ্বিতল সেতু, নীচ দিয়ে ট্রেন এবং ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে। যেটা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ এবং পৃথিবীতে এ ধরনের কাজ বোধ হয় এটাই প্রথম। এখানে যে ধরণের মেশিনারিজ ব্যবহৃত হয়েছে, সেটাও বোধ হয় আর কোথাও হয়নি। আর এই সেতু নির্মাণে যে বাধা-বিপত্তি ছিল সেটাও আপনারা জানেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এই সেতু করতে গিয়ে আমার ও আমার পরিবার এবং সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। তখন চ্যালেঞ্জ করেছিলাম অভিযোগ প্রমাণ করতে। কারণ, আমরা এখানে (রাষ্ট্র পরিচালনায়) দুর্নীতি করতে আসিনি, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন এবং মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সমবায় বিভাগের সচিব মো. মশিউর রহমান স্বাগত বক্তৃতা করেন।
পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ এবং বিশ^ ব্য্যাংকের ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগের পেছনে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসের যোগসাজসের অভিযোগ পুনরায় উত্থাপন করে তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, সবচেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা আমিই তাকে দিয়েছি। যেমন গ্রামীণ ফোন, এই ব্যবসাটা আমার আমলে আমি তাকে দিয়েছিলাম এবং তাকে অনেক সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছিল। তারই বেঈমানির কারণে এই পদ্মা সেতুর টাকা বিশ্ব ব্যাংক বন্ধ করে দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক যখন একেবারে দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছিল তখন সেই গ্রামীণ ব্যাংক চালু রাখার জন্য ’৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ৩ ধাপে ৪শ’ কোটি টাকা দিয়ে ব্যাংকটা চালু রাখার সুযোগ করে দেয়। অথচ, সে সময় দেশে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল এবং রিজার্ভের অবস্থাও ভাল ছিল না। সরকার প্রধান বলেন, গ্রামীণ ফোনের ব্যবসা দেই এ কারণে যে, ফোনের লভ্যাংশ গ্রামীণ ব্যাংকে যাবে। যা কখনো হয়নি।
তিনি বলেন, ড. ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংকের ওই এমডির পদটা ছাড়বেন না। যদিও আইনে আছে ৬০ বছর। তার তখন ৭০ বছর পার হয়ে যায়। ১০ বছর তিনি বে-আইনীভাবে এমডি থেকেছেন এবং এরপর ও তিনি এ পদে আরো থাকতে চেয়েছেন। তাকে আমাদের তরফ থেকে বলা হয়েছিল যে আপনি উপদেষ্টা থাকেন আপনাকে সেই সম্মান দিয়ে রাখা হবে। সেটাও তিনি মানেন নাই। সরকারের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন। আর মামলায় যথাযথভাবে হেরেও গিয়েছিলেন।
তিনিই তদবির করে হিলারি ক্লিনটন (তখনকার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী) তার বন্ধু ছিল বলে তাকে দিয়ে আমেরিকান সরকারকে ধরে ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে দিয়ে এই পদ্মার সেতুর টাকা বন্ধ করে দেয় এবং আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয় কানাডা কোর্টে। ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে লাখ লাখ ডলার ডোনেশন প্রদান করে তাদের তুষ্ট করার প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান বলেন, দেশে ৫২-৫৩টি ব্যাংক এবং সবগুলো ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রয়েছেন। ক’জন এমডি লাখ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছেন এবং ইউনূসের মতো ঘন ঘন বিদেশ সফর করেছেন।
সেই সময় ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে দুর্নীতির প্রমাণ দিতে হবে বলে চ্যালেঞ্জ দেয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এমনিতে মেনে নেব না। প্রমাণ দিতে হবে। প্রমাণ দিতে পারে নাই। তখন আমি বলেছিলাম টাকা লাগবে না। আমরা নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করবো ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যখন পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করার ঘোষনা দেয় তখন দেশবাসী সে সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে এগিয়ে এসেছিল। তিনি অনুষ্ঠানে দেশবাসীর প্রতি ও কৃতজ্ঞতা জানান এবং বলেন, সেই সময় দেশবাসীর থেকে অভূতপূর্ব সাড়া যদি আমি না পেতাম তাহলে এটা আমি করতে পারতাম না। এটাই আমাকে সাহস জুগিয়েছিল, শক্তি জুগিয়েছিল। কারণ মানুষের শক্তিতেই আমি বিশ্বাস করি।
পল্লী জনপদ রংপুর প্রসঙ্গে প্রধানমমন্ত্রী বলেন, রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগে ২৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি পল্লী জনপদ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে পল্লী জনপদ রংপুর প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।