পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
একটানা ১৯ বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশনের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ আমিনুর রহমান চৌধুরীকে অন্য বিভাগে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। বুধবার (১৫ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক গোলাম মহিউদ্দীন সাক্ষরিত এক চিঠিতে আমিনুর রহমানকে ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন থেকে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগে বদলী করা হয়েছে। সূত্র মতে, আমিনুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশনে ছিলেন। যিনি ওই বিভাগে থেকে সবসময় পুঁজিবাজার বিরোধী কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে আমিনুর রহমানকে ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশনের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা খুশি।
জানা গেছে, গভর্নরের সঙ্গে আমিনুর রহমানের সুসম্পর্ক ছিল। সেই সুবাদে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ইচ্ছেমতোই ছড়ি ঘুড়িয়েছেন তিনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নতুন নিয়মনীতি যেন তিনি একাই প্রণয়ন করে থাকেন। গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক ও জিএম’র পরিবর্তন হলেও তার চেয়ার নড়ে না। চাকরির প্রায় দুই যুগ পার করেছেন একই বিভাগে কর্মরত অবস্থায়। দেশের বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দিয়ে সুবিধাদি দেয়াসহ বাংলাদেশ ব্যাংকে নিজের কর্তৃত্ব জাহির করেছেন। এমনকি অফিসে কর্মরত ঊর্ধ্বতন কাউকেই তোয়াক্কা করতেন না।
এদিকে, বর্তমান গভর্নর ফজলে কবিরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩ জুলাই। পরদিন দায়িত্ব নেবেন নতুন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, যিনি বর্তমান অর্থ সচিব। নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেয়ার আগে আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে, যার মধ্যে পুঁজিবাজারে ছড়ি ঘোড়ানো আমিনুরের নামও রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্রমে ডিজিএম পদটি তৃতীয় সারিতে থাকলেও আমিনুর তুমুল আলোচিত ছিলেন এ কারণে যে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সব বিষয় দেখভাল করতেন, যা পুঁজিবাজারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব ছিল। কয়েক বছর ধরেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আলোচনা ছিল যে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার নিয়ে রক্ষণশীল। প্রায়ই এমন সিদ্ধান্ত এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে, যা বাজারের জন্য নেতিবাচক বার্তা দিয়েছে।
অভিযোগ আছে, দীর্ঘদিন একই দফতরে থেকে গভর্নরের মাধ্যমে দেশের শেয়ারবাজারকে অস্থিতিশীল করছেন তিনি। শেয়ারবাজারের অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলেই নতুন কোনো নিয়মনীতি প্রবর্তন করে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নানামুখী উদ্যোগে বাজারের প্রতি মানুষের কিছুটা আস্থা ফিরলেও তা আবার চিড় ধরিয়েছেন। অথচ বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে যখন ভাটার টান এবং অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় আর্থিক খাতের যখন নাজুক অবস্থা; তখন বিনিয়োগকারীদের আশার আলো দেখিয়েছে একমাত্র শেয়ারবাজার। বিএসইসি, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটিসহ (বিডা) সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিনিয়োগ আকর্ষণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড ও আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সম্ভাবনা তুলে ধরছে। এ সব কার্যক্রমের ফলে করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও দেশের শেয়ারবাজারে মানুষের আস্থা ফিরেছে। বিনিয়োগ বাড়ছে। এছাড়া বিএসইসি আইনের শাসন এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করায় শেয়ারাবাজারের প্রতি ক্রমান্বয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। যা করোনার অভিঘাত কাটিয়ে অর্থনীতিকে চাঙা করতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি স্বার্থান্বেষী গ্রুপের অপতৎপরতায় শেয়ারবাজারে বিএসইসি’র নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ বারবার ভেস্তে যাচ্ছে।
গত সেপ্টেম্বর থেকে পুঁজিবাজারে ধীরগতির পেছনে যেসব কারণ উঠে এসেছিল তার মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মধ্যে মতবিরোধের বিষয়টি সামনে এসেছে। পুঁজিবাজারে প্রভাব ফেলে, এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে দুই সংস্থা সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেবে- ২০১৪ সালে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি জানানো হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায়ই নানা সময় একক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা নিয়ে বিএসইসি একাধিকবার প্রকাশ্যেই তাদের অসন্তোষ জানিয়েছে।
আমিনুরের দফতর বদলের বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে অবশ্য এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি। নানা সময় আমিনুরের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর তার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসতে জোর দাবি জানিয়েছিল বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনোয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। আমিনুরের দফতর বদলের পরদিনই পুঁজিবাজারে দেখা গেছে চাঙাভাব। এদিন ৫১ পয়েন্ট সূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেন ছাড়িয়েছে হাজার কোটির ঘর। গত ১১ মে’র পর সর্বোচ্চ লেনদেন দেখেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। গত বৃহস্পতিবার আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট পেশের পর থেকে পুঁজিবাজারে তিন দিনে ১১৮ পয়েন্ট দরপতন হয়েছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।