Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডাঙ্গায় বাঘ পানিতে কুমির অবস্থা রোহিঙ্গা মুসলমানদের

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার অফিস | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাফ নদীর এপার-ওপার কোনো পারই রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য যেন নিরাপদ নয়। ডাঙ্গায় বাঘ আর পানিতে কুমিরের মতো অবস্থানে এখন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানেরা। ‘মঘের মুল্লক’ খ্যাত মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই, বাঁচার কোনো উপায় নেই। সরকারি বাহিনী ও মগ দস্যুদের নির্বিচারে হত্যাকা- থেকে বাঁচতে নাফ নদীতে ঝাঁপ দিয়ে বাংলাদেশে আসতে চাইলেও সঙ্গত কারণে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষীরা তাদের গ্রহণ করতে পারছে না।
নোবেল বিজয়ী অংসান সুকির সরকারও সে দেশের রাখাইন ও মগ দস্যুরা আরাকানের রোহিঙ্গাদের ওপর ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বিশ্ব বিবেকের নিন্দা কুড়ালেও মানবতা যেন সেখানে বিলুপ্ত। এই বর্বরতম হত্যাকা- মিয়ানমার যে আসলে একটি মগের মুল্লুক সেই কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুদের ওপর সেনাবাহিনী, পুলিশ ও সীমান্তক্ষী দলের সদস্যরা যে বর্বরতা অব্যাহত রেখেছে তাতে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা টিকতে না পেরে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী শিশু-পুরুষ বাড়ি-ঘর ছাড়া হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর মতে আরাকান বা রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযানে এ পর্যন্ত ১২ শতাধিক বাড়ি-ঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে বলে বলা হলেও বাস্তবে এর সংখ্যা অনেক বেশি। অপরদিকে সেনা অভিযানে প্রাণহানির সংখ্যা ১৭১ বলা হলেও তার সংখ্যা সহ¯্রাধিক। সেনাবাহিনী ও মগ দস্যুরা জ্বালিয়ে দিয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। হত্যা, ধর্ষণ, জীবন্ত মানুষ  জ্বালিয়ে দেয়া ছাড়াও নির্যাতনের এমন কোনো পথ নেই যা রোহিঙ্গাদের উপর করা হচ্ছে না।
বসতবাড়ি হারা এসব রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য সীমান্তের ওপারে জড়ো হয়েছে বলে সেখানকার বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। হাজার হাজার নির্যাতিত আহত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে জোর করে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য ঠেলে দেয়া হচ্ছে বলে জানাগেছে। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে খবর পাওয়া গেছে, শত শত রোহিঙ্গা বিজিবির নজরদারি ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে।
আরাকানের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের কারণে জাতিসংঘের ইউএনএইচসিআরএ’র পক্ষ থেকে বাংলাদেশে সীমান্ত রোহিঙ্গাদের জন্য খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তাদের আশ্রয় দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু এ অবরোধের কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে বাংলাদেশ সরকার এতে সায় দিচ্ছে না। কেননা, ইতোপূর্বে যেসব রোহিঙ্গারা শরণার্থী হিসেবে এদেশে আসার পর এখনও যারা অবস্থান করছেন তাদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা দিয়েও মিয়ানমার সরকার তা রক্ষা করেনি। উল্টো রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বলে দাবি করে থাকে সে দেশের সরকার। এ কারণে গত ৭ দশক ধরে মিয়ানমারের ওপর নিপীড়ন নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ গত ৯ অক্টোবর সে দেশের একটি সীমান্ত চৌকিতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটের ঘটনার পর রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর নির্বিচার নির্যাতন ও গণহত্যা শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে বিজিবি ও রোহিঙ্গারা যাতে দলে দলে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে জন্য কঠোর ব্যবস্থা বলবৎ করেছে। কিন্তু তারপরও অনেকে সীমান্ত গলিয়ে চলে আসছে এবং এদেশে অবস্থানরত বাড়ি-ঘরে আশ্রয় নিয়েছে।
সূত্র জানায়, শনিবার মংডুর উত্তরে রাম্যাইয়াবিলের দেড় শতাধিক যুবক ও গৃহকর্তাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায় সেনাবাহিনী। এদের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদের (বিদ্রোহী) অভিযোগ আছে বলে জানায় সেনা সদস্যরা। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আটক লোকদের কোনো খোঁজ মিলেনি বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা। সোমবার সকালে লুদাইং এলাকার মোঃ ইউনুছ নামে এক যুবককে জবাই করে পার্শ্বস্থ পুরমা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। কেয়ারিপ্রাং এলাকার করিমুল্লাহর মেয়ে ওয়াজেদা বেগমকে ধর্ষণ করে হত্যা করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় সেনা সদস্যরা তার ওপর এ অত্যাচার চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও গত শনি থেকে সোমবার পর্যন্ত কেয়ারিপ্রাং-লুদাইং, নাপ্পুরা, ওয়াবেক, বুড়া সিকদার পাড়া ও হাতিপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে অন্তত ৩২ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে সেনাবাহিনী ও রাখাইন যুবকরা। এ পর্যন্ত মিয়ানমারে সহিংসতায় ১৭১ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
৩৪৫ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পুশব্যাক
টেকনাফ সীমান্তের নাফ নদী থেকে মিয়ানমার ৩৪৫ নাগরিককে স্বদেশে ফেরত দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। রবিবার ভোর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নাফনদী সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় এসব মিয়ানমার নাগরিককে বিজিবির টহলদল আটক করেছিল।
বিজিবির ২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল মোঃ আবু জার আল জাহিদ জানান, সোমবার ভোর রাত থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টেকনাফের হোয়াইক্যং ৮৭, উনচিপ্রাং ১১, জিম্মংখালী ২১৩, লেদা ৯ ও দমদমিয়া ২৫ জন সীমান্ত এলাকার নাফনদী দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বিজিবির টহলদল নাফ নদীতে প্রতিহত করে ৩৪৫ মিয়ানমার নাগরিককে ফেরত পাঠায়। নাফ নদীর সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নেয়া হয়েছে সতর্ক অবস্থান। অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিহত করতে বিজিবির নজরদারি বৃদ্ধিসহ সীমান্তের নাফ নদীতে মাছ ধরা ও চলাচলে সীমাবদ্ধতা বজায় রাখতে স্থানীয় ও জেলেদের সচেতন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, গত কয়েক দিনে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে প্রায় ৪ শতাধিক নাগরিককে নাফনদীতে প্রতিহত করে ফেরত পাঠায়।
জানা গেছে, মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো অধিকাংশ রোহিঙ্গা নাফ নদীতে ভাসমান অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। ওসময় নৌকা ডুবিতে অর্ধ শতাধিক নারী পুরুষ ও শিশু নিখোঁজ রয়েছে।



 

Show all comments
  • Jewel Mahamud ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:৪৩ এএম says : 1
    তাদের একটাই অপরাধ তারা মুসলিম
    Total Reply(0) Reply
  • Mamun Ebna Salam ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:৪৪ এএম says : 0
    Allah rescue them from Jalim Governments
    Total Reply(0) Reply
  • Mominur Rahman ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:৪৪ এএম says : 1
    so sad
    Total Reply(0) Reply
  • MD.MONIRUL ISLAM ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:৪৭ এএম says : 0
    AMRA KI ADAR JNNO KISU KORTA PARI NA / AMADAR DASAR MANOBOTA BADI RA KOTHI
    Total Reply(0) Reply
  • Kumkum ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:৫৩ পিএম says : 0
    রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে, তাদের মানবিক ও নাগরিক অধিকার নিয়ে জাতিসংঘে অধিকারের আওয়াজ তুলতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Kasem ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:৫৪ পিএম says : 0
    বাংলাদেশ মায়ানমারের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে মানবিক কারণেই মায়ানমারের মজলুম মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Tajil ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:৫৫ পিএম says : 0
    মজলুম রোহিঙ্গাদের বীভৎস চেহারাগুলো দেখে কার চোখ না অশ্রুসিক্ত হবে?
    Total Reply(0) Reply
  • Anwar ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ৪:৫৭ পিএম says : 0
    Ya Allah pls. save them from Jalim Governments. মায়ানমারের মজলুম মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য। তাদের জন্য জাতিসংঘে অধিকারের আওয়াজ তুলতে হবে। মজলুম রোহিঙ্গাদের বীভৎস চেহারাগুলো দেখে কার চোখ না অশ্রুসিক্ত হবে ?
    Total Reply(0) Reply
  • anam ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ৬:২৮ পিএম says : 0
    jara ai hotta joggo chalasse ora ki terrorist noy?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ