Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেড় বছরে ১৫ বাসে ডাকাতি-ধর্ষণ

আন্তঃজেলা ডাকাতচক্রের ১০জন গ্রেফতার অস্ত্রসহ চার ডাকাত গ্রেফতার করেছে ডিবি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০২২, ১২:০৩ এএম

দেড় বছরে যাত্রীবেশে মহাসড়কে ১৫টির বেশি ডাকাতির ঘটনায় আন্তঃজেলা ডাকাতচক্রের ১০জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতরা একাধিকবার কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আবারও ডাকাতির কাজে লিপ্ত হত। এছাড়া ঢাকা-দিনাজপুরগামী বাসে ডাকাতির সময় ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটায় তারা। গতকাল রোববার কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাব জানায়, শনিবার রাতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৮ এর একটি অভিযানিক দল তাদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতাররা হলেন-ওই ডাকাতচক্রের সর্দার হিরা শেখ ওরফে কালাম শেখ ওরফে সোলেমান শেখ (৪০), হাসান মোল্লা ওরফে ইশারত মোল্লা (৩৯), আরিফ প্রামাণিক ওরফে আরিফ হোসেন (৩৩), নুর ইসলাম (৫৩), রাজু শেখ ওরফে রাজ্জাক (৫৪), রেজাউল সরকার (৪৯), মো. রতন (৩৬), শরিফুল ইসলাম (৩৯), মো. হানিফ (৪২) ও নজরুল ইসলাম (৩৫)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি বিদেশি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি, আটটি দেশি অস্ত্র, শ্যামলী এনআর ট্রাভেলসের চারটি টিকিট ও তিনটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতাররা ঢাকা-রাজশাহীগামী একটি বাসে ডাকাতির পরিকল্পনা করছিলেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৯ মে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ঢাকা হতে গোপালগঞ্জগামী স্টারলাইন পরিবহনে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার গত ৮ জুন ডাকাত মহব্বত ওরফে রয়েলকে লুন্ঠিত মালামালসহ রাজশাহী থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। রয়েলকে জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব গোয়েন্দারা বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনা সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায়। র‌্যাব জানতে পারে ডাকাত হীরার নেতৃত্বে এই সংঘবদ্ধ ডাকাত দলটি গত এক মাসে ৩টি দূরপাল্লার বাসে ডাকাতি করে। এই ডাকাতচক্রটি গত ১১ মে চট্টগ্রাম থেকে যশোর- বেনাপোলগামী হানিফ পরিবহন, ২৫ মে ঢাকা-রাজশাহীগামী ন্যাশনাল ট্রাভেলস পরিবহন এবং ২৯ মে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ঢাকা থেকে কোটালীপাড়াগামী স্টারলাইন পরিবহনে ডাকাতি করে। এর ফলে র‌্যাব ডাকাত চক্রটিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি আরও বৃদ্ধি করে।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতচক্র। এই দলের সদস্য সংখ্যা ১০-১৫ জন। গ্রেফতার ডাকাত সর্দার হীরা ও তার অন্যতম সহযোগী হাসান মোল্লা বিভিন্ন ডাকাতির পরিকল্পনা করে থাকে। ডাকাত দলটি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলামুখী যাত্রীবাহী বাসে উঠে ডাকাতি করে আসছিল। গত দেড় বছরে তারা প্রায় ১০-১৫টি বাসে ডাকাতি করেছে। এর আগে চক্রটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে শ্যামলী পরিবহন ও মামুন ট্রাভেলস, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ন্যাশনাল ট্রাভেলস ও একতা ট্রাভেলসে ডাকাতি করে বলে জানায়। এছাড়া, চট্টগ্রাম-সিলেট মহাসড়কে সৌদিয়া বাসে ডাকাতির সময় তারা বাসচালকের হাতে ও হেলপারের পেটে ছুরিকাঘাত করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, তিনবছর আগে ঢাকা-দিনাজপুরগামী একটি বাসে ডাকাতির সময় ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটায়। সর্বশেষ তারা ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জগামী স্টারলাইন পরিবহনে ডাকাতি করে। ডাকাতির জন্য তারা ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন দূরপাল্লার আন্তঃজেলা বাসগুলোকে টার্গেট করে। এক্ষেত্রে চক্রটির কয়েকজন আগে থেকেই কাউন্টার থেকে টিকিট কেনার মাধ্যমে বাসে ওঠে। অন্য সদস্যরা পরবর্তী বিভিন্ন কাউন্টার থেকে টার্গেটকৃত বাসে ওঠে। এছাড়াও, যেসব দূরপাল্লার বাস কাউন্টার ব্যতীত যাত্রী ওঠায় তারা এসব বাসকে প্রাধান্য দিয়ে ডাকাতি করে। সাধারণত তারা মহাসড়কের নির্জন এলাকায় বাস ডাকাতির জন্য বেছে নিতো। ডাকাতি করার পর তারা পুনরায় আশুলিয়ায় ফিরে আসে। এছাড়াও, বিভিন্ন সময় তারা বাড়িঘরে ডাকাতি করতো। ইতোপূর্বে গ্রেফতারকৃত সবাই ডাকাতিসহ অন্যান্য মামলায় ২-৬ বছর মেয়াদে কারাভোগ করেছে।
দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি করে চক্রটি কী পরিমাণ সম্পদ গড়েছে জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি করলেও চক্রের সব সদস্যর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় হাজিরাসহ বিভিন্নভাবে টাকা খরচ হয়ে যেত। এ কারণে তারা সেভাবে সম্পদ গড়তে পারেনি।
অস্ত্রসহ চার ডাকাত গ্রেফতার করেছে ডিবি:
রাজধানীর শাহ আলী থানা এলাকা থেকে ‘ডাকাতের মাস্টার’ আসলামসহ আন্তঃজেলা ডাকাতদলের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। শনিবার দিবাগত রাতে বেড়িবাঁধ এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতির সময় তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি তেজগাঁও জোনাল টিম। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-ডাকাতের মাস্টার মো. আসলামুল হক ওরফে আসলাম, মকবুল হোসেন প্রকাশ ওরফে মঙ্গল হোসেন বাবু, মো. রফিকুল ইসলাম ও মো. হাসান হাওলাদার। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস, একটি বিদেশি পিস্তল, লোহার তৈরি একটি ছুরি, লোহার তৈরি দুটি চাকু, দুটি লাঠি, দুটি গামছা এবং ডাকাতি করা তিনটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ও ডিবি-উত্তর) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, তারা মূলত লেজার লাইট দিয়ে মালবাহী ট্রাকের সামনে সিগন্যাল দেয়। চালক পুলিশি সিগন্যাল ভেবে ট্রাক থামালে অস্ত্রের মুখে চালক ও হেলপারকে জিম্মি করে ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যায়। পথিমধ্যে কোনো এক নির্জন স্থানে তাদের ফেলে দিয়ে ট্রাকে থাকা ধান, চাল, গরু, মাছের খাবার ইত্যাদি ডাকাতি করে থাকে। এরপর ডাকাতি করা ওই ট্রাকটি নিয়ে আবার অন্য কোথাও ডাকাতি করে।

 



 

Show all comments
  • jack ali ১৩ জুন, ২০২২, ১২:০৯ পিএম says : 0
    বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গির গন্ধ শুকলে 18 কোটি মানুষের মধ্য থেকে সাথেসাথে অ্যারেস্ট করে আর আমাদের দেশে কত শত শত কোটি অন্যায় হচ্ছে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কিছুই করতে পারেনা শুধু পারে আমাদেরকে করতে ঠান্ডা মাথায় খুন করতে আর রিমান্ডে নিয়ে ঘুষ খেতে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ